সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৪ হাজার নমুন পরীক্ষা করে ৯ হাজার ৯৬৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে আরও ১৬৪ জনের প্রাণ গেছে এ ভাইরাসের কারণে। গতবছর মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর এক দিনে এরচেয়ে বেশি রোগী আর কখনও শনাক্ত হয়নি, এত মৃত্যুও আর কখনও দেখতে হয়নি বাংলাদেশের মানুষকে।
দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর উপরে থাকছিল প্রতিদিন। এর মধ্যে জুলাইয়ের প্রথম দিন ১৪৩ জনের রেকর্ড মৃত্যর খবর আসে। ৪ জুলাই তা ছাপিয়ে ১৫৩ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরদিনই দেশে ১৬৪ জনের রেকর্ড মৃত্যু হল। ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ জুন সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি হয়। তার আগের দিন ৩০ জুন রেকর্ড ৮৮২২ জন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল। সোমবার তা ছাড়িয়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছালো দশ হাজারের কাছাকাছি। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জনে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৫ হাজার ২২৯ জনের। গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪২৫০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় ৪২ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগেও হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর যে ১৬৪ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৫৫ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪০ জনের।
নতুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাড়ছিল। সোমবার তা ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের অগাস্টের পর সর্বোচ্চ। ওই সময় ৩ অগাস্ট শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। তার আগে গত বছরের ১২ জুলাই দৈনিক শনাক্তের হার পৌঁছেছিল ৩৩ দশমিক শতাংশে যা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৫ হাজার ১৮৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৮২ জন। গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ১৩ জনই ছিলেন ঢাকা জেলার। খুলনায় মারা যাওয়া ৫৫ জনের মধ্যে ১৬ জনই ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। এছাড়া চট্গ্রাম বিভাগে ১৮ জন,রাজশাহী বিভাগে ১৬ জন, বরিশাল বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এই ১৬৪ জনের মধ্যে ৮৩ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৭ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৪ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ১০৯ জন ছিলেন পুরুষ, ৫৫ জন ছিলেন নারী। ১২৩ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৫ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৫ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতালে মৃত নিয়ে আসা হয় ১ জনকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনাভাইরাসের সামাজিক বিস্তার ঘটায় কোভিড ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম পর্যায়ে; হাসপাতালে এখন যে রোগীরা আসছেন, তাদের ৫০ শতাংশই গ্রামের। বর্ষা মৌসুম চলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলেও মানুষ একে জ্বর, সর্দি-কাশি ভাবছে। সে কারণে হাসপাতালে ‘আসছে কম’; আর সময়মত চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বেশি হচ্ছে বলে মহাপরিচালকের ভাষ্য। “আমরা সবগুলো উপজেলায় কথা বলেছি। সবার পর্যবেক্ষণ একটাই, রোগীদের অনেকেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে ৪০-৫০ এ নেমে গেলে হাসপাতালে আসছেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে ব্রেইন ড্যামেজ আগেই হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের বাঁচানো খুব কঠিন হয়। গ্রামের রোগীরা অসতর্ক, গ্রামের বয়স্ক মানুষ হাসপাতালে আসেন অনেক পরে, এ কারণে মৃত্যুর হার বেশি হচ্ছে।”
ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৩১৯৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ বিভাগের টাঙ্গাইলে ২২৭ জন, ফরিদপুরে ১৭৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ১১২ জন এবং কিশোরগঞ্জে ১০৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৫৫৯ জন, কুমিল্লায় ১৭৪ জন, নোয়াখালীতে ১৫৮ জন এবং কক্সবাজারে ১৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে বগুড়ায় ৩১৪ জন, রাজশাহী জেলায় ২৮০ জন, নাটোরে ১৮৩, পাবনায় ১৩৯ জনও সিরাজগঞ্জে ১১৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়ায় ২৯২ জন, যশোরে ২৮৬ জন, খুলনায় ২৩৯ জন, চুয়াডাঙ্গায় ১৫২ জন, বাগেরহাটে ১২১ জন এবং সাতক্ষীরায় ১০২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। রংপুর বিভাগের দিনাজপুরে ২৬৭ জন ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এছাড়া অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ২১০ জন, বরিশাল জেলায় ১৫৭ জন এবং সিলেট জেলায় ১১৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬০৫টি ল্যাবে ৩৪ হাজার ২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬২টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা আগেরদিন ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ৯ লাখ পেরিয়ে যায় গত ২৯ জুন। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৪ জুলাই তা ১৫ হাজার ছাড়ায়। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ৩৮ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৩৯ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ