স্টাফ রিপোর্টার: করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে চলছে কঠোর লকডাউন। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর শহরে লকডাউন মানছে না সাধারণ মানুষ। অনেকটা ঢিলেঢালাভাবেই পার হয়েছে লকডাউনের পঞ্চম দিন। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় ২১টি মামলায় ২১ জনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপরদিকে মেহেরপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৯ জনের নিকট থেকে ১৮ হাজার ৪শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হলেও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলাচল করছে। সকাল থেকেই শহরের চলেছে ইজিবাইক, রিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন। দোকানপাটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষা করেই মানুষের উপচেপড়া ভিড় ছিলো। এমনকি বাজারে আসা অধিকাংশ মানুষের মুখে ছিলো না মাস্ক। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করেছে পুলিশ। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের সহযোগিতায় বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। অভিযান চালানো হয়েছে জেলার সবকয়টি প্রবেশ পথে। গতকাল মঙ্গলবারও জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে ৯টি পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য ও বিধিনিষেধ না মেনে বাইরে বের হওয়ায় জেলায় ২১টি মামলায় ২১ জনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ৪টি মামলায় ১২ জনকে ৩ হাজার ১শ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজে সহযোগিতা করেন পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ঈদ পরবর্তী কঠোর লকডাউনের ৫ দিনে গতকাল মঙ্গলবার জীবননগরে পৃথক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম রাসেল এবং সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে পৃথক এ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। মোবাইল কোর্টে দুজনকে দ-বিধির আওতায় ২ হাজার ৫শ’ টাকা ও একজনকে সড়ক পরিবহন আইনের দ-বিধিতে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে হরিহরনগরের পল্লি চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনকে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় জরিমানা গুণতে হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, লকডাউন প্রতিপালন বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গতকাল দুপুরে পুলিশের সহযোগিতায় জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম রাসেল এবং সহকারী কমিশনার ভূমি নির্বাহী ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। ইউএনও আরিফুল ইসলাম রাসেলের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট শহরের পশ্চিমবাজারের এক স্যানিটারি দোকান লকডাউন অমান্য করে খুলে রাখায় দ-বিধির মামলায় ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অপরদিকে, এসিল্যা- মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট সড়ক ও পরিবহন আইন অমান্য করায় এক মোটরসাইকেল আরোহীকে ১ হাজার টাকা ও হরিহরনগর বাজারে মাস্ক পরিধান না করে কার্যক্রম পরিচালনা করায় পল্লী চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনকে ৫শ’ টাকা জরিমানা করেন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মাস্ক না পরায় মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসায়ী, দোকান মালিকসহ পথচারীকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মেহেরপুর জেলা প্রশাসন, সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও পথচারীদের নিকট থেকে ১৮ হাজার ৪শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জানা গেছে, এদিন মেহেরপুর জেলার বিভিন্নস্থানে প্রশাসনের ৭টি টিম একযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় মাস্কবিহীন চলাচল করায় ২৯ জনের নিকট থেকে ১৮ হাজার ৪শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আদালত পরিচালনা করেন। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল আইন ২০১৮ (২৪) এর (২) ধারায় এসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়।