ভারত তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দিলে বিকল্প ভাবতে হবে
‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির সমাপনী দিনে তারেক রহমান
স্টাফ রিপোর্টার: ভারত যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা না দেয় তাহলে আমাদের বিকল্প ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি উত্তরবঙ্গের লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আর দেরি সহ্য করা হবে না। সরকার যদি জনগণের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করে, তাহলে আরও কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। মঙ্গলবার বিকেলে তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি আয়োজিত ৪৮ ঘণ্টার লাগার কর্মসূচির সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। তারেক রহমান বলেন, ‘ভারতের ৫৪টি নদী বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়, এটা কোনো করুণার বিষয় নয়। তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবা বাঁধ দিয়ে পানি আটকে দিয়েছে ভারত। তিস্তার ন্যায্য পানি আদায়ের জন্য আজকে আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। এ পানিবণ্টন নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ অপ্রতিবেশীমূলক আচরণ করছে। ৫০ বছর ধরে ফারাক্কার অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পায় নাই। এখন আবার এসেছে তিস্তার অভিশাপ।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের এমন আচরণের কারণে আজকে তিস্তা পাড়ের লাখ লাখ মানুষ বন্যায়-খরায় অসহায় জীবন-যাপন করছে। পানির অভাবে কোটি কোটি টাকার শস্যের ক্ষতি হচ্ছে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘৫ আগস্ট খুনি-স্বৈরাচার দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। এই স্বৈরাচার একদিন একটি কথা বলেছিল- ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে। তাই এই পার্শ্ববর্তী দেশ পলাতক স্বৈরাচারকে মনে রেখেছে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে মনে রাখেনি। ভারত শুধু পলাতক স্বৈরাচারকে জায়গা দিয়েছে আর কিছু দেয়নি। স্বৈরাচার ক্ষমতা দখলে রাখতে ভারতের সেবাদাসীতে পরিণত হয়েছিল।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারতকে এক তরফাভাবে ট্রানজিট দেওয়ার চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করা দরকার। বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে স্থায়ী শত্রু-মিত্র বলে কিছু নেই। সম্পর্ক হতে হবে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে। এর বাইরে কিছু নয়। এজন্যই বিএনপির স্স্নোগান, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ বিচলিত হয়ে পড়েন’ বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হবে।’ ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ শীর্ষক ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার কর্মসূচির শেষ দিনে তিস্তা পাড়ে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। তিস্তা নদীতে দাঁড়িয়ে তারা মানববন্ধনে অংশ নেন। বেএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এতে অংশ নেন। আন্দোলনকারীরা ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্স্নোগানে মুখরিত করে তোলেন পুরো এলাকা। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম বলেন, ‘তিস্তা নদীর যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকায় কৃষকরা পানির জন্য হাহাকার করছে, নদীভাঙনে হাজারো পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হোক।এটা এখন দল-মত নির্বিশেষে সবার প্রাণের চাওয়া হয়ে উঠেছে। শুষ্ক মরসুমে তিস্তায় পানি না থাকলেও বিএনপির এই লাগাতার ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচির ফলেই ভারত সরকার পানি দিতে বাধ্য হয়েছে। আগামীতে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা আদায় করা হবে।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে হাফিজ বলেন, ‘আমরা ম্যান ম্যান করা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নই, আর ভোট চোর সরকার তো স্বামীর বাড়ি গিয়েছেন। আগামীতে আপনাদের দোয়ায় বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসলে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।’ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের ফসল চাষের জন্য তিস্তায় পর্যাপ্ত পানি নেই। শুষ্ক মরসুমে নদীতে পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, আর বর্ষায় বন্যার কবলে পড়ে জমি, বাড়িঘর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কতবার যে বাড়ি ভেঙেছে তার হিসাব নেই। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে তিস্তা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার কর্মসূচির শেষ দিনে নদী পারের ১১ স্থানে মানুষের ঢল নামে। কর্মসূচিতে সাধারণ জনতা ‘জাগো বাহে বাঁচাও তিস্তা’ বলে সেøাগান দেন। দিনভর এসব পয়েন্টে কর্মসূচি চলাকালে জনতার উদ্দেশ্যে পস্ন্যাকার্ড প্রদর্শন, ঘুড়ি উড়ানো, ভাওয়াইয়া, পালা, জারি, শারি গান পরিবেশন ও নাটক মঞ্চায়ন হয়। এ ছাড়া তিস্তা পাড়ের মানুষদের অংশগ্রহণে হাডুডু, দাড়িয়াবান্ধাসহ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয় ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে মরা খালে পরিণত হওয়া তিস্তা অববাহিকার লাখ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা নিয়ে দুর্দশা চিত্র।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.