২০২০ সালের জুন থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজে ৬০ জন শিক্ষক-কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না। অন্যদিকে চলতি বছরের মে মাস থেকে কারিগরি বিভাগের ৮ জন বেতন পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।বেতনের দাবিতে শনিবার দুপুরে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ সময় শিক্ষকরা বিভিন্ন শ্রেণীতে তালা লাগিয়ে ক্লাস বর্জন করেন।
শিক্ষকরা জানান, কলেজটির অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ২০১৪ সালে হজ করতে যান। একই বছরের ৩০ অক্টোবর কলেজটির পরিচালনা কমিটির সভায় অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপাধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডলকে। অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা হয় ১৩টি অভিযোগ। এরপর বিভিন্ন দপ্তরের তদন্ত শেষে সবগুলোই মিথ্যা প্রমাণিত হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানকে দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। দায়িত্ব বুঝে না দেওয়ায় একই বছরের ২৩ অক্টোবর উপাধ্যক্ষ আবদুল মজিদ মণ্ডলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সন্তোষজনক নয় জানিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর একই বছরের ২৭ অক্টোবর উপাধ্যক্ষের স্বাক্ষরে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা তোলা যাবে না জানিয়ে দেয়।
২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল অবসরে গেলে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন অধ্যাপক শশাঙ্ক কুমার সানার কাছে। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি শশাঙ্ক কুমার সানার কাছ থেকে দায়িত্ব নেন তাজুল ইসলাম। এরপর একই বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন।
কয়েক জন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের কোনো দোকানদার আর বাকি দিচ্ছে না। মাসের পর মাস বাকি নিয়ে দোকানের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। পরিবার ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে তারা খুবই কষ্টে আছেন। দ্রুত বেতন না পেলে শিক্ষাদান পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন বলে কলেজ শিক্ষকরা হুঁশিয়ারি দেন ।
এ বিষয়ে কলেজটির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আশরাফ উদ্দিন বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন এখনো ছাড় হয়নি। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের একটি নির্দেশনা আছে। কলেজের আর্থিক লেনদেনের দুটি অংশ থাকে; একটি সরকারি অংশ ও অন্যটি বেসরকারি অংশ। বেসরকারি অংশের লেনদেন তার স্বাক্ষরে হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি অংশের বেতন তার স্বাক্ষরে হচ্ছে না। এ বিষয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ ড. মাহাবুবুর রহমান বলেন, বেতনের বিষয়ে হাইকোর্টে কোনো মামলা চলমান নেই। আদালতের আদেশ মোতাবেক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অসংখ্য পত্রাদেশের মাধ্যমে কলেজের পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে তার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে বেতন উত্তোলনের আদেশ থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। কলেজটির সভাপতি ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন বলেন, তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচীর খবর পেয়ে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শিক্ষকরা নিয়মিত পাঠদান করাবেন বলে তাকে জানিয়েছেন। বেতন-ভাতা উত্তোলন নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান আছে বলে জানান তিনি।
পূর্ববর্তী পোস্ট
দামুড়হুদার বাঘাডাঙ্গা ফুটবল টুর্ণামেন্টে দুর্গাপুরকে পরাজিত করে সেমিতে কাঞ্চনতলা একাদশ
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ