বিভিন্ন স্থানে ২৭ ক্রেতা-বিক্রেতাকে প্রায় ৮৪ হাজার টাকা জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা ও জীবননগরে নির্দেশনা অমান্য : তালাবদ্ধ দোকানের ভেতরে কেনাবেচা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা ও জীবননগরে বিভিন্ন দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতাকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া বিনাকারণে ঘোরাঘুরি করায় বেশকয়েকজন মোটরসাইকেল আরোহীকেও জরিমানা করা হয়। মার্কেট-শপিংমল বন্ধের নির্দেশনা না মেনে দোকান খুলে কেনাবেচার দায়ে ২৭ জন ক্রেতা-বিক্রেতাকে ৮৩ হাজার ৯শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গার সমবায় নিউমার্কেটে অভিযান চালিয়ে ২৪ জন ক্রেতা-বিক্রেতাকে ৭৫ হাজার ৯শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া লকডাউন নির্দেশনা না মেনে বিনাকারণে বাইরে ঘোরাঘুরি করায় আলমডাঙ্গায় ৯ জন মোটরসাইকেল আরোহীকে ২ হাজার ৬শ’ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

চুয়াডাঙ্গায় নির্দেশনা অমান্য করে মার্কেট খোলা রেখে পণ্য কেনাবেচার অপরাধে ২৪ জন ক্রেতা-বিক্রেতাকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার দুপুরে শহরের নিউ মার্কেটে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে ২৪ জন ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৭৫ হাজার ৯শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানায়, গত ১৫ মে থেকে করোনার সংক্রমণ রোধে জেলার সকল মার্কেট-শপিংমল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এ নির্দেশনা অমান্য করে শহরের নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ভোর থেকে গোপনে ব্যবসায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে সোমবার সকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। অভিযানে মার্কেটের দোকানগুলো বাইরে থেকে তালাবদ্ধ রেখে ভেতরে পণ্য কেনাবেচার প্রমাণ মেলে। এমন অভিযোগে ২৪জন ক্রেতা বিক্রেতাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে তাদেরকে ৭৫ হাজার ৯শ’ টাকা অর্থদ- করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস, হাবিবুর রহমান ও ফিরোজ হোসেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, জরিমানার অর্থ আদায় করা সকলে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ঈদ বাজার কেনাবেচায় অংশ নিয়েছিলো। এদের মধ্যে মার্কেটের নিউ ফাল্গুনি বস্ত্রালয়ের মালিক আশরাফুল হক ফিরোজকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে তাদেরকে পণ্য কেনাবেচা না করার জন্য অঙ্গীকার করানো হয়।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আলমডাঙ্গায় চলছে লকডাউন। আর এই লকডাউনে আলমডাঙ্গা গার্মেন্টসপট্টি, কাপড়পট্টি, চশমাপট্টি ও হাইরোডের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খেলছে চোর পুলিশ খেলা। গতকাল সোমবার সরকারি আদেশ অমান্য করে দোকান খুলে বেচাকেনা ও বিনাকারণে বাইরে থাকায় ১১ জনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন আলী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবীর সেনাবাহিনীর টিম ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে গার্মেন্টস ও কাপড় পট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারী নিয়ে প্রত্যেকে তার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ গেলেই তারা হারিয়ে যাচ্ছে। আর যারা থাকছে তারা বলছে আমরা এমনিতেই বসে আছি। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ চলে আসার সাথে সাথে আগের মতোই তারা উপস্থিত। ক্রেতা এলেই এদিক ওদিক তাকিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকিয়ে নিচ্ছেন দোকানমালিক। বেলা ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন আলী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবীর সেনাবাহিনীর টিম ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় শহরের জেএস টাওয়ারে সরকারি আদেশ অমান্য দোকান খোলার অপরাধে জহুরুলকে ৩ হাজার ও লিটন আলীকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবীর। অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. লিটন আলী আল তায়েবা মোড়ে অভিযান চালিয়ে বিনা কারণে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে ঘোরাফেরার অপরাধে লাল্টুকে ৩শ’ টাকা, শিহাবকে ৩শ’ টাকা, সুজনকে ৩শ’ টাকা, সাইফুলকে ১শ’ টাকা, আরেফিনকে ৩শ’ টাকা, তরিকুল ইসলামকে ৩শ’ টাকা, সোহেলকে ২শ’ টাকা, ফিরোজকে ৫শ’ টাকা ও মন্টুকে ৩শ’ টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ শহরের মাছ বাজার, কাঁচা বাজার, তহবাজার, কাপড়পট্টি, গার্মেন্টস পট্টিতে অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীরের নির্দেশে সারাদিন টহল অব্যাহত রাখেন।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, লকডাউনের মধ্যে সরকারি আইন অমান্য করে গার্মেন্টস খুলে কাপড় বিক্রি করার অপরাধে জীবননগরের এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জরিমানা গুনেছেন। গতকাল সোমবার শহরের উপজেলা সড়কের ভাই ভাই ক্লথ অ্যান্ড গার্মেন্টস মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় তিনি জরিমানা দিয়ে নিজেকে দন্ডের হাত থেকে রেহাই করেন। সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় দফায় চলমান লকডাউন উপেক্ষা করে জীবননগর শহরের উপজেলা সড়কের ভাই ভাই ক্লথ অ্যান্ড গার্মেন্টস খুলে তিনি কাপড়-চোপড় বিক্রি করছিলেন। তার গার্মেন্টসে ছিলো না সামাজিক দূরত্বের কোনো নিয়ম কানুন। ফলে নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। এ অবস্থার খবর পায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি ভাই ভাই ক্লথ অ্যান্ড গার্মেন্টসে অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পান। এসময় তিনি সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে গার্মেন্টস মালিককে এক হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে কারাদন্ডাদেশের আদেশ দেন। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী তাৎক্ষণিকভাবে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করে নিজেকে দন্ড মুক্ত করেন বলে জানা গেছে।

দামুড়হুদা ব্যুরো জানিয়েছে, দামুড়হুদায় সরকারি আদেশ অমান্য করে দোকান খুলে কেনাবেচার অপরাধে দামুড়হুদা বাজারের ৫ ব্যবসায়ীকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ওষুধ, কাঁচামাল এবং মুদিদোকান ব্যতীত অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ রাখতে সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়। সম্প্রতি দামুড়হুদায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের হার বেড়ে যাওয়ায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার সকালে পুলিশ প্রশাসনকে সাথে নিয়ে দামুড়হুদা বাজারে অভিযান চালিয়ে সরকারি আদেশ অমান্য করায় ওই ৫ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১৮৬০ এর ২৬৯ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাড়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন জানান, করোনা সংক্রমন রোধকল্পে সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে নজর রাখা হচ্ছে। তিনি সকলকে বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এলাকায় যেভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে তাতে আরও কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন। করোনা মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে থাকবে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More