বিকেলে মেয়ের বিয়ে : সকালে প্রতিবেশীর হাতে খুন হলেন বাবা
জীবননগরের গঙ্গদাসপুরে মাকে মারধরের প্রতিবাদ : মানসিক প্রতিবন্ধীর আচমকা কোদালের কোপ
জীবননগর ব্যুরো: খাদিজা খাতুনের বিয়ের জন্য বরপক্ষ দেখতে আসার কথা গতকাল বৃহস্পতিবার। পছন্দ হলে আজই বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য সকাল থেকেই কৃষক বাবলু রহমানের বাড়িতে ছিল আনন্দমুখর পরিবেশ। এরই মধ্যে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এক প্রতিবেশীর হামলায় খুন হলেন বাবলু রহমান। মুহূর্তে আনন্দ আয়োজনে পড়ে গেল কান্নার রোল। ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গঙ্গাদাসপুরে। পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের কোদালের আঘাতে খুন হয়েছেন কৃষক বাবলু রহমান (৪০)। তিনি গঙ্গাদাসপুর গ্রামের মাঠপাড়ার মৃত রমজান আলী বিশ্বাসের ছেলে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত প্রতিবেশী জমির উদ্দিনকে (৪৫) আটক করেছে পুলিশ। প্রতিবেশীরা জানান, জমির উদ্দিন একজন মানসিক প্রতিবন্ধী।
পুলিশ জানায়, বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত জমির উদ্দিন তার মা ফাতেমা খাতুনকে (৯০) মারধর করতো। প্রতিবারই প্রতিবেশী বাবলুর রহমান মারধরের প্রতিবাদ করে আসছিলো। এতে জমিরের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এলাকার ফজলুর চায়ের দোকানের আশেপাশে ওৎ পেয়ে থাকে জমির উদ্দিন। সকাল ১০টার দিকে বাবলু দোকানের সামনে পৌঁছুলে কোদাল দিয়ে মাথায় কোপ দিয়ে পালিয়ে যায় জমির। পরে স্থানীয়রা বাবলুকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রতিবেশী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাবলু রহমানের মেয়ে খাদিজা খাতুনের বিয়ের জন্য ছেলেপক্ষ দেখতে আসার কথা। পছন্দ হলে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। এজন্য বাবলু তার ভায়রাভাই একই গ্রামের মিন্টু মিয়াকে দাওয়াত দিতে সকালে বাড়ি থেকে বের হন। বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে যাওয়ার পর পেছন থেকে প্রতিবেশী জমির উদ্দিন তার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে বাবলুর মাথায় আঘাত করেন। এ সময় পরিবারের লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় বাবলুকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নেয়ার পথে তিনি মারা যান জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রাকবির হাসান বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই বাবলুর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের মাথায় ধারালো কোদালের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। জমির উদ্দিন (৪৫) একই গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে। পরিবারের দাবি জমির উদ্দিন মানসিক প্রতিবন্ধী। এ ঘটনায় সিনিয়র সার্কেল এএসপি মুন্না বিশ^াসসহ পুলিশের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
গঙ্গাদাসপুর গ্রামের বাসিন্দা মিথুন মাহমুদ জানান, জমির উদ্দিন সব সময় ঘরের ভেতর থাকে। সে বাইরে কম বের হয়। হলেও কারো সঙ্গে মেশে না, কথাও বলে না। যখনই বের হয় তার বাড়ির সামনে দিয়ে যেই যাক, তাকে মারার জন্য তেড়ে যায় সে। আজও একইভাবে বাবলু মিয়া তার বাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় সে তার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে জোরে তার মাথায় আঘাত করে। আর সেই আঘাতেই মৃত্যু হয় বাবলু মিয়ার।
আব্দুর রাজ্জাক নামের এক গ্রামবাসী জানান, ঘাতক জমির সবকিছুই স্বাভাবিকের মতো করলেও মাঝে-মধ্যে পাগলামি করে থাকে। গত কিছুদিন পূর্বে মেরে একজনের হাত ভেঙ্গে দেয় এবং কুপিয়ে একটি ছাগলের পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ ছাড়াও সে প্রতিদিনই গ্রামে অঘটন ঘটিয়ে থাকে। এরপর তার ও পরিবার তাকে চিকিৎসা কিংবা পাগলা গারদে না পাঠিয়ে অবাধে গ্রামে ঘুরাঘুরি করার সুযোগ করে দেয়। এমন অবহেলার কারণে জমির হত্যার মতো এমন একটি ঘটনা ঘটিয়ে ফেললো।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বলেন, জমির উদ্দিন মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে বাবলু বাড়ি থেকে সাইকেলযোগে বের হওয়ার পরই কোদাল দিয়ে কোপ দেয় জমির। তিনি আরও বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে পাত্র পক্ষ বাবলুর মেয়েকে দেখতে এসে বিয়ে সম্পন্ন করার কথা ছিলো। সকাল থেকেই বাবলু মেয়ের বিয়ের জন্য দাওয়াত ও কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলো। এমন দিনই বাবলুকে হারালো তার পরিবার।
সীমান্ত ইউপি চেয়ারম্যান ইসাবুল ইসলাম মিল্টন জানান, ঘাতক জমির একজন মানসিক প্রতিবন্দ্বী হিসেবে গ্রামে পরিচিত। সে গ্রামে উদভ্রান্তের মতো ঘুরাঘুরি করে বেড়াই এবং মাঝে-মধ্যেই অঘটনের জন্ম দেয়।
জীবননগর থানার ওসি মো. আবদুল খালেক বলেন, খুনের ঘটনায় আটক জমির উদ্দিনকে তার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা মানসিক প্রতিবন্ধী বলে দাবি করেছেন। অভিযুক্ত মানসিক রোগী কিনা চিকিৎসক বলবেন। আটকের পর জমির পুলিশকে জানিয়েছেন, তার মাকে প্রতিবেশী বাবলু দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। বারবার নিষেধ করার পরও তিনি শোনেননি। তাই তিনি বাধ্য হয়ে তাকে খুন করেছেন।