মেহেরপুর অফিস; স্কীম লিডার বাদশা মিয়া এক হাজার দু’শত টাকা নিয়ে আমাকে ২০ কেজি বিএডিসি’র প্রত্যয়িত ব্রি-২৮ জাতের ধান বীজ সরবরাহ করেন। যা দিয়ে আমি দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টাকা। কিন্তু ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমনে আমার জমির ধান পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। ছত্রাক নাশক, বালাই নাশক কোন কিছু দিয়েই রোগের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি। কথাগুলো বলছিলেন- মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের ধান চাষি হাতেম আলী।
পাঠক, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) প্রত্যায়িত ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করে মেহেরপুরের শত শত কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। তারা বলেছেন- মেহেরপুর জেলার মাঠ জুড়ে যেখানেই রয়েছে ব্রি-২৮ জাতের ধান ; সেখানেই ব্লাস্ট ভাইরাসের আক্রমন দেখা দিয়েছে। আবাদকৃত জমির মধ্যে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। অথচ ভাইরাস আক্রান্ত জমির পাশেই ভাল রয়েছে হাইব্রিড বা অন্য জাতের ধান। তবে মেহেরপুর কৃষি বিভাগ বলছে, ব্রি-২৮ এবং ব্রি-৮১ জাতের বোরো চাষে কৃষকদের নিরুসাহিত করা হলেও বিএডিসি’র পরামর্শে তাদের চুক্তিবদ্ধ চাষিরা ওই ধানের চাষ করেছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার রাজনগর গ্রামের প্রবেশ মুখেই রাস্তার বাম পাশে ধান ক্ষেতে বিএডিসি’র একটি সাইনবোর্ড দেয়া রয়েছে। বিএডিসি’র মেহেরপুর কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জানের রঘুনাথপুর ব্লকের মুচিখালী স্কীম এটি। ওই স্কীমে ব্রি-২৮ জাতের প্রত্যয়িত বীজ নিয়ে মোট ১২ একর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। দূর থেকে দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সোনালী রং ধারণ করে ধান পেকে উঠেছে। কাছে থেকে দেখা গেল প্রায় ৮০ ভাগ ধান ব্লাস্ট ভাইরাসের শিকার হয়েছে। ধানের শীষ পুরোটাই শুকিয়ে গেছে।
ওই ব্লকের চাষি হাতেম আলী এক গোছা আক্রান্ত ধানের শীষ ছিঁড়ে দেখান। প্রত্যেকটা শীষের গোঁড়া কালচে রং ধারণ করেছে। তিনি বলেন, বছর জুড়ে খাবারের চাহিদা মেটাতে এবারে দুই বিঘা জমি থেকে কমপক্ষে ৪০ মণ ধান পাবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু ৫ মণ ধানও ঘরে উঠবে না। তাই চিন্তার মধ্যে পড়েছেন তিনি। আর খরচ যা হয়েছে তাতো গেলই। তিনি আরও বলেন, মাঠ জুড়ে যেখানেই ব্রি-২৮ ধান রয়েছে সেখানেই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। এতে চাষিরা চরম হতাশার মধ্যে পড়েছে।
স্কীম লিডার বাদশা মিয়া জানান, তার স্কীমে ১২ একর ধান চাষ হয়েছে। তিনি নিজে চাষ করেছেন মাত্র দুই বিঘা জমি। বাকি ধান চাষ করেছেন অন্য চাষিরা। তিনি বলেন, যেসব চাষিরা একটু দেরিতে ধানের চারা রোপণ করেছেন তাদের জমিতে তেমন একটা ভাইরাস লাগেনি।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি, রাজনগর, উজলপুর, ঝাউবাড়িয়া, তেরঘরিয়া, শোলমারী, রুদ্রনগর, গাংনী উপজেলার ধানখোলা, খড়মপুর, মহিষাখোলা, পাকুড়িয়া, নিত্যানন্দপুর, চিৎলা মাঠ সহ আরও অনেক মাঠে এ ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিয়েছে বলে চাষি ও কৃষি বিভাগের কাছ থেকে জানা গেছে। সরজমিনে কয়েকটি ধান ক্ষেত ঘুরে তার প্রমাণ মিলেছে।
মেহেরপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগ বোরো ধান ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের।
কৃষকেরা বলছেন, প্রথম দিকে আবহাওয়া ভাল থাকায় এ দুই জাতের ধানের গাছ ভাল হয়েছিল। মাঠ জুড়ে ধান গাছের চেহারা দেখে চাষিরা ভাল ফলনের আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু গাছে যখন শীষে ভরে উঠেছে ঠিক তখনি বৈরি আবহাওয়ার কারণে ব্লাস্ট ভাইরাস আক্রমণ করে ধানের শীষের গোড়ায়। ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে ধানের শীষ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ধান চাষিরা। মাঠের অধিকাংশ চাষি জানিয়েছে তারা বিএডিসি’র ডিলারদের কাছ থেকে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতের ধানের বীজ কিনে চাষ করেছেন।
গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের রুহুল আমিন মেম্বর তিন বিঘা, আসাদুল ইসলাম দেড় বিঘা, জিব্রাইল ইসলাম এক বিঘা ও দবির উদ্দীন দেড় বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছিলেন। তারা জানান- তাদের সবার ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ধানখোলা বয়রাগাড়ি, নলগাড়ি ও কিনিখালি মাঠ, শিশিরপাড়া মাদিয়ার মাঠের অনেকের ধান ক্ষেতে ব্লাস্টের কারণে ধানের শীষ সাদা হয়ে চিটা পড়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, খবর পেয়ে আমরা জেলার বিভিন্ন মাঠ পরিদর্শন করেছি। বিক্ষিপ্তভাবে কোন কোন মাঠে বিশেষ করে ব্রি-২৮ ও ব্রি-৮১ জাতে ব্লাস্ট ভাইরাসের প্রকোপ দেখা গেছে। তবে যারা সুষম সার প্রয়োগ করেছে : তাদের তেমন সমস্যা দেখা যায়নি। তিনি আরও জানান, ব্রি-২৮ জাতটির বয়স হওয়ায় এ জাতটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে কমে গেছে। তাই ব্রি-ধান-২৮ চাষ না করার জন্য চাষীদের পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি নতুন উদ্ভাবিত ব্রি-৫৮, ব্রি-৬৬, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৪, ব্রি-৮৬, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২ ও ব্রি-৯৬ জাতের ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি।
পূর্ববর্তী পোস্ট
মহামারির মধ্যে মানুষ মেতেছে ঈদের কেনাকাটায় : চুয়াডাঙ্গাতেও ভিড়
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
2 মন্তব্য
উত্তর দিন
উত্তর বাতিল করুনYou must be logged in to post a comment.
আমার জমির ধান ও নষ্ট হয়ে গেছে 28 ধান আর লাগাবো না, ,অনেক খরচ করে যদি ধান না হয় কেমন লাগে তাহলে
আমার 2 বিঘা
জমির ধান ও নষ্ট হয়ে গেছে 28 ধান আর লাগাবো না, ,অনেক খরচ করে যদি ধান না হয় কেমন লাগে তাহলে