বাড়ি অযত্ম অবহেলা : নালিশ নিয়ে থানায় হাজির বৃদ্ধা
পুলিশকে পাশে পেয়ে আবেগ আপ্লুত রাজিয়া অশ্রু মুছলেন শাড়ির আঁচলে
শামসুজ্জোহা রানা: মা যতোই মেজাজী হোক, তারপরও কি ওরকম খারাপ আচরণ করা যায়, যেরকম আচরণ করলে বৃদ্ধা মাকে থানায় ছুটতে হয়? চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সবুজপাড়ার আনুমানিক ৮০ বছরের বৃদ্ধা রাজিয়া খাতুনকে তার বাড়ি পৌঁছে দিতে গেলে পুলিশ অফিসার এ প্রশ্ন তোলেন। ছেলে ও ছেলের স্ত্রীরা প্রশ্নের জবাব না দিলেও বৃদ্ধাকে এখন থেকে পালাক্রমে ঠিকমত খাবারসহ থাকার জায়গাটা থাকার মতোই করে দেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হলেই দেশের প্রচলিত আইনে ছেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সবুজপাড়ার খোকা শেখ মারা গেছেন। রেখে গেছেন তার বৃদ্ধা স্ত্রীসহ ৪ ছেলে। খোকা শেখ খুব অর্থশালী না হলেও তিনি তার ভিটেতেই রেখে গেছেন সহধর্মীনিকে। ছেলেরাই তাদের মাকে দেখবেন, এ আশা অবশ্যই অবান্তর নয়। খোকা শেখ মারা যাওয়ার আগে নিশ্চয় এরকমই আশা করেছিলেন। অথচ বাস্তবে উল্টো। বিশেষ করে খোকা শেখের স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের অভিযোগ তেমনই। তিনি গতকাল মঙ্গলবার বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে কাঁদতে কাঁদতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হাজির হন। তিনি খুঁজতে থাকেন এসপিকে। বলেন, ‘আমাকে আমার বাড়িতি থাকতি দেচ্ছে না। খাতিও দেচ্ছে না। বয়স হয়েছে। স্বামীটাও মরে গিয়েছে। এখন আমি কোথায় যাবো, কী খাবো।’ এ কথা শুনে থানায় কর্তব্যরত অফিসার বিষয়টি অবহিত করেন থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানকে। তিনি বৃদ্ধাকে মা বলে ডেকে কাছে টানেন। বলেন, আপনার ছেলেরা খেতে না দিলে আমরা দেখবো। কিন্তু কেনো খেতে দেবে না তাও তো আমাদের জানতে হবে। এরপরই বিষয়টি দেখার জন্য থানার ওসি দায়িত্ব দেন থানারই সাব ইন্সপেক্টর আশিকুল ইসলামকে। তিনি বৃদ্ধাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান তার বাড়ি সবুজপাড়ায়। বৃদ্ধার বাড়িতে গেলে বাড়ির লোকজনের মাথা নিচু হয়ে যায়। পুলিশের কাছে ক্ষমাও চায়। পুলিশ অফিসারের সামনে অবশ্য বাড়ির লোকজন বলেন, মুরুব্বি হয়ে গেছে তাই মেজাজ চড়া। সামান্যতেই রেগে যান। এসব কথা শুনেই সাব ইন্সপেক্টর বলেন, তার সন্তানেরা যখন শিশু ছিলেন তখন কি ছেলের মল-মুত্র দেখে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন? এখন মায়ের একটু মেজাজও যদি সহ্য করতে না পারেন তাহলে আইনের আওতায় আসতে হবে। এ কথার পর আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির লোকজন সকলেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, এখন থেকে ঠিকমতো খাবার দেয়া হবে। যে ঘরে থাকেন সেই ঘরটিও ভালো করে দেয়া হবে। এ প্রতিশ্রুতি পেয়ে সাব ইন্সপেক্টর আশিকুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে একেক ছেলের কাছে পালাক্রমে এক মাস করে থাকবেন মা। কোন রকমের ত্রুটি হলেই নেয়া হবে ব্যবস্থা। বৃদ্ধার কাছে পুলিশ অফিসারের মোবাইলফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগের অনুরোধ জানান। এ সময় বৃদ্ধা দারোগার মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে বলেন, অযতœ হলে আবারও যাবো থানায়। এসময় তিনি আবেগ আপ্লুত হয়ে অশ্রু মোছেন শাড়ির আঁচল দিয়ে।