বাক্যবানে একে অপরকে ঘায়েলের চেষ্টায় ছড়ালো উত্তাপ : ভোট ৪ ফেব্রুয়ারি
ঠেলা-ধাক্কা ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়ে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভা সম্পন্ন
দর্শনা অফিস: ঠেলা-ধাক্কা, চেয়ার ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়ে এবার কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভা সম্পন্ন হয়েছে। সভায় একে অপরকে লক্ষ্য করে ছোড়া বাক্য বানে উত্তেজনার পাদ মাঝে মাঝে চড়তে থাকে। উত্তাপ ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণসহ সভার যাবতীয় কর্মসূচি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে মিলের স্যানেটারি বিভাগের সামনে আয়োজিত সভা শুরু হলেও শেষ হয়েছে রাত ৯টার দিকে। টানা ১১ ঘণ্টা কথার বানে একে অপরকে করেছেন ধোলাই। কারো কারো ভাষায় কথার বাণে ঘায়েল করার চেষ্টা। ফলে দিনভর কেরুজ আঙিনা ছিলো উতপ্ত, জমজমাট। ভোটার সংখ্যার সাথে উপস্থিতির হার ছিলো বিস্তর ব্যবধান। বিশেষ করে ৫টি শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে দেখা গেছে ৮-৯ হাজার মানুষের উপস্থিতি। অথচ ভোটার সংখ্যা মাত্র ১৩শ। দৃশ্যপট দেখে প্রশ্ন উঠেছে বাড়তি মানুষগুলোর পরিচয় কি? সাধারণসভা থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। সভার শুরুতে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক আয়-ব্যয়ের ৪ পৃষ্ঠা বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সিরাজুল হক। বক্তব্য দেন কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জয়নাল আবেদীন নফর। বর্তমান পরিষদের সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের উপস্থাপনায় অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন যুগ্ম-সম্পাদক খবির উদ্দিন, শরিফুল ইসলাম, হাফিজুল ইসলাম, সালাউদ্দিন সনেট, মফিজুল ইসলাম, সুমন, আজাদ, মজিবর রহমান, বাবর আলী, মতিয়ার রহমান, জাহিদুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান সুমন, ইদ্রিস আলী, হারিজুল ইসলাম, সাহেব আলী, আবুল হোসেন, নুর ইসলাম, মফিজুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, এসএম কবীর, কামরুল হাসান লোমান, আতিয়ার রহমান, আব্বাস আলী, রেজাউল করিম, আনিস, মাজেদুল ইসলাম, মহিদুল ইসলাম, মোহন আলী প্রমুখ। বক্তারা বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীরা মিলের প্রাণ। অথচ এ শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের ব্যাপারে এ পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সাধারণ শ্রমিকরা আজ নানাভাবে অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত। তাই আসুন শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দলমত নির্বিশেষে এক কাতারে দাঁড়ায়। নির্বাচনের আগে নেতারা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য অনেক কথা বললেও ক্ষমতা হাতে পেলে প্রতিশ্রুতির সকল বাণী ভুলে যান। সাধারণ শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বারবার হচ্ছে বঞ্চিত। ক্ষমতায় থাকা ওই নেতারা নিজের আখের গোছাতে নেমে পড়েন লুটপাটের প্রতিযোগিতায়। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বয়সের ভারে নুয়ে পড়া সেকেলের এ মিলটিকে দিনদিন নিচ্ছেন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একটি কথা সকলকে মনে রাখতে হবে, মিল বাঁচলেই, শ্রমিকরা বাঁচবে, টিকবে আমাদের নেতৃত্ব। এছাড়া বক্তারা একে অপরের ওপর আক্রশমূলক বক্তব্যে ধোলাই করতে ছাড়েননি। গত রোববার বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়ন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরিচালনা কমিটির শেষ সভা থেকে এ নির্বাচন ও সাধারণ সভার দিন নির্ধারণ করা হয়। সভায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে বর্তমান পরিষদ। সাধারণসভায় এ কমিটির নাম সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এ পরিচালনা কমিটিতে রয়েছেন চেয়ারম্যান চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারি) ফিদাহ হাসান বাদশা, পরিবহন বিভাগের (প্রকৌশলী) আবু সাঈদ, লেবার অফিসার আলআমিন ও সহ-ব্যবস্থাপক জহির উদ্দিন। চিনিকলের হিসাব, প্রসাশন ভান্ডার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বানিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা গত নির্বাচনে ছিলো ১০৮৮। দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন মিলের শ্রমিক-কর্মচারী কেরুজ চিনিকলে যোগদান করেছে ২৭০ জন। ফলে মোটার ভোটার সংখ্যা ১৩৫৮ দাঁড়ালেও চুড়ান্তভাবে কমতে পারে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত ২ বছরে বহু ভোটার অবসরগ্রহণ ও মৃত্যুজনিত কারণে কমেছে। ফলে এবার সাম্ভাব্য ১৩০০ ভোটার হতে পারে। এ নির্বাচনে পরিবর্তন আনা হয়েছে পরিষদের সদস্য সংখ্যায়। তথ্যানুযায়ী কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের বর্তমান পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা ১৩ জন। বছর ছয়েক আগে ২৫ সদস্যের কমিটির পরিবর্তন করে তা ১৩ সদস্যের করা হলেও এবার পরিবর্তন সেই পঁচিশে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পরিবর্তন করে ফের ২৫ সদস্যের কমিটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এবারের নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে প্রার্থীরা। সেক্ষেত্রে যেমন বেড়েছে পদের সংখ্যা, তেমনি বাড়ছে প্রার্থীর সংখ্যাও। এবারের নির্বাচনে পুরাতনের পাশাপাশি নতুন মুখেরও দেখা মিলছে বেশ। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মূলত বড় পদ দুটি। তা হচ্ছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদই মূল পদ হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ ও সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে নাম শোনা যাচ্ছে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স ও জয়নাল আবেদীন নফর। সহসভাপতি পদে ১ জনের পরিবর্তে এবার দুজন নির্বাচিত হবে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এসএম কবীর, মফিজুল ইসলাম, আনিছুর রহমান ও রেজাউল করিম। এদিকে বর্তমান সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবারের নির্বাচনে সে পদ থেকে সরে যুগ্ম-সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে মোতাবেক ব্যানার-ফ্যাস্টুনও সেটেছেন কেরুজ এলাকায়। যুগ্ম-সম্পাদক পদে নাম শোনা যাচ্ছে মোস্তাফিজুর রহমান, বর্তমান যুগ্ম-সম্পাদক খবির উদ্দিন, আতিয়ার রহমান, মহিদুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রচারণায় মাঠে রয়েছে ইকবাল হোসেন ও বাবুল আক্তার। কমিটির অন্যান্য পদের বিপরীতে অসংখ্য প্রার্থী নানাভাবে তাদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছেন। তবে সাধারণ সভা এবং তফসিল ঘোষণার পর পরিস্কার বোঝা যাবে শেষ অবধি কে কে টিকে থাকে নির্বাচনের মাঠে। এ নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।