অবহেলায় অনাদরে ফেলে আসা দিনগুলোর দিকে তাকাতেই বদন যখন মলিন
স্টাফ রিপোর্টার: ‘বন্ধু হয়ে বন্ধুর পাশে‘ থাকার দৃঢ় প্রত্যয়ে গঠিত প্রতীত’র পাথেয় সংখ্যা এখন শতাধিক। খাতায় খুদিত নাম চোয়াত্তর পেরিয়ে পোঁছাত্তর ছুঁইছঁই। প্রতিবছর অন্তত একবার মিলন মেলা হলেও যখন যার পাশে যেভাবে দাঁড়ানো দরকার, তখনই তার বা তার পরিবারের পাশে থেকে একের পর এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে চলা প্রতীত প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গতদের স্বস্তি ফেরানোর ক্ষেত্রেও সিদ্ধহস্ত। সব মিলিয়ে একের পর এক স্থাপন করে চলেছে মানবিক দৃষ্টান্ত।
বন্ধু হয়ে বন্ধুর পাশে দাঁড়ানো যায় কীভাবে? ভাবতে বসেই চুয়াডাঙ্গায় হাতেখড়ি নেওয়া কয়েকজন ভাবুক বন্ধু হাতড়াতে থাকেন স্মৃতিপট। অবহেলায় অনাদরে ফেলে আসা দিনগুলোতে তাকাতেই উঠে আসে চোঁখ ছলছল করা তথ্য উপাত্ত। গত হওয়া বন্ধুর সংখ্যা বেড়েছে। বন্ধু জিয়া, টেন্টু, দিপকসহ কয়েকজনের চিরপ্রস্থান যেনো পরাস্থ করে তোলে বাকিদের। ক্ষেত্র বিশেষ কারো কারো খবর না পাওয়া কষ্ট কুকড়িয়েছে চেনা-জানা সকলকে। বন্ধুদের বদন হয়েছে মলিন। নেত্রে ঝরেছে অশ্রু। বয়েছে নোনা জলের স্রোত। বন্ধু! অথচ খবর রাখি না। হালচিত্র অজানা! এমন তো হতে পারে না। একে থাকতে হবে অপরের পাশে। বন্ধু হয়ে বন্ধুর অশ্রু সম্মিলিতভাবে মুছে অবিরাম উল্লাসে মেতে উঠতে হবে। তা না হলে বন্ধু কিসের? এ তাগিদ থেকেই এসএসসি ৮৬ ব্যাচকে ভিত্তি করে ২০১৮ সনের শুরুর দিকে গঠন করা হয় প্রতীত। ভাঙনের বালুচরে বন্ধুত্বের অট্রালিকা গড়ে তোলার অদম্য সাহস হয়ে অগ্রভাগে বুক উচিয়ে দাঁড়ায় আহমেদ ডানিয়েল ইসলাম। বন্ধু দরদী আব্দুস সালাম, পলাশ আগরওলা, সাজ্জাতুল আলম রাজুকে সামনে রেখে গঠিত কমিটি দিন দিন মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে শুরু করে। পথ চলার লিখিত কানুন লিখে পূর্ণতা দেয় ফজলে রাব্বী সাগর ও তালিম হোসেন। সরদার আল আমিন বাড়িয়েছে সাংগঠনিক গতি। স্বর্গীয় হওয়া দীপকের শূন্যতা পুরণে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায় প্রতীত। বন্ধুর সন্তানের বিয়েতে বন্ধুর অবর্তমানে বন্ধুরই হয়ে উঠে অভিভাবক। খানেকটা হঠাত করেই সকলকে ছেড়ে বন্ধু হালিমের চলে যাওয়াও দূরভাবনার কারণ হয়ে উঠে। ওর সন্তান তথা পরিবারের পাশেও খুটি হয়ে হাজির হয়- প্রতীত। শিমুলের হঠাৎ করে পিছিয়ে পড়াকে কি বন্ধুরা মেনে নিতে পারে? তাকেও এগিয়ে নিতে প্রতীত গড়ে তুললো বন্ধুত্বের অন্যরকম বন্ধন। এ যেনো দৌড়ের মাঠে হোচটখাওয়া বন্ধুর কোমর ধরে টেনে তুলে লক্ষে পৌছে দেয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা। প্রচেষ্টা যখন সম্মিলিত, তখন সফলতা তো অনিবার্য। বন্ধু হাসান? অদৃশ্য শত্রু যেনো এর কোমরের অস্তি মজ্জা কুরে কুরে খাচ্ছিলো। যন্ত্রণায় কাঁতর বন্ধুর পাশে প্রতীতের দেশ বিদেশে থাকা পাথেয় তথা পথের সাথীরা স্বল্প সময়েই ওর শরীরের অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে ঘোষণা করে যুদ্ধ। সম্মিলিতভাবে যোগানো রসদ শুধু বন্ধু হাসানকেই সুস্থতা দিলো না, প্রতীতকেই করে তুললো অনন্য।
প্রতীত এবার পূর্ব বঙ্গের বন্যা দুর্গাতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর পবিত্র রমজানে ইফতার-সেহরীর সামগ্রী যেমন বিতরণ করে, তেমনই যাকাত প্রদানেও পরিচ্ছন্নতা পরতে পরতে। প্রতীত গঠনের পর থেকে বন্ধু হয়ে বন্ধুর পাশে থাকার প্রত্যয়ে চলার পথে ব্যায়ের অংক লাখের হিসেবে এক হাতের সব কর প্রায় পেরিয়েছে। যা স্বস্তির সুবাতাস। অর্থে তুল্যমূল্য অবশ্যই অমূল্যেরই। অতুলনীয়। প্রবাসী বন্ধুদের মধ্যে সেলিম, অতিক, কদর, মুকিত, সালেহা, সজল, মিঠু, কামরুজ্জামান, খোকনসহ অনেকেই প্রতীত’র অনন্য উদাহরণ সৃষ্টিতে যেমন অন্যতম অংশিদার, তেমনই দেশে দূরে কাছে থাকা আবির, রানা, তমাল, ইমরোজ, বিলাস, কল্লোল, নিপ্পন,রিন্টু, লিটন, আশাদুল,পাপিয়া, ইতি, ডলি, পলি, শিলা, নীলা, লিপি, মাহবুব, রতন, মিলু, আরিফুল, রোকন, ল্যাসটন, খোকন, বাচ্চু, অসীম, মণ্টু, সানাউল, ফরিদা, শামীমা, দুলাল, লিংকন, রুবা, রবিন, মাসুদ, শুভ্র, সাহেদ, টুটুল, শামীম, রায়হান, শিল্পি, সুমন, সানোয়ার, দিপু, তাহের, ইলিয়াস, বুলবুল, রিপন, সালাউদ্দীন, মহসিন, আসিফসহ সকলের নিবিড় বন্ধুত্ব পরিচর্যা যেন প্রজন্মের জন্যও অনুকরনীয়।
প্রতীত’র কার্যকরি কমিটিতে রয়েছে, সভাপতি আব্দুস সালাম, সহ সভাপতি সরদার আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুমার আগরওলা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সাগর, কোষাধ্যক্ষ সাজ্জাদুল আলম রাজু, দফতর সম্পাদক শাহবুদ্দীন রুবেল, আইন বিষয়ক সম্পাদক তালিম হোসেন, কার্যকরি সদস্য নুঝাত পারভীন, শফিউল ইসলাম, হাসানুল আলম শান্তি, আবু সঈদ বিটু, রফিকুল ইসলাম ফিট্টু। উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছে আহমেদ ডানিয়েল ইসলাম, আব্দুস সিদ্দিক, হাফিজুর রহমান রতন, আব্দুল হাফিজ বকুল, নাজিমউদ্দীন ও আশফাকুল আলম তুহিন।
প্রসঙ্গতঃ প্রতীত সদস্যরা যখনই এক সাথে বসে, তখনই প্রয়াত বন্ধু জিয়া, হালিম, টেন্টু, রফিক, হিরু সালাম, দীপক, তোতাসহ আরও যারা গত হয়েছে তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.