চুয়াডাঙ্গার আল হেলাল ইসলামি একাডেমি চত্বরে শিক্ষার্থীদের সামনেই বহিরাগত একদল যুবকের নৃসংশতা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিদায় অনুষ্ঠানে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। প্রেম নিয়ে বিরোধের জেরে কয়েক যুবক বিদ্যালয় চত্বরেই পরীক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান তপুকে এলোপাতারি কুপিয়ে খুন করে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টার দিকে শহরের গুলশানপাড়ার আল হেলাল মাধ্যমিক ইসলামী একাডেমী স্কুল চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাহবুবুর রহমান তপু (১৬) পৌর এলাকার নুরনগর কলোনীপাড়ার আব্দুল মজিদের ছেলে। সে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিলো। অপরদিকে, গতরাত শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হত্যার ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে তাদের দ্রুত গ্রেফতারে পুলিশের ব্যাপক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে অভিযুক্তদের একজনের বাবাসহ নিকটআত্মীয় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নেয়ার খবর পাওয়া গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। এদিকে, ময়নাতদন্ত শেষে তপুর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতরাত ১০টার কলোনিপাড়া জামে মসজিদে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই স্কুলে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলছিলো। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আনুষ্ঠানিকতার শেষ পর্যায়ে মোটরসাইকেল নিয়ে তিন যুবক বিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশ করে। ওইসময় বিদ্যালয়ের গেটের সামনেও কয়েক যুবক অবস্থান নেয়। সেখানে তপুকে দেখার সাথে সাথে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপ শুরু করে।
নিহত তপুর বন্ধুরা জানিয়েছে, ‘স্কুলেরই এসএসসি পরীক্ষার্থী সহপাঠী এক মেয়ের সাথে তপুর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ওই মেয়েকে বহিরাগত এক ছেলেও পছন্দ করতো। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে রোববার সকালে ৯টার দিকে বিদায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে তপুর সাথে হামলাকারীদের একজনের তর্কাতর্কি হয়। পরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদ্যালয়ে চলে যায় মাহবুবুর রহমান তপু।
প্রত্যক্ষদর্শী স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, তখন দুপুর সাড়ে ১২টা, বিদায় অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। সে সময় বিদায় অনুষ্ঠানের পেছনের বেঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে তপু এবং তার প্রেমিকা কথা বলছিলো। এ সময় একটি কালো রঙের অ্যাপচি ফোর-ভি মোটরসাইকেলে তিনজন বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রবেশ করে। ওই সময় বিদ্যালয়ের গেটের সামনে আরও তিন যুবক অবস্থান নেয়। মোটরসাইকেলযোগে আসা জেলা শহরের ফার্মপাড়ার ইমন, শিহাব, শান্তিপাড়ার আকাশ ও মুসলিমপাড়ার রূপক বিদ্যালয়ে ঢুকেই তপুর ওপর হামলা চালায়। তারা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে প্রথমে মাথায় আঘাত করলে মাটিতে পড়ে যায় তপু। এ সময় হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে হাতের একটি কব্জি কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে তপুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
পরে স্কুলের শিক্ষকসহ অভিভাবক এবং স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। জরুরি বিভাগে নেয়ার পরপরই তপু মারা যায়। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডা. শাকিল আর সালান জানান, তপুর শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপের অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে। এক হাতের কব্জি কেটে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে নেয়ার পরপরই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষার্থীদের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আতঙ্কের সৃষ্টি হয় ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের মাঝে। এমনকি এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে।
এ ঘটনার পর নিরাপত্তা জোরদার করে স্কুল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকারীদের খুঁজতে পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনার পর পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, নিহত মাহবুবুর রহমান তপুর বাড়ি পরিদর্শনে যান। বাড়ির লোকজনকে সান্ত¦না দেন এবং হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
তপুর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে কলোনিপাড়া এলাকার লোকজন ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে। উত্তেজিত জনতা হত্যাকারী ফার্মপাড়ার ইমনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় বাড়িতে ভাঙচুর এবং লোকজনকে মারধরও করে তারা।
আল হেলাল মাধ্যমিক ইসলামি একাডেমির সভাপতি শহিদুল কদর জোয়ার্দ্দার বলেন, এ হত্যাকা- অত্যন্ত জঘন্যতম ঘটনা এবং পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনার পর থেকে পুরো স্কুলজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমরা দোষীদের অতি দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, প্রাথমিকভাবে শোনা যাচ্ছে সহপাঠীর সাথে প্রেমঘটিত কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থী তপুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেফতারে জোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই ঘটনায় আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।