প্রেমের বিয়ে : গাংনীতে একসঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে স্বামী-স্ত্রীর আত্মহত্যা
শাশুড়ির কাছে রুটি খাওয়ার আবদার জানিয়ে দুজন বন্ধ করেন ঘরের দরজা
গাংনী প্রতিনিধি: দাম্পত্য জীবন নিয়ে তারা ছিলেন অনেক খুশি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শ্বশুর বাড়িতে একই ঘরে ছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন। সংসার সুখ দুঃখের আলাপ করেই তাদের সময় কেটে যাচ্ছিলো। হঠাৎ রুটি খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন স্বামী সাগার হোসেন। স্ত্রী চামেলী খাতুন তার মাকে রুটি বানিয়ে দিতে বলেন। তবে বাড়িতে আটা না থাকায় বিপাকে পড়েন সাগরের শাশুড়ী। জামাইয়ের আবদার রক্ষা করতে তিনি দোকানে আটা কিনতে গিয়েছিলেন। বাড়ি ফিরে দেখলেন ভেতর থেকে তাদের রুম বন্ধ। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে যখন লোকজন ঘরে প্রবেশ করে তখন স্বামী-স্ত্রী একই ওড়নায় ঝুলেছিলো। উদ্ধার করার আগেই তার মৃত্যুবরণ করেন। এমন হৃদয় বিদারক মৃত্যুতে শোকে কাতর হয়ে পড়েন সাগর ও চামেলীর পরিবারের সদস্যরা।
একটি সুখের সংসারে কেনো এই মত্যু? স্বামী-স্ত্রী একসাথে মৃত্যুর কারণই বা কী ? এমন নানা প্রশ্ন মানুষের মুখে মুখে। তবে কোন কুলকিনারা হয়নি মৃত্যুর কারণ নিয়ে।
ঘটনাটি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দিঘলকান্দি গুচ্ছ গ্রামে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্বামী সাগার হোসেন (১৮) ও স্ত্রী চামেলী খাতুনের (১৬) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাগর ও চামেলীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকলেও চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে মরদেহ ময়না তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, প্রেমের সম্পর্কে মাধ্যমে এক বছর আগে গাংনী উপজেলার দিঘলকান্দি গ্রামের কালুর মেয়ে চামেলীর সাথে সদর উপজেলার পাটকেলপোতা গ্রামের ইকতার আলীর ছেলে সাগর হোসেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পরও তারা ছিলেন বেশ সুখি। শ^শুর বাড়িতে কিংবা নিজ বাড়িতে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিলো না।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চামেলী খাতুন বেশ কয়েকদিন ধরে পিতার বাড়িতে ছিলেন। সোমবার গভীর রাতে পিতার সাথে দ্বন্দ্ব করে শ^শুরবাড়িতে চলে আসে সাগর। দুপুরের দিকে সাগর ও চামেলী মায়ের কাছে রুটি খাওয়ার আবদার করে। বাড়িতে আটা না থাকায় দোকানে আটা কিনতে গিয়েছিলেন চামেলীর মা হাফিজা খাতুন। ফিরে এসে ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখেন তিনি। ডাকাডাকি করে তাদের কোনো সাড়া পাচ্ছিলেন না। আটা আনতে যাওয়ার অল্প সময়ের ব্যবধানে কি এমন হয়েছে তা ভেবে অস্থির হয়ে পড়েন হাফিজা খাতুন। এক পর্যায়ে বিপদ আচ করতে পেরে তিনি চিৎকার দিয়ে আশেপাশের লোকজন জড়ো করেন। তার ডাকে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে দরজা ভেঙে তাদের দু’জনকে একই ওড়নায় ঝুলে থাকতে দেখেন। স্থানীয়রা তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
উভয় পরিবারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তেমন কোনো গ-গোল কখনও হয়নি। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসার ঘাটতি দেখেননি পরিবার। এই দম্পত্তি বেশ হাঁসিখুশি ছিলো সবসময়। তাহলে কেনো এই মুত্যু? আবার দু’জন কেনো একসাথে গলাফ ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে? এর পেছনের কারণ কী? এমন প্রশ্ন খোদ পরিবারের সদস্যদের।
এদিকে খবর পেয়ে গাংনী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন। তাদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে মনে করছে পুলিশ। দুই পরিবারের পক্ষ থেকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফনের অনুমতির জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এই মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করা দরকার বলে মনে করছে পুলিশ। ফলে মেলেনি অনুমতি।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বামী-স্ত্রী একই সাথে একই ওড়নায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে তার পেছনে কোনো না কোনো কারণ তো অবশ্যই আছে। তাহলে সেই কারণ কী ? নানা প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পুলিশ। বিষয়টি সাধরণ কোনো ঘটনা নাও হতে পারে। তাই মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য মরদেহ দু’টি ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মরদেহ উদ্ধার বিকেলে হয়েছে তাই হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্ভব ছিলো না। এ কারণে পুলিশ হেফাজতে মরদেহ রাখা হয়েছে। বুধবার মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে ময়নাতদন্ত করা হবে। এর পরে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।