প্রধান শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগে সামসাদ রানু গ্রেফতার
আলমডাঙ্গায় বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় ঘুসি
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গায় বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে পেটানোর অভিযোগে জেলা কৃষকলীগ নেত্রী সামসাদ রানুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাত ৮টার দিকে উপজেলা শহরের চাতাল মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক সন্ধ্যায় সামসাদ রানুর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। বুধবার সকালে আলমডাঙ্গা পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে চড়-থাপ্পড় ঘুসি মারেন এমনকি পায়ের স্যান্ডেল খুলে পেটাতে যান তাকে।
বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের বিবরণ থেকে জানা যায়, বুধবার বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়। সামসাদ রানু ওরফে রাঙা ভাবি তার সপ্তম শ্রেণিতে পড়–য়া ছেলে অর্ক হাসানকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান করছিলেন। ছেলের ধারাবাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষা কিভাবে হবে কখন হবে তা জানার চেষ্টা করছিলেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় জামার কলার ধরে প্রধান শিক্ষককে ধাক্কাতে ধাক্কাতে ক্লাস রুমের দিকে নিয়ে যান এবং কিল-ঘুসি ও চড় মারতে থাকেন কৃষকলীগ নেত্রী সামসাদ রানু। এক পর্যায়ে পায়ের জুতা খুলে মারতে উদ্যত হলে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক কৃষকলীগ নেত্রী সামসাদ রানুকে বাধা দেন। এ ঘটনায় বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান থানায় মামলা করেন। এরপর রাত ৮টার দিকে উপজেলা শহরের চাতালমোড় থেকে সামসাদ রানুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কৃষকলীগ নেত্রী সামসাদ রানু আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। পরবর্তীতে মেয়র পদে নির্বাচন করে তিনি জামানত হারান। তিনি এলাকায় রাঙা ভাবি নামে অধিক পরিচিত।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক স্কুলে দেরি করে আসায় ক্ষুব্ধ সামসাদ রানু প্রথমে তাকে চড় থাপ্পড় মারেন। পরে পায়ের স্যান্ডেল খুলে পেটাতে যান প্রধান শিক্ষককে। সামসাদ রানুর ছেলে অর্ক হাসান সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছেলের সঙ্গে স্কুলে ঢুকে দেখতে পান প্রধান শিক্ষক উপস্থিত হননি। এরপর প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান স্কুলে ঢোকেন সকাল পৌনে ১০টার দিকে। এতে ক্ষুব্ধ রাঙা ভাবি প্রধান শিক্ষককে ধাক্কাতে ধাক্কাতে অফিস কক্ষের ভেতরে নিয়ে যান। প্রধান শিক্ষক চেয়ারে বসলে দুজনের মধ্যে বাগবিত-া হয়। এ সময় উত্তেজিত নেত্রী রাঙা ভাবি প্রথমে প্রধান শিক্ষকের মুখে একের পর এক চড় মারতে থাকেন এবং একপর্যায়ে পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারতে উদ্যত হন।
প্রত্যক্ষদর্শী সহকারী প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন বলেন, আমি অফিসের ভেতরেই ছিলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্যারকে মারধর শুরু করা হয়। অভিযুক্ত রাঙা ভাবি অকপটে স্বীকার করে বলেন, দেরি করে স্কুলে আসার কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এজন্য তাকে ধাক্কা দিয়েছি মাত্র। চেয়ার তুলে মারতে গেলে একজন শিক্ষক ঠেকিয়ে দেন তাকে।
প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, যা ঘটেছে তা অত্যন্ত অপমানকর। আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়েছি। সন্ধ্যার পর থানায় মামলা করেছি।
বিদ্যালয়ের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নুর বলেন, প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সামসাদ রানু নামের নারী যেটা করেছেন তা ফৌজদারি অপরাধ এবং নিন্দনীয়। এ ব্যাপারে থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, প্রধান শিক্ষক মামলা করার পরপরই অভিযুক্ত সামসাদ রানুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আলমডাঙ্গা শহরে নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। দাবি উঠেছে এ ঘটনায় রাঙ্গাভাবির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। রাজনীতির সাথে সামান্য যোগসূত্র থাকলেই একজন শিক্ষককে এতো ন্যাক্কারজনকভাবে লাঞ্ছিত করার সাহস দেখানোর সংস্কৃতি বন্ধের দাবি জানানো হয়। আলমডাঙ্গার শিক্ষকসমাজও এ ঘটনায় অনুরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।