প্রচণ্ড গরম আর দিনে-রাতে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

রিচার্জেবল ফ্যান লাইট ও আইপিএসের চাহিদার সঙ্গে বেড়েছে দাম

স্টাফ রিপোর্টার: কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে প্রচ- দাবদাহের কারণে এমনিতেই হাঁসফাঁস অবস্থা চুয়াডাঙ্গায়। এর সঙ্গে দিনে-রাতে লোডশেডিং, দুর্ভোগে নতুন উপকরণ যোগ করেছে। প্রচ- গরমের মধ্যে লোডশেডিং শুরু হওয়ায় সবার, বিশেষ করে প্রবীণ ও শিশুদের কষ্ট-দুর্ভোগ চরমে। দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অনেকেই রিচার্জেবল ফ্যান, লাইট ও আইপিএস কিনছেন। এই চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সুযোগ বুঝে দোকানদারেরা এসব পণ্যে ৭০০ থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম হাঁকছেন।

চুয়াডাঙ্গার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার গতকাল রোববার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন শনিবারের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। আবহাওয়া দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, শুক্রবার ছিলো প্রচ- দাবদাহ এবং শনিবার ও রোববার মাঝারি দাবদাহ।

পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে প্রচ- দাবদাহ বয়ে চলেছে। দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। বাতাসে আর্দ্রতা (জলীয় বাষ্প) বেশি থাকায় মানুষের দেহের স্বাভাবিক শীতলীকরণের প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। শরীরের ঘাম ধীরে শুকায়। শরীর দ্রুত তাপ হারিয়ে শীতল বা ঠান্ডা হতে পারে না। ফলে ভ্যাপসা গরম ও চটচটে ভাব অনুভুত হচ্ছে।

এদিকে দাবদাহের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দিনে-রাতে সমানে লোডশেডিং চলছে। লোডশেডিংয়ের কারণে দিনের বেলা বিভিন্ন কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রাতের বেলা মানুষ ঘুমাতে পারছে না।

শহরের আরামপাড়ার বাসিন্দা সোহরাব হোসেন দাবি করেন, বিদ্যুতের ভোল্টেজ ওঠানামার কারণে তার বাড়িতে ব্যবহৃত দুটি আইপিএস পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। একই কারণে মল্লিকপাড়ায় একাধিক বাড়িতে বৈদ্যুতিক ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে। ওই পাড়ার বাসিন্দা স্কুলছাত্রী আফরোজা খাতুন ও তুলি খাতুন জানায়, লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে নানা ব্র্যান্ডের রিচার্জেবল ফ্যান ও লাইটের বাড়তি মূল্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য পরিচিত আলী হোসেন সুপার মার্কেটের ঝিলমিল ইলেকট্রনিকসের মালিক আব্দুল আজিজ বলেন, টানা দাবদাহ ও লোডশেডিংয়ের সময় গরমের তীব্রতা থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই বিকল্প হিসেবে রিচার্জেবল ফ্যান, লাইট ও আইপিএস কিনতে আসছেন। তিনি বলেন, ‘কেনা মূল্যের সঙ্গে সীমিত লাভ করে আমরা ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি করি। কিন্তু স্থানীয় বাজারে রিচার্জেবল ফ্যান ও লাইট চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার পাইকারি দোকানগুলোতেই বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে। এমনকি অগ্রিম টাকা পাঠিয়েও এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।’

চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠ এলাকার ন্যাশনাল ব্যাটারি হাউসের মালিক ইদ্রিস আলী স্বীকার করেন, ছয় মাস আগেও উন্নত মানের ব্যাটারিসহ আইপিএস সেট ৩০ হাজার টাকার নিচে পাওয়া যেতো। এখন এটার বাজারমূল্য ৩৯ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘লোডশেডিং শুরু হওয়ায় আইপিএসের চাহিদার সঙ্গে দামও বেড়ে গেছে। কিন্তু বাড়তি দাম দিয়েও কোম্পানি থেকে এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনই ক্রেতারা এসে ফিরে যাচ্ছেন।’

আলী হোসেন সুপার মার্কেটে এ প্রতিবেদকের কথা হয় কফিল উদ্দিন নামের বেসরকারি একজন চাকরিজীবীর সঙ্গে। সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের টেংরামারী গ্রামে তার বাড়ি। তিনি স্কুলপড়ুয়া আট বছর বয়সী একমাত্র ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে একটি রিচার্জেবল ফ্যান কিনতে এসেছেন। কফিল বলেন, আগের রাতে তার এলাকায় অন্তত পাঁচবার বিদ্যুৎ গেছে। প্রতিবার এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিলো না। বড়রা গরমের কষ্ট সহ্য করতে পারলেও বাড়ির প্রবীণ সদস্য ও শিশুরা তা সহ্য করতে পারছে না। তাই ফ্যান কিনতে এসেছেন। তার অভিযোগ, পাঁচটি দোকান ঘুরে দেখতে পান, একেক দোকানদার একেক রকম দাম চাইছেন। দামের পার্থক্যও অনেক।

পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) লিমিটেড চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ঘোষ বলেন, চুয়াডাঙ্গায় তার কার্যালয়ের অধীন পিক আওয়ারে (বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টা) ১৯ মেগাওয়াট এবং অফপিক আওয়ারে (রাত ১২টা থেকে পরদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টা) ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। সেখানে গড়ে পিক আওয়ারে সাড়ে ১৩ মেগাওয়াট এবং অফপিক আওয়ারে ১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে। তিনি বলেন, গ্রিড কোম্পানি থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিটি ফিডারে পর্যায়ক্রমে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড চুয়াডাঙ্গার জাফরপুর গ্রিড উপকেন্দ্রের উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হাসান জোয়ারদার বলেন, এই উপকেন্দ্র থেকে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। তিনি বলেন, ‘জাতীয় গ্রিড থেকে প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। পিক আওয়ারে সব মিলে বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা ১২১ মেগাওয়াট। সেখানে গড়ে পাওয়া যাচ্ছে ৭২ মেগাওয়াট। অন্যদিকে, অফপিক আওয়ারে ১০৮ মেগাওয়াটের বিপরীতে মিলছে ৭৮ মেগাওয়াট। পিক আওয়ারের তুলনায় অফপিক আওয়ারে কিছুটা বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’ তবে কতদিন বিদ্যুতের এই দুরবস্থা থাকবে, তা ওজোপাডিকো ও পিজিসিবির কর্মকর্তাদের কেউই জানাতে পারেননি।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More