পূর্বঘোষণা ছাড়াই দাম বাড়লো চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পানি ও সেবার

পৌর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার: পূর্বঘোষণা ছাড়াই চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন এ দর গত জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। পানির বিল ৪১ শতাংশ ও সেবামূল্য ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুৎ, সংস্থাপনের ব্যয়সহ সব উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি প্রজ্ঞাপনের আলোকে পানির বিল পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নাগরিক সংগঠন লোকমোর্চা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার সভাপতি মানিক আকবর বলেন, সেবামূল্য একবারে এতো টাকা বাড়ানো ঠিক হয়নি। এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। এটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। পৌরসভা খেয়ালখুশিমতো করেছে। এটা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। মানিক আকবর দাবি করেন, পানির বিল ও সেবামূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা বাতিল করে নাগরিকদের নিয়ে শুনানি করা উচিত। পৌরবাসীর বক্তব্যের জন্য একটা দিন দিক। উভয়পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে পানির বিল ও সেবামূল্য সহনীয় পর্যায়ে বাড়ানো হোক।

পৌরসভার পানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার বর্তমানে ৭৫ শতাংশ এলাকা ও ৮০ শতাংশ নাগরিক সরবরাহ করা পানির সেবার আওতায় আছে। এসব এলাকায় গ্রাহকসংখ্যা আবাসিক ৭ হাজার ১২১, বাণিজ্যিক ২২৪ এবং স্ট্রিট হাইড্র্যান্ট ৮টি। ৩টি ওভারহেড ট্যাংক ও ১৩টি নলকূপের মাধ্যমে দৈনিক সকাল, দুপুর ও বিকেল ৩ দফায় ৭৮ লাখ ৫৪ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। তবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত হলে পানি উত্তোলন ও সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে সর্বশেষ পানির বিল বাড়ানো হয়। চার বছর পর এ বছরের জুলাই থেকে আবারও বাড়ানো হলো। আবাসিক গ্রাহকের জন্য আধাইঞ্চি ব্যাসের লাইনের মাসিক বিল ১৬০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া পৌনে এক ইঞ্চি ব্যাসের লাইনের বিল ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা, এক ইঞ্চি ব্যাসের লাইনের বিল ৪২৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা, দেড় ইঞ্চি ব্যাসের লাইনের বিল ৮৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিক গ্রাহকের ক্ষেত্রে ১৩ থেকে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আবাসিক সংযোগ ফি ৬৭ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক সংযোগ ফি শতভাগ বাড়ানো হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন ফি ৬০০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে, যা আগের চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, ‘রোববার সকালে পানির বিল হাতে নিয়ে দেখি, ২৫০ টাকার জায়গায় ৩০০ টাকা করা হয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলাম, প্রিন্টিং মিসটেক। পরে দেখি, বিলের সঙ্গে একটি কাগজ দেয়া হয়েছে। যেখানে বিল ও সেবামূল্যের ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গার পরিবেশবাদী নেতা অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী বলেন, এভাবে পানির বিল বাড়ানো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গ্রাহকদের কথা বলার অধিকার থাকা উচিত ছিলো। তা না করে হঠাৎ বিল বাড়ানো যুক্তিযুক্ত নয়। পৌর কর্তৃপক্ষ এটা ঠিক করেনি।

পানি বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী এএইচএম সাহীদুর রশিদ বলেন, পানি খাতে বর্তমানে প্রতি মাসের খরচ ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭১১ টাকা। সেখানে জুন পর্যন্ত মাসিক আয় ছিলো ১৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ঘাটতি পূরণের জন্য পানির বিল ও সেবামূল্য বাড়ানো হয়েছে।

পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন বলেন, বিদ্যুৎ, সংস্থাপনের ব্যয়সহ সব উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি প্রজ্ঞাপনের আলোকে পানির বিল পুননির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More