পুলিশের সামনে কোপানো সেই নিপুন মারা গেছেন

চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের সামনে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম সেই নিপুন সাহা মারা গেছেন।

শেখ রাকিব : আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে মুঠোফোনে বলেন, চিকিৎসাধীব অবস্থায় নিপুন সাহা মারা গেছে। এ বিষয়ে এখনো মামলা বা অভিযোগ হয়নি। তবে অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। নিহত নিপুন সাহার বড় ভাই শান্তনু মুঠোফোনে রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাই পেশায় ড্রাইভার ছিল। তরমুজ নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে মামুন, জেবু ও রানাসহ একাধিক যুবক আমার ভাইকে কুপিয়েছিল বলে জেনেছি। আরও বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
এর আগে শনিবার (১২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে পৌর শহরের টাউন ফুটবল মাঠের পাশে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সামনেই এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখমের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, নিপুন সাহাও একজন তরমুজ বিক্রেতা। তরমুজ সাদা হওয়ায় এক তরমুজ বিক্রেরার সঙ্গে মামুন নামের একজনের বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় বিষয়টি মিমাংশা হলেও পাশের তরমুজ বিক্রেতা নিপুন সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা হাসি-ঠাট্টা করায় দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে এ ঘটনার সুত্রপাত।
রোববার (১৩ এপ্রিল) নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভুক্তভোগী রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, তরমুজ লাল না হওয়া এটা একটি ইস্যু মাত্র। একজন বাইরের ক্রেতার সঙ্গে তরমুজ লাল না হওয়া নিয়ে বিক্রেতার তর্কবিতর্ক হয়েছিল ঠিকই। পরে সেখান থেকে ওই ক্রেতা চলে যান। এ নিয়ে কোন ঘটনায় ঘটেনি। মূলত তরমুজ বিক্রেতা নিপুন সাহার নিকট স্থানীয় একজন ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। বিষয়টি হাসি-ঠাট্টার ছলে বলেছিল ‘এখানে ব্যবসা করতে হলে মাসে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে’। এ নিয়ে এক দুই কথায় নিপুনের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা থেকে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় আশপাশের ব্যবসায়ী আমিনুল সহ অন্যান্যরাও বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেন। এরই জের ধরে ঘটনার দিন রাতে শহরের শেখপাড়াস্থ একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়। আবার ওইদিন রাতে তরমুজ বিক্রেতা আমিনুল ও বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী রুবেলকে ফেরিঘাট রোডে কুপিয়ে জখম করে। পরদিন টাউন মাঠের সামনে নিপুনকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। অনেকেই রাজনৈতিক ইস্যু দাবি করলেও আমার জানামতে এটি রাজনৈতিক ইস্যু না। নিজেদের মধ্যে ইয়ারকির ছলে ছোট থেকে বড় ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
এর আগে, এ ঘটনার জেরে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহরের বড়বাজার এলাকার ফেরিঘাট রোডে তরমুজ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম ও বৈদ্যুতিক মিস্ত্রী রুবেলকে দুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এরমধ্যে আমিনুল ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আহত নিপুন সাহা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুনের গাড়িচালক কৃষ্ণ সাহার ছেলে। বর্তমানে পরিবারসহ টাউন মাঠের পাশে একটি ভাড়া থাকেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাবলু রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, আমি ডিউটিরত অবস্থায় দেখতে পাই টাউন মাঠের সামনে একজনকে কোপাচ্ছে কয়েকজন যুবক। পরে তাদেরকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর আহত অবস্থায় নিপুন সাহা আমাকে বলেছিলেন, জেবু ও তার সহযোগীরা তাকে কুপিয়েছে।

এদিকে, ঘটনার পর অর্থাৎ খোদ ডিউটিরত পুলিশের সামনেই নিপুন সাহাকে এলোপাতাড়ি কোপানোর ঘটনায় শহরজুড়ে থমথমে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে না গেলে হয়তো নিপুনের বড় কোন কিছু হয়ে যেতো বলে ধারণা প্রত্যক্ষদর্শীদের। এরপরই শহরে পুলিশের টহল জোরদার করে। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সামনে এসআই বাবলুসহ তার সঙ্গীয় ফোর্স ডিউটিরত অবস্থায় ছিলেন। এ সময় তাদের অদূরেই টাউন মাঠের সামনে নিপুনকে কোপাতে থাকে কয়েকজন যুবক। বিষয়টি প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে কেউ একজন ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদের নজরে দিলে সাথে সাথে এসআই বাবলু বীরের বেশে চিল্লাতে চিল্লাতে দৌড়ে যান এবং তাকে দেখে অভিযুক্তরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলেও ধরতে ব্যর্থ হয়। সেখান থেকে পুলিশ সদস্যদের সহযোগীতায় আহত নিপুনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত শুক্রবারের ঘটনার দিন আহত আমিরুল ইসলাম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেছিলেন, শুক্রবার তরমুজ বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে ক্রেতার সঙ্গে বাকবিতন্ডা হয়। রাতে মোটরসাইকেলযোগে আমিও রুবেল ফেরিঘাট রোড হয়ে বড়বাজারে যাওয়ার পথে সেই ক্রেতাসহ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাদের উপর হামলা চালাই। পরে দুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। তবে অভিযুক্তদের নাম-পরিচয় না জানলেও মুখ পরিচিত তারা। গত শুক্রবারের ঘটনার দিন আহত রুবেল হোসেন রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেছিলেন, আমি মোটরসাইকেলের পিছনে বসে ছিলাম। ওরা পিছন থেকে হামলা চালাই। আমি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গেলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এতে এ ঘটনার কিছুই আমি জানিনা। আমিরুলের সঙ্গে ছিলাম এ জন্যে আমাকেও কুপিয়ে জখম করেছে তারা।
গত শুক্রবারের ঘটনার দিন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আল ইমরান জুয়েল রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেছিলেন, দুজনের শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারাল অস্ত্রের আঘাতের ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে রুবেলকে ভর্তি করা হয়েছে এবং আমিরুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী বা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

গতকাল শনিবার রাতের ঘটনায় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোর্শেদ আলম রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে বলেন, ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিপুনের মাথায় গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

রোববার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান রেডিও চুয়াডাঙ্গাকে মুঠোফোনে বলেন, এটি রাজনৈতিক কোন ইস্যু না। তরমুজ লালের পরিবর্তে সাদা হওয়া নিয়ে বিক্রেতার সঙ্গে দ্বন্ধ হয়। বিষয়টি সেখানেই মিমাংশা হলেও পাশের তরমুজ বিক্রেতা নিপুন সহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা হাসি-ঠাট্টা করায় আবারো দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে মারামারির ঘটনা ঘটছে। প্রথম দিন বিক্রেতা আমিনুল সহ দুজনকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। আবার এরই জের ধরে পরদিন অর্থাৎ গতকাল শনিবার একই পক্ষের লোকজন নিপুন সাহাকে কুপিয়েছে। রোববার বেলা ২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা বা অভিযোগ করেনি। তবে অভিযুক্তদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More