পুলিশকে মুচলেকা দিয়ে করতে হলো দর্শনা কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণসভা

শান্ত পরিবেশে কথার তীরে ধবল ধোলাই করলেন একে ওপরকে : ভোট ৮ নয় ১৬ ফেব্রুয়ারি

দর্শনা অফিস: স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙলো কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনের এবারের সাধারণসভায়। চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশি অনুমোদন পেতে বেশ বেক পেতে হয়েছে নেতৃবৃন্দদের। কেরুজ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে দীর্ঘ বৈঠক শেষে রাত দুটোর দিকে ৬জন সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী দর্শনা থানা পুলিশকে লিখিত মুচলেখা দিয়ে পেলেন সভার অনুমতি। অবশেষে কাক্সিক্ষত সাধারণসভা শান্ত পরিবেশে হলেও কোনো প্রকার হৈ হট্টগোল ছাড়ায় সভ্যাতার মাধ্যমে একে ওপরকে কথার তীরে ধবল ধোলাই করেছেন। এবারের সাধারণসভা দীর্ঘ হয়নি, হয়নি রাত গভীরও। পুলিশের দেয়া সময় গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত থাকলেও সংগঠনগুলো থেকে র‌্যালি প্রদর্শন করে বের হতে হতে সভাস্থলে পৌঁছুতে সময় লেগেছে দুপুর ১২টা। ফলে ওই সময় কেরুজ জামে মসজিদের পেশইমাম মাও. শামসুজ্জোহা। শুরু হয় আলোচনাপর্ব। সময় সংক্ষিপ্ততার কারণে নাম ও পদের জানান দিয়ে ভোট প্রার্থনা করেন সহসভাপতি, যুগ্মসম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, ক্যাশিয়ার, দপ্তর সম্পাদক ও সদস্য পদপ্রার্থীরা। স্বাগত বক্তব্যসহ দ্বি-বার্ষিক প্রতিবেদন পাঠ করেন, ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ। সভাপতিত্ব করেন, বর্তমান পরিষদের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ। প্রধান অতিথি ছিলেন, কুষ্টিয়া শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক তৈফিক হোসেন। আলোচনা করেন কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৌমিক হাসান রূপম ও জয়নাল আবেদীন নফর। আরও বক্তব্য দেন, সহসভাপতি মফিজুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, একই এসএম কবির, পদপ্রার্থী সাংবাদিক ইয়াসির আরাফাত মিলন, বর্তমান যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, এ পদপ্রার্থী সাবেক যুগ্মসম্পাদক খবির উদ্দিন, বাবুল আক্তার, ইসমাইল হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী ইকবাল হোসেন ও মহিদুল ইসলাম। অর্থসম্পাদক (কোষাধ্যক্ষ) আবু সাঈদ, রেজানুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক সালাউদ্দিন সনেট, প্রচার সম্পাদক প্রার্থী রবিউল ইসলাম সুমন, মিজানুর রহমান, ইউনিয়নের যুগ্মসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ও অফিস সহকারী আশরাফুল আলমের উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, সদস্য প্রার্থী হারেজুল ইসলাম, সাহেব আলী শিকদার, সাইফুদ্দিন সুমন, মাইদুদ্দিন,আবু সিদ্দিক, আমিনুল ইসলাম, বাবর আলী, আব্বাস আলী, নুর ইসলাম, আজাদ হোসেন, মজিবর রহমান প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যের ফিরোজ আহমেদ সবুজ নির্বাচনের দিন পরিবর্তন ঘোষণা করেন। ১৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বর্তমান পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৮ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের। সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাধারণসভা ঘোষণা দেয়া হয় আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময় ওই বৈঠকে গঠিত ৫ সদস্যের তালিকা প্রকাশ করে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন মিলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুছ ছাত্তার, সদস্য সচিব প্রকৌশলী (পরিবহন) আবু সাঈদ। সদস্যরা হলেন, উপ-ব্যবস্থাপক (পার্সনাল) আল আমিন, উপ-ব্যবস্থাপক (হিসাব) শেখ জাবেদ হাসান ও সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ডিস্টিলারি, জহির উদ্দিন। এবারের নির্বাচনে চিনিকলের হিসাব, প্রশাসন ভা-ার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুৎ ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০ জন। তবে এ ভোটার সংখ্যা বাড়বে বা কমতেও পারে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে দর্শনায় বিএনপির দুগ্রুপের দ্বন্দ্বে পাল্টাপাল্টি ৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে গোটা শহরে। পরিস্থিতি অনুকূলে নয়, যেকোনো সময় বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে এমনই তথ্য ছিলো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে। সে তথ্যের ভিত্তিতে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদ তিতুমীর চলমান ঝুকিপূর্ণ পেক্ষাপট উল্লেখ করে গত ২৪ জানুয়ারি কেরুজ এডিএমকে চিঠি দিয়ে ২৫ জানুয়ারির সাধারণসভা বন্ধ করার পরামর্শ দেন।
এদিকে শ্রমিক সংগঠনগুলো সাধারণসভার সকল প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে ছিলো। থানা পুলিশের নিষেধাজ্ঞার চিঠিতে হতাশ হয়ে পড়েন সকলে। জরুরিভাবে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ডাকে ওইদিন তার দপ্তরে বৈঠকে বসেন শ্রমিক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দদের নিয়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬ জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কোন প্রকার সহিংসতা হবে না, যে প্রার্থীর সমর্থক অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করবে সে দ্বায়ভার ওই প্রার্থীকে নিতে হবে ও সীমিত সংখ্যক কর্মী সমর্থকের উপস্থিতিতে সভা করা হবে মর্মে দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জকে লিখিত দেন। রাত ১টার দিকে থানায় লিখিত অঙ্গীকার দিলে রাত দুটো নাগাদ সাধারণসভা অনুমতি পান নেতৃবৃন্দ। ফলে মিলের পরিবহন বিভাগের টিনসেটে সীমিত সংখ্যক কর্মী সমর্থকের উপস্থিতিতে নির্ধারিত সময় দুপুর ২টার স্থলে সাড়ে ৩টার দিকে শেষ হয়েছে। যা স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙলো এবারের সাধারণসভা। এ নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে শতাধিক প্রার্থী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। শেষ অবধি দেখার অপেক্ষা কতজন প্রার্থী মাঠে টিকে থাকে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More