নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীর
আলমডাঙ্গার জহুরুলনগরে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবারও ষাটোর্ধ্ব নারীকে পিটিয়ে জখম
থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ : ইউনিয়নজুড়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার উপজেলার নাগদাহ ও আইলহাঁস ইউনিয়নে ভোটের উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যেই ভয়-আতঙ্কের ছাপ পড়েছে সাধারণ ভোটারদের চোখে-মুখে। বিশেষ করে নাগদাহ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হায়াত আলীসহ তার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলা-হুমকি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পুরুষ ও নারী কর্মী ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চশমা প্রতীকের প্রার্থী এজাজ ইমতিয়াজ জোয়ার্দ্দার বিপুল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গতকাল রোববার বিকেলে নাগদাহ গ্রামে নিজবাড়িতে শত শত কর্মী-সমর্থক সাথে নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। দিকে দুপক্ষই থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইউনিয়নজুড়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এজাজ ইমতিয়াজ বিপুল উল্লে¬খ করেন, আসন্ন নাগদাহ ইউপি নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী। তার নির্বাচনী প্রতীক চশমা। নির্বাচনে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখে নৌকার প্রার্থী হায়াত আলী ও তার সমর্থকেরা বিভিন্ন হুমকি-ধামকিসহ তার (স্বতন্ত্র প্রার্থী) নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করছে। গত ১১ মার্চ শনিবার রাত আনুমানিক ৯টার সময় নৌকার সমর্থকেরা দা, লোহার রড ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অত্র ইউনিয়নের জহুরুলনগর গ্রামে তার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালায়। এ সময় জহুরুলনগর গ্রামের রিন্টু, সহিদুল ও মোবারেক নামের তার তিন সমর্থককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে এবং নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করে। এছাড়াও আরেক সমর্থক বুদোইকেও মারধর করে জখম করে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও উল্লে¬খ করেন, জহুরুলনগরে সংঘটিত ঘটনার পর ওই রাতে নৌকার সমর্থকেরা আরও সংগঠিত হয়ে ইউনিয়নে তার বিভিন্ন নির্বাচনী অফিসে হামলা চালায়। এ ঘটনার পর নৌকা প্রার্থীর সমর্থকদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জহুরুলনগর গ্রামের তার (স্বতন্ত্র প্রার্থী) সমর্থকেরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। তারা বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নাগদাহ ইউপি নির্বাচনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি আশঙ্কা প্রকাশ করছি। তিনি আরও বলেন, আজও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হায়াত আলীর কর্মীরা আমার কর্মীর মা ষাটোর্ধ্ব এক নারীকে মারধর করেছে। জহুরুলনগরের লালনের স্ত্রী, ওই নারী এখন হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন। প্রার্থী বিপুল সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন সংশ্লি¬ষ্ট ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি এবং এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান প্রার্থী এজাজ ইমতিয়াজ বিপুলের পিতা বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগের নেতা নজরুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার সোনা মিয়া, খাজাউদ্দিন, মানিক মিয়া, গোলাম মোস্তফা, বুলবুল জোয়ার্দ্দার, বাক্কা জোয়ার্দ্দার, পিন্টু ম-ল, মজিবর রহমান, আবু বকর সিদ্দিক ও সুরুজ হোসেনসহ শত শত গ্রামবাসী উপস্থিত ছিল।
এদিকে, বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে নাগদাহ ইউনিয়ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হায়াত আলীর সাথে কথা বলার বার বার ফোন করা হয়, এমনকি তার গ্রামের বাড়ি ও ইউনিয়নের নৌকা মার্কার বিভিন্ন অফিসে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
হায়াত আলীর পক্ষে তার কর্মী সমর্থকরা বলেন, আমরা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী বিপুল মিয়ার লোকজন উল্টো আমাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এছাড়া শনিবার রাতে জহুরুলনগরে বিপুলের লোকজন আমাদের আটজনকে মারধর করেছে। যারমধ্যে একজনকে রাজশাহী মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে। তবে বক্তব্য নেয়ার সময় হায়াত আলীর কর্মী-সমর্থকরা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হওয়ায় নাম দেয়া হলো না।
অন্যদিকে, আইলহাঁস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ একেবারে নিরুত্তাপ দেখা গেছে। আইলহাঁস ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর দাবি, ভোট তারা ইচ্ছা করলেও জমাতে পারছেন না। সাধারণ নেতাকর্মীরা ভোটের ব্যাপারে অতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বক্তব্য প্রদানকালে তারাও এ প্রতিবেদকের কাছে নাম না প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছেন।
আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাতে নাগদাহ ইউনিয়নে নির্বাচন নিয়ে মারামারির ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হায়াত আলী ছেলে মোস্তাফিজু খোকন বাদী হয়ে ২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। অপরদিকে, বিপুলের পক্ষেও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ এবং অবাধ করতে রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশনা মতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশও নাগদাহ ইউনিয়নজুড়ে মোতায়েন রয়েছে।
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। মোট ভোটার ১২ হাজার ৪৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৩১০ জন এবং মহিলা ভোটার ৬ হাজার ১৪৮ জন। নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৯টি। মোট ভোটার ১৩ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৭৮১ জন এবং মহিলা ভোটার ৬ হাজার ৫৬৭ জন। দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ১২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নগদাহ ইউনিয়ন ৯জন প্রার্থী ও আইলহাঁস ইাউনিয়নে ৩ প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও ইউনিয়ন দুটিতে সংরক্ষিত আসনের মহিলা ২৩ জন ও সাধারণ সদস্য ৫১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।