নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন, চুয়াডাঙ্গার ৮টি ইউপিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ আজ
কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম : অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ৬ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর ও আলমডাঙ্গা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। জীবননগর উপজেলার উথলী, কেডিকে, মনোহরপুর, বাঁকা, হাসাদাহ ও রায়পুর এবং আলমডাঙ্গার নাগদাহ ও আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট হবে। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তারেক জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন নির্বাচনী কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ১৮টি কেন্দ্রে এবং জীবননগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫৪টি ভোটকেন্দ্রের ২৬১টি ভোটকক্ষে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট চলবে। চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ছিলো প্রতিটি ইউনিয়নের হাট-বাজার থেকে শুরু করে এলাকার অলিগলি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া ও কর্মীদের ওপর হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ হবে কী-না তা নিয়ে অনেক প্রার্থী শঙ্কা প্রকাশ করলেও প্রশাসনের পক্ষে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চুয়াডাঙ্গায় এসেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান। তিনি আজ অনুষ্ঠিত জীবননগর ইউনিয়নসমূহের ভোট কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করবেন।
জেলা সদর নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার কামরুল হাসান বলেন, নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি স¤পন্ন করা হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে একটি ভালো নির্বাচন দেয়া সম্ভব হবে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ৬ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ৬জন ম্যাজিস্ট্রেট টিম ও ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন থাকবে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, নানা শঙ্কার মধ্য দিয়ে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আজ। মনোহরপুর, কেডিকে, উথলী, রায়পুর, হাসাদাহ ও বাঁকা ইউপির ভোট গ্রহণ দেখতে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান আজ জীবননগরে আসছেন। তিনি উপজেলার ৬টি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ইভিএমএর মাধ্যমে ৬৪টি কেন্দ্রে এ ভোট গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে ১০টি অস্থায়ী কেন্দ্র রয়েছে। ৬৪টি ভোট কেন্দ্রে ভোটকক্ষের সংখ্যা থাকছে ২৬৪টি। গতকাল বুধবার ১৬৪টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম প্রেরণ করা হয়েছে। ৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে ২৮ জন, সংরক্ষিত ১৮টি মহিলা আসনে ৫৫ জন ও ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা হচ্ছেন মনোহরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সোহরাব হোসেন খান (নৌকা), স্বতন্ত্র বিএনপির কামরুজ্জামান (আনারস) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আবু নাঈম (হাতপাখা)। কেডিকে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের খায়রুল বাসার শিপলু (নৌকা), স্বতন্ত্র বিএনপির তানভীর হোসেন রাজিব (আনারস) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মহিবুল হক সবদুল (মোটরসাইকেল)। মহিবুল হক সবদুল সম্প্রতি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। উথলী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আব্দুল হান্নান (নৌকা), স্বতন্ত্র বিএনপির আবুল কালাম আজাদ (মোটরসাইকেল), স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আবজালুর রহমান ধীরু (আনারস), স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আব্বস উদ্দীন জোয়ার্দ্দার (চশমা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বিদ্রোহী শাখাওয়াৎ হোসেন (ঘোড়া)। রায়পুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের তাহাজ্জত হোসেন (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আব্দুর রশিদ শাহ্ (ঘোড়া). স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল হান্নান (মোটরসাইকেল), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সাজ্জাদ বিশ^াস (চশমা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সাজ্জাদ হোসেন (আনারস)। হাসাদাহ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রবিউল ইসলাম বিশ^াস (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর মুহাম্মদ ইসরাইল হুসাইন (মোটরসাইকেল), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী সোহরাফ বিশ^াস (চশমা), বিএনপির সামছুল আলম (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বাবুল আক্তার টলো (ঘোড়া) ও জাতীয় পার্টির মতিয়ার রহমান (টেবিল ফ্যান) এবং বাঁকা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের আব্দুল কাদের প্রধান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর হাফিজুর রহমান (মোটরসাইকেল), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির আবুল কাশেম মুন্সী (ঘোড়া), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শাহাবুদ্দীন মালিতা (চশমা), জাতীয় পার্টির তরিকুল ইসলাম (লাঙ্গল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বিদ্রোহী রাজা আহাম্মেদ (আনারস)। ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার মেজর আহাম্মেদ জানিয়েছেন।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ও আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ দুটি ইউনিয়নে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে থানা চত্বরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনের সরঞ্জাম। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রশাসনিকভাবে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডিবি পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনছার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা থাকবেন নিরাপত্তায় নিয়োজিত।
নির্বাচন কর্মকর্তা এমজি মোস্তফা ফেরদৌস জানান, প্রতিটা কেন্দ্রেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, দুটি ইউনিয়নে ১৮টি কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন এসআই অথবা ১ জন এএসআইসহ ৯ জন পুলিশ সদস্য, ১৫ জন আনছার ব্যাটালিয়ন নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে এসআই ও এএসাই্ দুইজনই থাকবেন। এছাড়া স্টাকিং ফোর্স, একাধিক মোবাইল টিম নিয়োজিত থাকবে।
এদিকে আলমডাঙ্গার নাগদাহ ও আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২৩ অবাধ-নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে গতকাল থানা প্রাঙ্গণে ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলমডাঙ্গা থানার (ওসি) সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ব্রিফিং প্যারেডে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তারেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ওসি শফিকুর রহমান, আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আব্দুল আলিম, দামুড়হুদা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত (অপারেশন) একরামুল হোসাইন, পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাসেম, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আজিজুল হাকিম প্রমুখ। ব্রিফিংয়ে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা পালনের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, এ দুটি ইউনিয়নে মোট ১২ চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নাগদাহ ইউনিয়নে ৯ জন ও আইলহাস ইউনিয়নে ৩ জন চেয়ারম্যান। নগদাহ ইউনিয়নে ৯ প্রার্থীর মধ্যে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. হায়াত আলী (নৌকা প্রতিক), স্বতন্ত্র প্রার্থী এজাজ ইমতিয়াজ (চশমা প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী দারুস সালাম (মটর সাইকেল প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর হোসেন (রজনীগন্ধা প্রতীকে), স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুল্লাহ (আনারস প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান (ঘোড়া প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ালুজ্জামান (আটোরিক্সা প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী মিশর আলী (টেলিফোন প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রভাষক আবুল হাসনাত (টেবিল ফ্যান)। আইলহাস ইউনিয়নে ৩ প্রার্থীর মধ্যে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী, মো. জাহিদুল ইসলাম বাদল (নৌকা প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিল্লাল গনি (আনারস প্রতীক) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনাজ উদ্দিন বিশ্বাস (চশমা প্রতীক )। অন্যদিকে উপজেলার ২টি ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের মহিলা ২৩ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৫১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।