এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও টগরসহ বিভিন্ন মহলে শোক
দর্শনা অফিস: নিজের লিভার দিয়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারলেন না স্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে মারা গেছেন তার স্বামী মতিয়ার রহমান (৫৮) (ইন্নালিল্লাহি……ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। মতিয়ার রহমান চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌরসভার মেয়র। তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মেয়র মতিয়ার রহমানের মৃত্যুতে তার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লিভার ড্যামেজ রোগে ভূগছিলেন। গত কয়েক বছর যাবত ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েও তিনি কোনো সুফল পাননি। তার লিভারের প্রায় পুরোটাই মৃতপ্রায় কোষে পরিণত হয়েছিলো। অনেক চেষ্টা করেও স্বামীকে বাঁচাতে পারেননি মেয়রের স্ত্রী। স্বামীকে নিজের লিভারের ৩০ শতাংশ দান করেছিলেন। স্বামীর লিভারের অংশ বিশেষ ফেলে দিয়ে তার দান করা অংশ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিলো দেড়মাস আগে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে। কিন্তু অপারেশনের পর থেকে তিনি আশঙ্কাজনক ও অচেতন অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে মঙ্গলবার তিনি মারা গেলেন। দর্শনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. রবিউল হক সুমন বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। প্যানেল মেয়র আরও বলেন, মতিয়ার রহমান লিভার সিরোসিসের রোগী ছিলেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার লিভার প্রতিস্থাপন করতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করেও মেলাতে পারেননি। পরে তার স্ত্রী রোজী রহমানের সঙ্গে শতভাগ মিলে যায়। তিনি আরও বলেন, গত ১০ নভেম্বর বিমানযোগে ভারতের দিল্লি যান মেয়র মতিয়ার রহমান ও স্ত্রী রোজিনা রহমান রোজীসহ পরিবারের কয়েকজন। ওইদিনই দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মেয়র দম্পতিকে। ২৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসক নীরব গোয়েলের তত্ত্বাবধানে রোজী রহমানের সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিভার নিয়ে সেইদিনই ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেয়র মতিয়ার রহমানের দেহে প্রতিস্থাপন করেন। প্রায় ১৭ ঘন্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচার হলেও সুস্থ হননি মতিয়ার রহমান। সেই থেকেই ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন মেয়র ও তার স্ত্রী। রাখা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণে। অস্ত্রোপচারের দীর্ঘ ৩৩ দিনের মাথায় গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে ইন্তেকাল করেন মেয়র মতিয়ার রহমান।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মঞ্জু বলেন, মঙ্গলবার ভোরে ভারতের দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি মারা যান। আগামীকাল বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় বাংলাদেশে এসে লাশ পৌঁছুবে। এদিকে, মেয়রের মৃত্যুতে দর্শনা পৌর পরিষদসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে তিনদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে।
মতিয়ার রহমান ১৯৯৯ সালে সর্বপ্রথম দর্শনা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে ২০০৫, ২০১১ ও সবশেষ ২০২১ সালে একই পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। দর্শনা থানা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। এছাড়া দর্শনাকে উপজেলা করার আন্দোলনও তিনি শুরু করেছিলেন। এর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে ভারতে চিকিৎসা নিতে যান। সব চেষ্টার পরও বাঁচানো গেলো না। স্থানীয়রা জানায়, ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত সদালাপী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ছিলেন মেয়র মতিয়ার রহমান। চলতি মেয়াদসহ তিনি মোট চারবার ওই পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার বাবা মরহুম শামসুল ইসলাম তৎকালীন দর্শনা ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মেয়র মতিয়ার রহমানের স্ত্রী ও ২ কন্যা সন্তান রয়েছেন। মরহুম মতিয়ার রহমান পারিবারিকভাবে এলাকায় অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের জায়গায় অধিষ্ঠিত। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় আর্থিক সহায়তা দেয়াসহ সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে মতিয়ার রহমানের মৃত্যুর সংবাদ ভাইরালে পরিণত হয়। তার মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. আলী আজগার টগর, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলি মুনছুর বাবু, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি সহিদুল ইসলাম, দর্শনা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব, পৌর আ.লীগের যুগ্মসম্পাদক গোলাম ফারুক আরিফ, ইউপি চেয়ারম্যান এসএএম জাকারিয়া আলম, দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আ. হান্নান ছোট, সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী, দর্শনা পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আসলাম আলী তোতাসহ আ.লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান ও দর্শনা পৌর প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমনসহ পৌর পরিষদ।
এমপি ছেলুন জোয়ার্দ্দার এক শোক বার্তায় বলেন, মতিয়ার রহমান ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক। দর্শনা পৌরসভার বার বার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে এলাকার উন্নয়নে অনেক অবদান রেখেছেন তিনি। তার পিতা মরহুম শামসুল ইসলাম ছিলেন দর্শনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ দুঃসময়ের মানুষ। মরহুম মতিয়ার রহমানের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা পূরণ হবার নয়। দুঃসময়ে দলের প্রতি তার যে ত্যাগ চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ তা চিরদিন স্মরণ করবে। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও মতিয়ার রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন হেলা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদেরসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। মরহুম মতিয়ার রহমানের নামাজে জানাজা ও দাফনকার্যে প্রতিটি উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতকর্মীদেরকে শরিক হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।
এদিকে, দর্শনা পৌরসভার চারবার নির্বাচিত জনপ্রিয় মেয়র মতিয়ার রহমানের অকালমৃত্যুতে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড সৈয়দ মজনুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড জাহাঙ্গীর আলম এক শোকবার্তায় তার কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে গভীর শোক প্রকাশ এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিসমবেদনা জ্ঞাপন করেন।