জীবননগর ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে নিখোঁজের চারদিন পর আবু সাঈদ নামের এক ব্যবসায়ীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জীবননগর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতালপাড়ায় নির্মাণাধীন একটি ৬তলা ভবনের লিফটের চ্যানেলের ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আবু সাঈদ (২৫) পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাইস্কুল পাড়ার রইচ উদ্দিনের ছেলে। তিনি জীবননগর বাজারে ‘ইয়ান সু’ নামের একটি জুতার দোকানের মালিক ছিলেন। ২ এপ্রিল ভোর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। নির্মাণাধীন বাড়িটির মালিক ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার শ্যামপুর নয়াপাড়া গ্রামের প্রবাসী কবির হোসেন।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালপাড়ার নির্মাণাধীন ওই ভবনে কাজ করতে গিয়ে দুর্গন্ধ পান শ্রমিকেরা। উৎস খুঁজতে গিয়ে তারা দেখেন, নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের লিফটের চ্যানেলের নিচে পানিতে একটি লাশ ভাসছে। বিষয়টি দ্রুত এলাকাবাসীর মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দুপুরে জীবননগর থানা-পুলিশের একটি দল ওই তরুণের লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
নিহতের বড় ভাই হাসান জানান, সাঈদ রোববার ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে যায় মসজিদে। ওইদিন ফজরের নামাজ সম্ভবত জীবননগর বাসস্ট্যান্ড মসজিদে পড়েছিলো। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। পরে গত ৩ এপ্রিল ৪টায় আমার ছোট ভাইয়ের ফোন থেকে একটা কল আসে। ওই সময় মোবাইলফোনের অপরপ্রান্ত থেকে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয় আমি আবু সাঈদের ভাই কি না। তখন আমি উত্তরে বলি জ্বি, আমি ওর ভাই। তখন মোবাইলফোনের অপরপ্রান্ত থেকে আমাকে বলা হয় কল ব্যাক করতে। আমি তার কথামতো কল ব্যাক করি। তখন আমার কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করে সে বলে আপনার নিখোঁজ ভাইয়ের লোকেশন জানাবো। তখন আমি আমার ভাইয়ের ছবি পাঠাতে অথবা মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দিতে বলি। বিষয়টি তখনই পুলিশকে জানায়। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে জানতে পারি আমার ছোট ভাইয়ের লাশ পাওয়া গেছে।
আবু সাঈদের পিতা রইচ উদ্দীন জানান, তার ছেলে আবু সাঈদ ‘ইয়ান সু’ নামে জীবননগর বাজারে জুতার দোকান দিয়ে ব্যবসা করছিলো। রোববার রাতে সেহরি খাওয়ার পর ভোর ৫টার দিকে নামাজ আদায়ের জন্য সে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয়। এরপর গত ৪ দিনেও সে আর বাড়ি ফেরেনি। এ ঘটনায় গত ৩ এপ্রিল জীবননগর থানায় একটি জিডি করা হয়। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার সকালে জীবননগর বসতিপাড়ায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবনে কাজ করতে এলে শ্রমিকরা দুর্গন্ধ পেয়ে তল্লাশি শুরু করেন এবং নির্মাণাধীন লিফটের ভেতর পানিতে আবু সাঈদের লাশ ভেসে থাকতে দেখেন। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিফটের নিচের অংশ ভেঙে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে।
জীবননগর থানার ওসি মো. নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, এ ব্যাপারে জীবননগর থানায় মামলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আবু সাঈদের হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনসহ ঘাতকদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
সার্কেল এসপি (জীবননগর থানা) আনিসুজ্জামান বলেন, ৩ এপ্রিল ব্যবসায়ী আবু সাঈদের পরিবার থেকে একটি মিসিং ডায়েরি করা হয় থানায়। এরপর থেকে আমরা চেষ্টায় ছিলাম তাকে জীবিত উদ্ধার করতে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অপহরণের পরই তাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন ও খুনিদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। আশা করি খুব শিগগিরই সব ধরা পড়বে।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।