নগদ টাকা লুটের উদ্দেশ্যে বৃদ্ধ দম্পতিকে পরিকল্পিত হত্যা
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন : গ্রেফতার ৪
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার ব্যবসায়ী বৃদ্ধ দম্পতি নজির উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফরিদা খাতুন হত্যার ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। ওই ঘটনায় ৪ যুবককে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল। মূলত নগদ টাকা লুট করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবভাবে ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে হত্যা করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মলেনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আব্দুল¬াহ আল মামুন। তিনি জানান, বৃদ্ধ দম্পতি হত্যাকা-ের ঘটনার পর থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সিআইডি, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেলসহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম ও ঝিনাইদহ পিবিআই পুলিশের একটি টিম মাঠে কাজ করেছে। দীর্ঘ ৫ দিন শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর গত বুধবার সকালে সর্বোচ্চ তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় আলমডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকা-ের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন আলমডাঙ্গা উপজেলার আসাননগর গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে হত্যাকা-ের মূলহোতা শাহাবুল হক (২৪), একই গ্রামের পিন্টু রহমানের ছেলে রাজীব হোসেন (২৫), মাসুদ আলীর ছেলে বিদ্যুত আলী (২৩) ও তাজ উদ্দিনের ছেলে শাকিল হোসেন (২১)। ওই হত্যাকা-ে নিহত নজির উদ্দিনের ট্রলি ড্রাইভার শাহাবুল হকসহ অন্য আসামিরা অংশ নেয়। গ্রেফতারের পর ওই চার আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নিহত নজির উদ্দিনের ব্যবহৃত নোকিয়া ২৩০ মডেলের একটি মোবাইল ফোন, পানবরজে পুতে রাখা নিহত ফরিদার হ্যান্ডব্যাগ ও নজির উদ্দিনের কালো অফিসিয়াল ব্যাগ, হত্যার সময় পরিধানকৃত আসামিদের রক্তমাখা জামা কাপড় উদ্ধার করা হয়। এছাড়া আসামি রাজীবের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ও বিদ্যুতের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। শাকিলের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ফোনটি।
পুলিশ সুপার জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নজির ও তার স্ত্রীকে খুন করা হয়। হত্যাকা-ে অংশ নেয়া শাহাবুল ছিলেন নজির উদ্দিনের পূর্বপরিচিত। আসামি শাহাবুল ইতোপূর্বে নিহত নজির উদ্দিনের ট্রলির ড্রাইভার ছিলেন। পূর্বসূত্রে পরিচিত হওয়ায় ঘটনার সকালে নজির উদ্দিনের কাছে বালু ক্রয়ের প্রস্তাব প্রদান করে। পরবর্তীতে একই দিন রাত ৮টার দিকে বাড়ীর সামনে গিয়ে নজির উদ্দিনকে ডাকতে থাকে আসামিরা। বাড়ীর প্রধান ফটক খুলে দিলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। পরে নজির উদ্দিন ও তার স্ত্রীকে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা দাবি করে গ্রেফতারকৃতরা। এসময় তাদের মধ্যে বাগবিত-া শুরু হয়। এক পর্যায়ে নজির উদ্দিনকে শৌচাগারের ভেতরে হাত-মুখ বেঁধে শ্বাসরোধ ও গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এবং তার স্ত্রী ফরিদা খাতুনকে ঘরের মেঝেতে ফেলে গলায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে তারা মারা যান। হত্যাকা-ের পর নজির উদ্দিনের ঘর থেকে টাকা, মোবাইল ফোন, ফরিদা খাতুনের ব্যবহৃত কালো ব্যাগের মধ্যে নিয়ে বাড়ির বাইরের গেটে তালা দিয়ে পলিয়ে যান আসামিরা।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, দুপুরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। হত্যাকা-ের ঘটনার আরও তথ্য উদঘাটন করতে আসামিদের রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। রিমান্ডে নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা যাবে। এছাড়া ঘটনার সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি-না তাও জানা যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আনিসুজ্জামান লালন, আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আলমগীর হোসেনসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার পুরাতন বাজারপাড়ায় নিজ বাড়ি থেকে হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় ষাটোর্ধ্ব দম্পতি নজির উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফরিদা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পরদিন নিহত নজির উদ্দিন-ফরিদা খাতুনের একমাত্র মেয়ে ডালিয়ারা পারভীন শিলা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে একটি মামলা দায়ের করেন।