মেডিকেল কলেজে ভর্তিযুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার ১৮জন মেধাবী শিক্ষার্থীর কৃতিত্বের স্বাক্ষর
নওরিন সুলতানা শ্যামার সাফল্যে গর্বিত শিক্ষানুরাগীমহল
আব্দুস সালাম: মেডিকেল কলেজে এবার চুয়াডাঙ্গার ১৮জন মেধা তালিকায় ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে একজন। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ৪ হাজার ৩শ ৫০টি আসনের বিপরীতে আবেদক ছিলো ১ লাখ ২২ হাজার ৮শ ৭৪ জন। প্রাপ্ত তথ্যমতে চুয়াডাঙ্গার ১৮জন শিক্ষার্থী কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। এর মধ্যে ৪৩তম হয়ে নওরিন সুলতানা শ্যামা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার মৃত রেজউল করিম রেজা ও মোছা. রশিদা খাতুনে মেজ মেয়ে।
নওরিন সুলতানা শ্যামা সারা দেশে সকল পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৩তম স্থান অধিকার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষানুরাগীদের দৃষ্টি কেড়েছে। পিতা রেজউল করিম রেজা ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি অফিসে কর্মরত অবস্থায় ২০০৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দু’বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে শ্যামা দ্বিতীয়। রেজাউল করিম রেজা চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ডিঙ্গেদহ খেঁজুরার মৃত মহিউদ্দীন জোয়ার্দ্দারের ছেলে। শ্যামার মা গৃহিণী। পিতার পেনশনের টাকাতেই চলে শ্যামা ও তার ছোট ভাইয়ের লেখাপড়া। বড় বোন বিবাহিতা হলেও তিনি মাস্টার্স অধ্যায়নরত। ছোটভাই ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্র। চমকে দেয়ার মতো ফলাফল করার মূলমন্ত্র কি? এ প্রশ্নের জবাবে শ্যামার স্পষ্ট জবাব, আল্লাহর রহমত। আম্মুর দোয়া। শিক্ষকদের চেষ্টা। নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম। কতো ঘণ্টা পড়তে? গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। পড়ার চাপ থাকলে ১৪-১৫ ঘণ্টাও পড়েছি। চুয়াডাঙ্গা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হই। পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করি।
চুয়াডাঙ্গার বাকি যে ১৭ জন মেধা তালিকায় ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে; তাদের মধ্যে সিনেমাহলপাড়া কাঠপট্টির মো. মঈন উদ্দীন ও মোছা. লিপি খাতুনের ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাদিক ২৭৪তম হয়েছে। সে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গা সুবলপুরের মো. রফিকুল ইসলাম ও মোছা. নাজমা খাতুনের ছেলে মো. আশরাফুল আলম জিহাদ ৩৩২তম হয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। চুয়াডাঙ্গা দৌলাতদিয়াড় ফায়ার সার্ভিসপাড়ার মো. শহর আলী ও মোছা. দিলরুবা ইয়াসমিনের ছেলে এসএম সাকিব মাহমুদ ইশান ৬৮২তম। মুগ্ধা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। জীবননগর উপজেলা বিআরডিবি অফিসের হিসাবরক্ষক মো. ইকবাল হোসেনের মেয়ে ফাহিমা তাবাচ্ছুম ইভা মেধা তালিকায় ৬৯৮তম হয়েছে। ময়মানসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। তার মায়ের নাম ছালমা আক্তার। চুয়াডাঙ্গা পুরাতন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়ার মো. রবিউল ইসলাম ও মোছা, শিরিন আক্তারের মেয়ে সুমাইয়া ইসলাম মহুয়া ৯৭৯তম হয়ে ঢাকার মুগ্ধা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। আলমডাঙ্গার বেলগাছি কেদারনগরের মো. জালাল উদ্দীন ও মোছা. হেলালী বেগমের ছেলে তাসফির আহম্মেদ শাওন রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। আলমডাঙ্গা ভালাইপুরের মো. নুর হোসেন ও মোছা. কাজলীর মেয়ে মোছা. শারমিন সিলেট মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। চুয়াডাঙ্গা কলেজপাড়ার মো. নুর ইসলাম ও সেলিনা খাতুনের মেয়ে নওশীন নূর তিথি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে খুলনা মেডিকেলে। আলমডাঙ্গা বাবুপাড়ার মো. আবুল কালাম আজাদ তরফদার ও নাহিদা আজাদের ছেলে তাসফিয়া আজাদ খুলনা মেডিকেল ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। দর্শনা কলেজপাড়ার মো. ইয়াছ নবী ও মোছা. আফরোজা খাতুনের ছেলে মো. আসিফ ইমন বগুড়া মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। আলমডাঙ্গার কালিদাসপুরের আসাননগরের খোরশেদ আলম বাবলু ও মোছা. ফাতেমা আক্তারের মেয়ে ওয়াদখুলী জান্নাতি ফরিদপুর মেডিকেল ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। জান্নাতির পিতা আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের অফিস সহায়ক। ওয়াদখুলী জান্নাতি এবার দ্বিতীয়বারের মতো মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ কারণে তার ৫ নম্বর কেটে নেয়ার পরও পাপ্ত স্কোর দাঁড়িয়েছে ২৭০। মেয়ের কৃতিত্বে তার পিতা খোরশেদ আলম বাবলুর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, আমি পিয়ন পদে চাকরি করি। সামান্য বেতনের চাকরি হলেও সন্তানকে চিকিৎসক করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি আমার মেয়ের জন্য সকলের নিকট দোয়া চাই। আলমডাঙ্গা থানাপাড়ার মহা. ফজলে রহমান ও মোছা. মাজেদা খাতুনের সন্তান মাহির আশহাব যশোর মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। চুয়াডাঙ্গা কলেজপাড়ার ডা. মো. আলী হোসেন ও রওশন জাহানের মেয়ে মায়িশা ফারজানা কুষ্টিয়া মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। চুয়াডাঙ্গা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নের ডিহি কৃষ্ণপুর রণগোহাইলের মো. শানুজ জোয়ার্দ্দার ও মোছা. আকলিমা বেগমের মেয়ে মোছা. জাকিয়া সুলতানা নুপুর রাঙ্গামাটি মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। চুয়াডাঙ্গা জোয়ার্দ্দারপাড়ার সেলিম উল্লাহ মাছুম ও জেবুন্নাহার নিপুনের ছেলে সাঈদ ছামীউল্লাহ পটুয়াখালী মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। জীবননগর হাসপাতালপাড়ার মো. আবুল কাশেম ও মোছা. শামসুন নাহারের মেয়ে মোছা. নাহিদা সুলতানা রাঙ্গামাটি মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। এছাড়াও দামুড়হুদা উপজেলার একজন ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে বলে জানা গেলেও তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। অপরদিকে অপেক্ষমাণ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা সিহাব তরফদার। সে ডাকবাংলা পোতাহাটির রেজাউল তরফদার ও শরিফা খাতুনের ছেলে।