দেড়যুগ পর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও পৌর আ.লীগের সম্মেলন আজ
সরোজগঞ্জ তেঁতুল শেখ কলেজ প্রাঙ্গণে সাজসাজ রব : নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ
স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ ১৮ বছর পর আওয়ামী লীগের চুয়াডাঙ্গা পৌর ও সদর উপজেলা কমিটির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১০টায় দুটি কমিটির সম্মেলনই সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ তেতুল শেখ কলেজমাঠে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের জন্য চিঠিপত্র, ডেলিগেট কার্ড ও কাউন্সিলর কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। দাওয়াতপত্রে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত তিনি উপস্থিত থাকছেন না। প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজ্জামেল হক। উদ্বোধক হিসেবে উদ্বোধন ঘোষণা করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেয়ার কথা আছে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম এমপি, অ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, অ্যাড. সফুরা খাতুন এমপি, অ্যাড. গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগর টগর। যৌথভাবে এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান নান্নু ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম জহুরুল ইসলাম। সকাল ১০টায় প্রথম অধিবেশন ও বেলা আড়াইটায় দ্বিতীয় অধিবেশন বা কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে কাউন্সিল অধিবেশনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৩৯২ জন কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ২৫৭ জন কাউন্সিলর অংশ নেবেন। এর মধ্যে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ জন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, প্রত্যেকটি ইউনিয়ন থেকে ৩১ জন এবং কোয়াপ্ট করে ১৫জন কাউন্সিলর। একইভাবে পৌর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ৬৭জন, ৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি থেকে ১৯ জন এবং ১৯ সদস্যকে কোয়াপ্ট করে কাউন্সিলর হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। গতকাল শনিবার নেতাকর্মীদের নিয়ে সম্মেলন মাঠ পরিদর্শন করেছেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এমএ রাজ্জাক খান রাজ, জেলা কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি হাজি আজিজুল হক, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আহাম্মেদ হাসানুজ্জামান মানিকসহ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, জেলাব্যাপী এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু কারা হবেন আওয়ামী লীগের এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের সভাপতি-সম্পাদক। ইতোমধ্যে শোনা যাচ্ছে বেশ কয়েকজন নেতার নাম। প্রস্তাবিত কমিটিতে থাকতে পারে সদর ও পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দের নামের সাথে নতুন নামও। আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই কমিটিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। আন্দোলন-সংগ্রামে থাকতে হবে প্রথম সারিতে। সেই কথা মাথায় রেখেই দলের দুঃসময়ের নেতা-কর্মীরা আসতে পারেন এই কমিটিতে। এই দুটি কমিটিকে ঘিরে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীরা নড়ে-চড়ে বসেছেন। গুঞ্জনে শোনা যাচ্ছে সদর ও পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে কারা সম্ভাব্য সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থী বা কাদের নাম প্রস্তাব হতে পারে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে বর্তমান সভাপতি আব্দুল মান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি, সাবেক কৃষক লীগ নেতা আজিজুল হক, ইটভাটা ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মোতালেবের নাম। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শোনা যাচ্ছে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গরিব রুহানী মাসুম, কুতুবপুর ইউপি চেয়ারম্যান হানাসানুজ্জামান মানিক ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদৎ হোসেনের নাম। পৌর আওয়ামী লীগে সভাপতি হিসেবে শোনা যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি জহুরুল ইসলাম, বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন হেলা ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দারের নাম। পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে সভাপতি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর নামও গুঞ্জনে শোনা যাচ্ছে। তার নামও প্রস্তাব করা হতে পারে। পৌর কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের, আব্দুর রশিদ ও হাবিল হোসেন জোয়ার্দ্দারের নাম শোনা যাচ্ছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, যে সকল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন যাবত পদ-পদবি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তাদেরকে নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। তবে, যারা হাইব্রিড ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি তাদেরকে কোনোভাবেই দলে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এছাড়া, জেলা পরিষদ নির্বাচনে যেসকল চেয়ারম্যান-মেম্বাররা একাধিক প্রার্থীর কাছে থেকে ভোটে নির্বাচিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তারাও পদ-পদবী থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। কারণ, তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য রয়েছে।
জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সদর পৌর এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হলেও তারপর থেকে ১৮ বছর এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। কয়েক বছর ধরেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিলো দ্রুতই হবে এই দুটি ইউনিটের সম্মেলন। তবে কয়েকবার তারিখ নির্ধারণ হলেও শেষ পর্যন্ত সে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। অবশেষে গত ১২ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজ্জামেল হক চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণায় এসে চূড়ান্তভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও সদর পৌর আওয়ামী লীগের যৌথভাবে সম্মেলনের জন্য ৩০ অক্টোবর তারিখ নির্ধারণ করেন। ইতঃমধ্যে প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জোরে-সোরে চলছে সম্মেলনস্থল সদর উপজেলার তেঁতুল শেখ কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণের সাজসজ্জার কাজ। নেতা-কর্মীরাও সম্মেলন স্থলের আশেপাশে দিয়েছেন বড় বড় তোরণ, ব্যানার-ফেস্টুন। আন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে সদর ও পৌর আওয়ামী লীগসহ ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।