দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড চুয়াডাঙ্গায় : বাড়বে গরম

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু : সারাদেশে তাপপ্রবাহ

স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ তৈরি হওয়ার মাধ্যমে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গরম বেড়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাপপ্রবাহ। দেশের পাঁচ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে এ তাপপ্রবাহ তীব্র হয়েছে। গতকাল সোমবার তীব্র গরমে হাঁসফাঁস উঠেছে জনজীবনে। যেন লু হাওয়া বইছে। গরমে ঘরেও টেকা যাচ্ছে না। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়াও কুমারখালীতে ৪০ দশমিক ৫, রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৩ ও খুলনায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকার তাপমাত্রাও ছিলো ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই। বৃষ্টিহীনতায় ঢাকায়ও দুঃসহ গরম অনুভূত হচ্ছে। রোববার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। অপরদিকে, টাঙ্গাইলে ৩৯ দশমিক ২, ফরিদপুরে ৩৮ দশমিক ৭, মাদারীপুরে ৩৮, গোপালগঞ্জে ৩৯ দশমিক ৬, নিখলিতে ৩৮ দশমিক ৫, ঈশ^রদীতে ৩৯ দশমিক ৮, বাদলগাছিতে ৩৯ দশমিক ২, তাড়াশে ৩৮ দশমিক ২, রংপুরে ৩৮ দশমিক ৬, দিনাজপুরে ৩৮ দশমিক ৫, সৈয়দপুরে ৩৯, শ্রীমঙ্গলে ৩৮, সদ্বীপে ৩৮ দশমিক ৭, রাঙ্গামাটিতে ৩৯ দশমিক ৫, কুমিল্লায় ৩৮, চাঁদপুরে ৩৮ দশমিক ২, মাইজদী কোর্টে ৩৮ দশমিক ৪, ফেনীতে ৩৮ দশমিক ৬, হাতিয়ায় ৩৮, বান্দারবানে ৩৯ দশমিক ৯,  মংলায় ৩৮ দশমিক ৭, সাতক্ষীরায় ৩৯ দশমিক ৪, যশোরে ৩৯ দশমিক ৮, বরিশালে ৩৮ দশমিক ২, পটুয়াখালীতে ৩৮ দশমিক ৮, খেপুপাড়ায় ৩৮ ও ভোলায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপামত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপামত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেতুলিয়া ২১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টি হয়নি।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ঘনীভূত হতে পারে। পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে, সঙ্গে বাড়বে গরমও। দেশের ৪৩ জেলায় তাপপ্রবাহ বইছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সোমবার রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়ায় তীব্র তাপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্য জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। এ দিন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল বিভাগসহ ঢাকা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিং, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় দুদিন ধরে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ, যা আরও দু’তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুননেছা।

চুয়াডাঙ্গায় ফের টানা তিনদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সোমবার জেলায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া গত শনিবার ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও রোববার ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা ছিলে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গায় গত তিনদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তিনি জানান, জেলাজুড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজ করছিলো। তবে এ দুদিন সেটা ৩৯-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। যেটা গত দুদিন মৃদু তাপপ্রবাহ ছিলো। আজ সেটা তীব্র তাপপ্রবাহে রুপ নিয়েছে। সাগরের লঘুচাপের কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল টানা দুই সপ্তাহের চলমান তাপপ্রবাহে পাঁচ দশকের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পাবনার ঈশ্বরদীতে। সেখানে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। এর দুদিন আগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে ২০১৪ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। তার আগেও ১৯৯৫ সালে এবং ২০০২ সালে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

এরপর একটানা ১৯ দিন প্রচ- তাপে পুড়ে গত মাসের ২৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গাবাসী স্বস্তির বৃষ্টির দেখা পায়। এবার কত দিনের অপেক্ষা জানা নেই জেলাবাসীর। তারও আগে গত ১ এপ্রিল বৃষ্টি হয়েছিল এ জেলায়।

এদিকে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর। তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচ- গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষ অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাপমাত্রাজনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রখর রোদের ঘাম ঝরানো তাপমাত্রার কারণে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম বিপাকে।

একটু স্বস্তি পেতে ঠান্ডা শরবত, পানি, আইসক্রিম খেয়ে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। তিন-চার দিন আরো তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা তো রয়েছেই। আর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব- বৈচিত্র্যের ওপর। এমন প্রচ- গরমে নাভিশ্বাস চুয়াডাঙ্গাবাসীর।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক আজগর হোসেন ও রিকশাচালক লিয়াকত আলী জানান, প্রচ- তাপদাহে রোজার মাসে যাত্রী পায়নি। আবার সেই গরম শুরু হয়েছে একেবারে যাত্রী নেই। সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের গুলশানপাড়ার বাসিন্দা কামরুন নাহার বলেন, প্রচ- গরম পড়ছে। তাই বাচ্চা নিয়ে সমস্যায় রয়েছি। ঘরের মধ্যে গরমে থাকা যায় না। জানি না কবে বৃষ্টির দেখা মিলবে। আবার তিন বছর বয়সী বাচ্চাটাও গরমজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর এলাকার মুদি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে যে তাপ উঠছে তাতে দোকানে বসার অবস্থা নেই। পুরো দোকান দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, গত ২ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হয়। যা কয়েক দশকের মধ্যে একটানা তাপমাত্রা। এবার আবার একটানা তিনদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এছাড়া গত মাসের ২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর গত ৩ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ ও ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৩ এপ্রিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৪ এপ্রিল ৪১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৫ এপ্রিল ৯ বছরের রেকর্ড ভেঙে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More