দূষিত পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ভেসে ওঠে মাছ
চুয়াডাঙ্গায় মাথাভাঙ্গা নদীর পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা গেলো কারণ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদীতে মরা মাছ ভেসে ওঠা ও মাছের খাবি খাওয়ার কারণ শনাক্ত করেছে মৎস অধিদফতর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে শহরের পুলিশ পার্কের নিচে ও মাথাভাঙ্গা সেতুর নিচে মাথাভাঙ্গা নদীর পানি পরীক্ষা করেন মৎস কর্মকর্তারা। মূলত দূষিত পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে জানান তারা।
জেলা মৎস অধিদফতরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মাথাভাঙ্গা নদীতে মাছ ভেসে উঠেছে। মাছ মারাও গেছে। পানিতে স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেনের পরিমাণ থাকে ৬ পিপিএম। সেখানে ওই পানি পরীক্ষা করে অক্সিজেনের পরিমাণ পাওয়া গেছে মাত্র ০.৫ পিপিএম। অর্থাৎ, অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। পাট পঁচানোর কারণে পানি দূষিত হয়ে গেছে। পানির রং কালো হয়ে গেছে। এছাড়া জেলার সকল বজ্র ও ময়লা মাথাভাঙ্গা নদীতে ফেলা হয়। এই কারণে পানি দূষিত হয়ে গেছে। তবে, বৃষ্টি হলে পানির এমন অবস্থা স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।
সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাজিউল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে দ্রুত মাথাভাঙ্গা নদীর পানি পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেছে। যে পানিতে মাছ থাকে সেই পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা সর্বনিম্ন ৪.৫ পিপিএম থাকার কথা। এই মাত্রা সাড়ে ৩ এর নিচে নামলে জলজ প্রাণির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু পানি পরীক্ষা করে অক্সিজেনের পরিমাণ পাওয়া গেছে মাত্র ০.৫ পিপিএম। ওই পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণও বেশি ছিল। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ খুব কম সেই কারণেই মাছ ভেসে উঠেছে। তবে, পানি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নদী দূষণ থেকে বিরত থাকতে সকলকে অনুরোধ করা হচ্ছে। মরা মাছ না খেতে সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সি বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীর পানি নানা কারণে দূষিত হচ্ছে। আমরা বারবার বলছি, মাথাভাঙ্গা নদীকে বাঁচাতে হবে। পৌরসভা শহরের আবর্জনা ফেলে নদীতে। ড্রেনের পানি গিয়ে পড়ছে নদীতে। সবাইকে নদী দূষণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুর থেকে একটু একটু করে মরা মাছ নদীর পানিতে ভাসতে থাকলেও রাত থেকে বেশ কয়েকটি জায়গায় মাছ ভাসতে দেখে ভিড় করতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। প্রথমে আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জের কৃষ্ণপুর, সদর উপজেলার আকন্দবাড়িয়া, হাতিকাটা, তালতলা হয়ে ইসলামপাড়ার পর যখন রহস্যাবৃত পানির স্রোত চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাথাভাঙ্গা ব্রিজের নিকট পৌঁছায় তখন সাড়ে ৮টা। সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত মাথাভাঙ্গা নদীতে নেমে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ছিলেন অসংখ্য মানুষ। হঠাৎ করেই মাছ নদীর তীরবর্তি পানিতে খাবি খাচ্ছে দেখে মাছ ধরা শুরু হয়। নদী তীরে শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সীদেরই ভীড় জমে।
এলাকাবাসী জানান, সোমবার দুপুরে প্রথম আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ অদূরবর্তী কৃষ্ণপুর নামক স্থানে মাথাভাঙ্গা নদীতে তেলের মত কিছু একটা ভাসতে দেখা যায়। একই সাথে নদীর তীরবর্তি পানিতে ছোট বড় মাছ খাবিখাচ্ছে দেখে কেউ ঠেলা জাল, কেউ মশারির অংশ, কেউ শাড়ি কিম্বা গামছা নিয়ে মাথাভাঙ্গা নদীতে নেমে মাছ ধরতে শুরু করেন। মাথাভাঙ্গার স্রোত ক্রমশ হাজরাহাটীর দিকে এলে একই ভাবে মাছ খাবি খাচ্ছে দেশে মানুষের ঢল নামে।