দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসে আটকে কাতরাতে কাতরাতে প্রাণ গেল যুবকের
নাটোরের বড়াইগ্রামে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে চুয়াডাঙ্গার মাইক্রোবাস চালকসহ দুজন নিহত
স্টাফ রিপোর্টার: নাটোরের বড়াইগ্রামে বালুভর্তি ট্রাকের সাথে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন চুয়াডাঙ্গা অপরজন মেহেরপুর জেলার বাসিন্দা। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের উপজেলার নগর কয়েনবাজার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার সাথেসাথেই মৃত্যু হয় মাইক্রেবাসের চালকের।
দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মাইক্রেবাসে আটকে থাকা যাত্রী আল মাহবুব বাঁচার জন্য প্রায় ঘন্টাখানেক আকুতি করলেও গাড়ি কেটে বের করার আগে তার মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- মাইক্রোবাসের চালক চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা পশুহাটপাড়ার আছির উদ্দিনের ছেলে মনিরুজ্জামান (৩৫) এবং যাত্রী মেহেরপুর সদর উপজেলার গহেরপুর গ্রামের মৃত আদম আলীর ছেলে আল-মাহবুব (৪৩)। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহতদের বনপাড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন জানান, নোয়াহ মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো-চ-১১-৭৫৮৬) চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলো। এ সময় বিপরীত দিক থেকে বালু বোঝাই ট্রাকের (ঢাকা মেট্রো-ট-২২-৪৮৬৭) সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ট্রাকটি উল্টে যায় ও মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মাইক্রোবাস চালকের। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসের বডির চাপায় আটকে যান যাত্রী আল মাহবুব। জীবিত অবস্থায় বাঁচার জন্য প্রায় ঘন্টাখানেক আকুতি করলেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাড়ি কেটে বের করার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নিহত চালক মনিরুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা পশুহাট এলাকার আছির উদ্দিনের ছেলে ও আল-মাহবুব মেহেরপুর সদর উপজেলার গহেরপুর গ্রামের মৃত আদম আলীর ছেলে। আহতরা সকলেই মাইক্রোবাসের যাত্রী ও বাড়ি একই এলাকায়। দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছেন। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এসআই ফিরোজ হোসেন।
এদিকে, নিহত আল মাহবুব মেহেরপুরের বাসিন্দা হলেও তারা চুয়াডাঙ্গা শহরের শান্তিপাড়ায় নিজবাড়িতে পরিবারসহ বসবাস করতেন। বড়ভাই প্রকৌশলী মিলনের মৃত্যুর পর গ্রামেই বসবাস শুরু করেন। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে ফ্রিজ কিনে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে হাতিকাটা এলাকায় দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আল মাহবুবের ছোটভাই আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও তার স্ত্রী। স্ত্রীসহ মাসুমের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠতেই প্রাণ গেলো অপর ভাই আল মাহবুবের।
অপরদিকে, নিহত মাইক্রোবাস চালক মনিরুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা মাইক্রো স্ট্যান্ডে ভাড়ায় মাইক্রো চালাতেন। রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার ভাড়া পেয়ে যাত্রীদের নিয়ে রওনা হন তিনি। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় নিহত হন মনিরুজ্জামান। গতকালই দুজনের মরদেহ নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে দাফন করা হয়েছে। তাদের মৃত্যুতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন পরিবারের লোকজনসহ আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী।