দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও ছড়াতে পারেনি উত্তাপ

স্টাফ রিপোর্টার: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে এবার বিলম্বে শীতের আগমন। তবে পৌষের মাঝামাঝিতে জেঁকে বসেছে হাড় কাঁপানো শীত। এতে মানুষের জীবনযাত্রায় ছন্দপতন শুরু হয়েছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তর জনপদে। এখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে এক থেকে দুটি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সবমিলে পৌষের মাঝামাঝি শুরু হওয়া শীতের তীব্রতা দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা জাগাচ্ছে। আবহাওয়া অধিপ্তর সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো সৈয়দপুরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া রংপুর ও রাজশাহী, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও মাদারীপুর এবং খুলনা বিভাগের যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার বেশ কিছু এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিলো। আর ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলিসয়াস। এদিকে, কুয়াশার চাদরে মোড়া চুয়াডাঙ্গার আকাশ। হিম শীতল বাতাসে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও ছড়াতে পারেনি উত্তাপ। শীতের কারণে কমে গেছে মানুষের চলাচল। দিনমজুর আর খেটে খাওয়া মানুষগুলো বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশা ও শীতল বাতাসের কারণে সূর্যের দেখা সহজে মিলছে না। এদিকে ঘন কুয়াশা না থাকলেও মঙ্গলবার থেকে উত্তাপ ছড়াতে পারেনি সূর্য। দিনে সূর্যের দেখা মিললেও উত্তরের হিমশীতল বাতাসে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। দুদিনের শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন রিকশাভ্যান চালক। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন আয়। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল ইসলাম বলেন, ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে চুয়াডাঙ্গায়। সূর্যের দেখা মিলছে না দুপুর পর্যন্ত। তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৭ শতাংশ। আরও কয়েক দিন ঠান্ডা আবহাওয়া অব্যাহত থাকবে জেলায়। শীতের তীব্রতা বাড়ায় সাধারণ মানুষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। শীতে গরম কাপড় পরিধান করলেও শরীরে শীত অনুভূত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি গ্রামের ভ্যানচালক হারেজ ম-ল বলেন, শীতের কারণে মানুষ বাইরে তেমন একটা বের হচ্ছেন না। মানুষ না থাকায় ভাড়া হচ্ছে না। বাজারের টাকা না হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে কয়েক দিন ধরে কষ্টে আছি। জীবননগর উপজেলার বাঁকা গ্রামের দিনমজুর হাসমত আলি বলেন, কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে মাঠে কাজ করা কঠিন। হাত পা ঠান্ডায় বরফ হয়ে যাচ্ছে। গরিব মানুষ কাজ না করলে তো চলবে না। দামুড়হুদা হেমায়তপুর গ্রামের বৃদ্ধ নাজিম বিশ্বাস বলেন, কয়দিন খুব শীত পড়ছে; বেশ কষ্টও হচ্ছে। রাতে শীতটা বেশি লাগছে। এ বছর একটাও কম্বল পাইনি। কম্বল পেলে খুব ভালো হতো।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, মরসুুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যার ফলে প্রকৃতিতে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে। এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘœ ঘটতে পারে। এদিকে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব অঞ্চলে তাপমাত্রা কমতে শুরু করছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় ছন্দপতন শুরু হয়েছে। গরম কাপড়ের ব্যবহার বেড়েছে। শীতবস্ত্রের বিক্রিও বেড়েছে। আর তাপমাত্রা কমার কারণে শীতকেন্দ্রিক রোগবালাই বাড়তে শুরু করেছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুসারে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি, ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তীব্র এবং তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে তাকে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সারা দেশের তামপমাত্রা আরও একটু কমতে পারে। উত্তর অঞ্চলে মঙ্গলবার সৈয়দপুরের সর্বনিম্ন ৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছিলো। দিনাজপুরে ছিলো ১০ এবং তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো। ফলে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। এছাড়া যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, নওগাঁ, সিলেটের শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রামের রাঙামাটি বান্দরবান, ঢাকার গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর এসব জায়গায় তামপাত্রা কমে যেতে পারে। ফলে শীতের অনুভূতি একটু বাড়বে। তিনি বলেন, প্রথমত এখন বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশের দিকে। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসা ঠান্ডা হিমেল বাতাস বাংলাদেশের তাপমাত্রাকে কিছু অবনমন করে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More