দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালে করোনা রোগী বাড়লো ৬৮ শতাংশ
একদিনে আরও ১৮ জনের মৃত্যু শনাক্ত ১ হাজার ৬১৮ জন
স্টাফ রিপোর্টার: করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। গত বছরের মার্চে দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর হু হু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের হার। বছরের শেষদিকে শীতের সময় প্রকোপ কিছুটা কমলেও বিভীষিকার বছর পূর্তির সেই মার্চে এসে আবারও দাপট দেখাচ্ছে করোনা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগী বেড়েছে ৬৮ শতাংশের বেশি। ঢাকায় বেড়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ। রাজধানীর দুটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি হাসপাতালের সব আইসিইউ শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে সংকটাপন্ন রোগীতে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন শয্যার চেয়ে অতিরিক্ত ৭০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৯১৭টি নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ৮৯৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এই সময়ে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও ১৮জন। তবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক হাজার ৬১৮ জন। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৬৪২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ১৯ হাজার ১৪১ জন।
এদিকে আক্রান্ত বাড়ায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর শয্যা। গতকাল রাজধানীর ১৯টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ৩ হাজার ২৪৪টি সাধারণ শয্যার এক হাজার ৯১০টিতে রোগী ভর্তি ছিলো। ২৮১টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে রোগী ছিলো ২০৫টিতে। ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপতালে করোনা রোগীদের জন্য ২৭৫টি সাধারণ শয্যা নির্ধারিত থাকলেও রোগী ভর্তি ছিলো ৩৪৫ জন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইবনে সিনা হাসপাতাল ও এভারকেয়ার হাসপাতালে গতকাল কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিলো না। সারা দেশের হাসপাতালগুলোর আইসিইউ ও সাধারণ শয্যায় মোট ভর্তি ছিলো দু হাজার ৮০৭ জন করোনা রোগী; রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ভর্তি ছিলো দু হাজার ১১৫ জন। অথচ, দুই সপ্তাহ আগেও পরিস্থিতি ছিলো ভিন্ন। গত ৫ মার্চ সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় এক হাজার ৬৬৭ জন ও রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় এক হাজার ২২৩ জন করোনা রোগী ভর্তি ছিলো। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় রোগী বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় বেড়েছে ৭২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম মহানগরীর মা ও শিশু হাসপাতালের ১০টি আইসিইউ শয্যাও গতকাল রোগীতে পূর্ণ ছিলো। এছাড়া রাজধানীর ২৮১টি আইসিইউর মধ্যে ফাঁকা ছিলো মাত্র ৭৬টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৩২টি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৪টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিলো। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও রাজধানীতে ১৫৫টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিলো। এছাড়া গতকাল চট্টগ্রামের ৪৫টি আইসিইউর মধ্যে ২১টিতে ও সারা দেশের ৫৫৮টি আইসিইউর মধ্যে ২৮৫টিতে রোগী ভর্তি ছিলো।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১১ জন ছিলেন পুরুষ ও সাতজন নারী। হাসপাতালে ১৬ জনের ও বাড়িতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ১২জন ছিলেন ষাটোর্ধ্ব, তিনজন পঞ্চাশোর্ধ্ব, দুইজন চল্লিশোর্ধ্ব ও একজনের বয়স ছিলো ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ১৩ জন ঢাকা, তিনজন চট্টগ্রাম এবং একজন করে রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানানো হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।