দামুড়হুদার বদনপুরের কলেজছাত্র হত্যার রহস্য উদঘাটন : গ্রেফতার ২

প্রাইভেট ছাত্রীর মায়ের পরকীয়া সম্পর্ক যেনে যাওয়ায় খুন হন রনজু

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বদনপুরে মাসুদ হাসান রনজু হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নারীসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে, গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বদনপুর গ্রামের (ঘোলার বাগান) ভুট্টা ক্ষেত থেকে রনজুর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রনজু বদনপুর গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে। তার স্ত্রীর এক মাসের গর্ভবতী বলে জানিয়েছে পুলিশ। রনজুু কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি চাকরিপ্রত্যাশি ছিলেন। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-বদনপুর গ্রামের নূর ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবির (৪১) ও একই গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী শাহানাজ সুলতানা (২৭)। ঘটনার পর দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে। এরপরই বিভিন্ন সূত্র ধরে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করে হুমায়ুন কবিরকে থানা হেফাজতে নেয়। পরে পুলিশের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার ঘটনা স্বীকার করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। এদিকে ঘটনার পরদিন নিহত রনজুর পরিবারের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এই মামলায় হুমায়ুন কবির ও শাহানাজ সুলতানাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ জানায়, রনজু এলাকার মিজানুর রহমানের মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতেন। এরই মধ্যে বুঝতে পারেন মিজানুরের স্ত্রী অর্থাৎ ছাত্রীর মা শাহানাজ সুলতানার সঙ্গে এলাকার হুমায়ুন কবিরের পরকীয়ার সম্পর্ক চলছে। বিশেষ কায়দায় শাহানাজ ও হুমায়ুন কবিরের মধ্যে কখন কি কথা হয়, সে বিষয়টি রনজু জেনে যেতেন। তাদের মোবাইল ফোনে কথা বলার বিষয়টি শাহানাজের স্বামী মিজানুর রহমান স্থানীয় লোকজনকে জানায়। পুলিশের নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত পরকীয়া প্রেমিক হুমায়ুন কবির জানান, হত্যার ৫-৬ দিন পূর্বে রাতে শাহানাজ আমার মোবাইলে কল দিয়ে বলে, রনজু আমাদের কথাবার্তা রেকর্ড করে রাখছে। তাকে মেরে ফেলতে হবে, আমি বলি ঠিক আছে, মেরে ফেলবো। সে আরও বলে মারতে পারলে, আমার সাথে কথা বলবা, না পারলে কথা বলবা না। এ কারণে আমি রনজুকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দুই-একদিন আগে আমি রনজুকে বলি, আমি আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার আমার ভুট্টা ক্ষেতে পানি দেবো। তখন রনজু বলে, আমিও আমার ভুট্টা ক্ষেতে পানি দেবো। সে মোতাবেক রোববার সকাল ৯টার দিকে আমি আমার ভুট্টা ক্ষেতে পানি দিতে যাই এবং রনজুও তার জমিতে পানি দেয়ার জন্য আসে। আমার জমিতে পানি দেয়া শেষে দুপুর ১২টার দিকে রনজু তার জমিতে পানি দেয়া শুরু করে। এ সময় আমি রনজুর পিছনে পিছনে ভুট্টা ক্ষেতের ভিতরে গিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পিছন থেকে কোদাল দিয়ে রনজুর মাথার বাম পার্শ্বে স্বজোরে আঘাত করলে রনজু কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে আমি রনজুকে দুই’টি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে কোদাল ক্যানেলের মধ্যে রেখে বাড়িতে চলে আসি। পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত আসামি হুমায়ুন কবির এ হত্যার ঘটনা বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। নিহত রনজুর বাবা আজিজুর রহমান জানান, আমার ছেলে নিজেই কৃষি কাজ করতেন। আমার ছেলের সঙ্গে কারোর কোন শক্রতা নেই। রোববার ভুট্টা ক্ষেতে কাজ করছিলো ছেলে। দুপুরে ছেলের জন্য খাবার নিয়ে মাঠে গিয়ে তাকে খুঁজে না পেয়ে বাড়ি ফিরে যায়। সন্ধ্যায় মাগরিবের পরেও বাড়ি না ফেরায় কয়েকজনকে সাথে নিয়ে মাঠে খোঁজাখুঁজির সময় ছেলের কোপানো ক্ষত-বিক্ষত লাশ পড়ে থাকতে দেখি বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। নিহত রনজুর পিতা আজিজুল রহমান আরও বলেন, ‘ছেলের জন্য নিয়ে যাওয়া ভাত খাওয়াতে পারলাম না। জীবিত অবস্থায় শেষ দেখাটাও দেখতে পেলাম না। এতই অভাগা বাবা আমি। কখনো ভাবতেই পারিনি আমার ছেলেকে এভাবে কে বা কারা হত্যা করবে। আমি এবং আমার ছেলের কারো সাথে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। তাহলে কেন এমন হলো। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More