দামুড়হুদার দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন : একটিতে নৌকা অপরটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী
নতিপোতায় ইয়ামিন ও নাটুদহে শফিকুল চেয়ারম্যান নির্বাচিত
জহির রায়হান সোহাগ: অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো করোনা মহামারীর কারণে স্থগিত হওয়া দামুড়হুদার নতিপোতা ও নাটুদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। এতে নতিপোতা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী) আ.লীগ নেতা ইয়ামিন আলী ও নাটুদহ ইউনিয়নে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফি নির্বাচিত হয়েছেন। সকাল ৯টায় শুরু হয়ে একটানা ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ৮০ থেকে ৯৫ ভাগ পর্যন্ত ভোট প্রদান করেছেন সাধারণ মানুষ। নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে ভোটের মাঠে কঠোর অবস্থানে ছিলো প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ২ জন বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৩শ ২৬ জন পুলিশ এবং ৩শ ২৩ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত ছিলেন। মোতায়েন করা হয়েছিলো ২ প্লাটুন বিজিবি। নির্বাচনী এলাকায় কাজ করেছে র্যাবও। ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান, বিভিন্ন সরকারি গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এসময় ভোটারদের নির্ভয়ে ও স্বাচ্ছন্দে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান তারা। নির্বাচনে প্রশাসনের এমন ভূমিকা প্রশংসনীয় বলে জানান এলাকাবাসী। ভীতি এড়িয়ে অনেকদিন পর ভোট উৎসবে মেতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেছেন ভোটাররা।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাগেছে, রাতে দামুড়হুদা উপজেলা সভাকক্ষে ওই দুই ইউনিয়নের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নতিপোতা ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়ামিন আলী ৫ হাজার ১শ ১৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল হাসান পেয়েছেন ৩ হাজার ৩’শ ৪৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজিজুল হক পেয়েছেন ৩ হাজার ১শ’ ৭২ ভোট। এছাড়া বিএনপি মনোনিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মনিরুজ্জামান মনির পেয়েছেন ৯শ’ ৭১ ভোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাত পাখা প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ হোসেন পেয়েছেন ১শ ৫৫ ভোট। সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে তালগাছ প্রতীকের প্রার্থী নাছরিন সুলতানা ১ হাজার ৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সূর্যমুখী ফুল প্রতীক নিয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিমা খাতুন পেয়েছেন ৯শ ৫৯ ভোট। সংরক্ষিত ২নং ওয়ার্ডে বক প্রতীকের প্রার্থী কাকলি খাতুন ১ হাজার ৭শ ২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সূর্যমুখী ফুল প্রতীক নিয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনোয়ারা খাতুন পেয়েছেন ১ হাজার ৭৬ ভোট। সংরক্ষিত ৩নং ওয়ার্ডে সূর্যমুখী ফুল প্রতীকের প্রার্থী হালিমা খাতুন ২ হাজার ১শ’ ৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বক প্রতীক নিয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রওশনারা বেগম পেয়েছেন ১ হাজার ৪শ ৪৩ ভোট। ১ নং সাধারণ ওয়ার্ডে টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী মিজানুর রহমান ৫৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভ্যানগাড়ী প্রতীকের প্রার্থী মকলেছুর রহমান পেয়েছেন ৩শ ৮৭ ভোট। ২নং ওয়ার্ডে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী আক্তারুজ্জামান ৫২৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী আল মামুন পেয়েছেন ২শ ৪০ ভোট। ৩নং ওয়ার্ডে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী আকতার শেখ ৭৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোরগ প্রতীকের প্রার্থী বিল্লাল হোসেন পেয়েছেন ৬৪৪ ভোট। ৪নং ওয়ার্ডে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী মতিয়ার রহমান ১ হাজার ১১৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোরগ প্রতীকের প্রার্থী লুকমান হাকিম পেয়েছেন ৪৬০ ভোট। ৫নং ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ৪১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোরগ প্রতীকের প্রার্থী পিজার আলী পেয়েছেন ৪০৯ ভোট। ৬নং ওয়ার্ডে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী পিজির উদ্দিন ৬৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী বুরহান উদ্দিন পেয়েছেন ৩৯২ ভোট। ৭নং ওয়ার্ডে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী শওকত আলী ৬৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভ্যানগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী লিয়াকত আলী পেয়েছেন ৬০০ ভোট। ৮নং ওয়ার্ডে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী মফিজুর রহমান ৯৮০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোরগ প্রতীকের প্রার্থী হাফিজুর রহমান পেয়েছেন ৬২১ ভোট। ৯নং ওয়ার্ডে টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম ৪৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী নাসির হোসেন পেয়েছেন ৪৮৩ ভোট।
এদিকে, নাটুদহ ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম ৪ হাজার ৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হালিম পেয়েছেন ৩ হাজার ৩শ ৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অটোরিক্সা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াচনবী পেয়েছেন ২ হাজার ৬ ৩৪ ভোট। এছাড়া মোটরসাইকেল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফজলুল হক পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৯ ভোট, বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আমির হোসেন পেয়েছেন ৩০১ ভোট ও টেবিল ফ্যান প্রতীকের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম পেয়েছেন ১৯২ ভোট। সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডে মাইক প্রতীকের প্রার্থী রিজিয়া খাতুন ২ হাজার ১৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। বক প্রতীক নিয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নারগীস আক্তার পেয়েছেন ১ হাজার ৪৪১ ভোট। সংরক্ষিত ২ নং ওয়ার্ডে হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী বেলী বেগম ১ হাজার ৪২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তালগাছ প্রতীক নিয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসমোতারা খাতুন পেয়েছেন ১ হাজার ৪১ ভোট। সংরক্ষিত ৩ নং ওয়ার্ডে বক প্রতীকের প্রার্থী লাখী খাতুন ১ হাজার ৬৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। মাইক প্রতীক নিয়ে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেসমিনয়ারা খাতুন পেয়েছেন ১ হাজার ৮৭ ভোট। ১নং সাধারণ ওয়ার্ডে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ৫১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভ্যানগাড়ী প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস পেয়েছেন ২৯৫ ভোট। ২নং ওয়ার্ডে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী আনিছুর রহমান ৪০১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকের প্রার্থী আত্তাব আলী পেয়েছেন ৩৮৪ ভোট। ৩ নং ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী ছানারুল ইসলাম ৫৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী জামসেদ পেয়েছেন ৫২৯ ভোট। ৪নং ওয়ার্ডে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী শাহ আলম ৭০৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী সেলিম খান পেয়েছেন ৬৮০ ভোট। ৫নং ওয়ার্ডে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ৬৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী জসিম উদ্দিন খান পেয়েছেন ৩২৪ ভোট। ৬ নং ওয়ার্ডে তালা প্রতীকের প্রার্থী কেরামত আলী ৬৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোরগ প্রতীকের প্রার্থী মুনছুর আলী পেয়েছেন ৩৭৪ ভোট। ৭ নং ওয়ার্ডে ভ্যানগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী খলিলুর রহমান ১ হাজার ১৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোরগ প্রতীকের প্রার্থী মোশারফ তরফদার পেয়েছেন ৭৭৪ ভোট। ৮নং ওয়ার্ডে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন ৬৩৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তালা প্রতীকের প্রার্থী জবেদ আলী পেয়েছেন ৩৫১ ভোট। ৯ নং ওয়ার্ডে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী বশির আহমেদ ৫৮০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী জালাল উদ্দীন পেয়েছেন ৩৩২ ভোট।
উল্লেখ্য, গত ২৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ভোটের সপ্তাহ খানেক আগে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে গেলো ১৩ সেপ্টেম্বর ওই দুটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে গণ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।