স্ত্রী তুলির আদালতে দায়েরকৃত যৌতুক ও নির্যাতন মামলা
দর্শনা অফিস: দর্শনা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) শামসুদ্দোহাকে গ্রেফতার করেছে যশোর কোতয়ালী থানা পুলিশ। স্ত্রীর দায়েরকৃত মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। শামসুদ্দোহার বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর হলে তিনি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন যশোরে। তবে কর্মস্থল ছিলো দর্শনায়। স্ত্রী তুলি মামলা দায়েরের পর থেকে পালাতক ছিলেন শামসুদ্দোহা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর রাজাবাজার এলাকা থেকে যশোর কোতয়ালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক মধ্যস্থতায় ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট ফারজানা খন্দকার তুলি ও শামসুদ্দোহার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই স্বামীর ভেতর লুকিয়ে থাকা কুৎসিত মানুষটিকে চিনতে শুরু করেন তুলি। তারপরও তিনি স্বামীর সংসার শুরু করেন তুলি। অন্ধকার অধ্যায় পরিবারের কাছে আড়াল করে বিপথগামী স্বামীকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রাণান্তকর চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু তা খুব বেশি কাজে আসেনি। তুলি জানান, মাদক ও পরনারীতে আসক্ত শামসুদ্দোহা যৌতুকের দাবিতে তার ওপর শুরু করেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। অসুস্থ বাবা-মায়ের চিকিৎসার কথা বলে তিনি ৪০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। কয়েক দফায় ১৫ লাখ টাকা দেয়ার পরও তার আচরণে কোনো পরিবর্তন না আসায় স্বামীর অপকর্মের বিষয়ে মুখ খোলেন তুলি। এ অবস্থায় তিনি গর্ভবতী হন। ২০২০ সালে তুলির কোল আলো করে জন্ম নেয় ফুটফুটে পুত্রসন্তান। তখন তুলি মনে করেন, ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন শামসুদ্দোহা। কিন্তু তাও হয়নি। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ফরিদপুরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে তুলির কাছে ফের ১৫ লাখ টাকা যৌতুক চান শামসুদ্দোহা। টাকা দিতে অস্বীকার করায় ১৩ ডিসেম্বর তুলিকে পিটিয়ে আহত করে শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যান শামসুদ্দোহা। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি তুলি বাদী হয়ে শামসুদ্দোহাকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। তুলির বাবা খন্দকার ফারুক আহমেদ জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্যের চূড়ান্তভাবে নৈতিকস্খলন ঘটলে তার চাকরি থাকার বিধান নেই। কিন্তু শামসুদ্দোহার ঘটনাটি উল্টো। তিনি নানা অপকর্মে জড়িত। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এরপরও তাকে গ্রেফতার কিংবা চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়নি। পুলিশের ক্ষমতা দেখিয়ে সে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলো।
দর্শনা থানার ওসি লুৎফুল কবীর জানান, প্রথম দফার ৭ দিনের ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আরও তিন দিনের ছুটি বাড়িয়েছেন শামসুদ্দোহা। কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের পর তাকে ছুটি দেয়া যায় কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিপদে পড়লে আইন দেখবে। ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ার পর কোনো পুলিশ সদস্যকে কর্মস্থল থেকে ছুটি দেয়ার বিধান নেই বলে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে শামসুদ্দোহার মাদক ও পরনারীতে আসক্তিসহ নানা অপকর্মের কথা তুলে ধরে মহাপুুলিশ পরিদর্শক বরাবরও আবেদন জানিয়েছেন ফারজানা খন্দকার তুলি। আবেদনে যৌতুকলোভী ও মাদকাসক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও নিজেকে রক্ষার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।