দর্শনা কেরুজ এলাকায় থেকে তিনদিনের ব্যবধানে ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার
নিষ্ক্রিয় করা হলো ৪টি শক্তিশালী বোমা : বিকট শব্দে প্রকম্পিত এলাকা
দর্শনা অফিস: দেশের সবচেয়ে বড় চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরুজ এলাকায় কাটছে বোমা আতঙ্ক। একদিনের মাথায় উদ্ধারকৃত ৪টি শক্তিশালী বোমা নিস্ক্রীয় করলো সেনাবাহিনীর একটি প্রশিক্ষিতদল। বোমার বিকট শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিলো। কেরুজ চিনিকলের এলাকায় ৩ দিনের ব্যবধানে পৃথক ৩টি স্থান থেকে ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের হলেও গ্রেফতার হয়নি কেউ। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র্যাব যেমন খুঁজছেন বোমারুদের, তেমনই রহস্য উন্মোচনে কাজ করছেন। পাশাপাশি সতর্কাবস্তায় রয়েছে কেরুজ প্রশাসন। মিলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কেরুজ এলাকায় প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে গেট নির্মাণ ও সিমানা পাঁচিল নির্মাণসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি টিভি ক্যামারা স্থাপনের। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টার দিকে কেরুজ ক্লাবের রান্নাঘরের পাশে লাল টেপে জড়ানো একটি শক্তিশালি বোমা উদ্ধার করা হয়। সে বোমা ওই দিনই রাত সাড়ে ৮ টার দিকে রাজশাহী ৫ র্যাবের প্রশিক্ষতি দল নিস্ক্রীয় করেছে ক্লাব মাঠে। শুক্রবার বাদে শনিবার সকালে কেরুজ ক্লাবের সামনের পানি শূন্য পুকুর থেকেও কালো টেপে জড়ানো একটি শক্তিশালি বোমা উদ্ধার করা হয়। ওটিও রাত সাড়ে ৮ টার দিকে রাজশাহী র্যাবের ওই দলই ক্লাব মাঠে নিস্ক্রীয় করে। দুটি বোমায় বিকট শব্দে নিস্ক্রীয় করা হয়। পরপর দুটি শক্তিশালী বোমা পাওয়ায় যায় গত রোববার দুপুর ১২ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সহকারি পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানার নেতৃত্বে চুয়াডাঙ্গা গোয়েন্দা পুলিশ, দর্শনা থানা পুলিশ, চুয়াডাঙ্গা সেনাবাহিনী ও কেরুজ নিরাপত্তাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় তল্লাশি দল। ৮ ভাগে বিভক্তি হয়ে ওই দলের সদস্যরা ১৩৮ একর কেরুজ প্রতিষ্ঠানের আবাসিক এলাকার পরিত্যাক্ত স্থানগুলো তল্লাশি শুরু করে। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন, কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান, চুয়াডাঙ্গা সেনাবাহিনী টিম, চুয়াডাঙ্গা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ, ডিএসবি’র ডিআইওয়ান, দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদ তিতুমীর, কেরুজ মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ওমর ফারুক গালিব, মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) আশরাফুল আলম ভূইয়া, মহাব্যবস্থাপক (ডিস্টিলারী) রাজিবুল হাসান, মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন সাহা। তল্লাশি শুরুর দুঘন্টার মাথায় দুপুর দুটোর দিকে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জয়নাল আবেদীন নফরের আনন্দ বাজারস্থ সংগঠন কার্যালয়ের পেছনে একটি পলিথিনে ৪টি শক্তিশালী বোমার সন্ধান পায় তল্লাশি দল। রাজশাহী ৫ র্যাবের ওই প্রশিক্ষিতদলকে খবর দেয়া হলেও নানা কাজের কারণে ওই দলের সদস্যরা আসতে পারেনি ওই বোমা উদ্ধার ও নিস্ক্রীয় করতে। ফলে পুলিশ ও কেরুজ নিরাপত্তা সদস্যরা ওই স্থানটি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে ঘিরে দিয়ে রাতভর পাহারা দেয়। রোববার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা। গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে যশোর সেনাবাহিনীর একটি প্রশিক্ষিত দল ক্যাপ্টেন নাফিজের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পৌছান। বিকল ৩ টার দিকে উদ্ধার করা হয় শক্তিশালি ওই ৪টি বোমা। প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা সম্পন্ন করে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কেরুজ ক্লাবের সামনের পানি শূন্য পরিত্যাক্ত পুকুরে নিস্ক্রীয় করা হয়েছে ৪টি শক্তিশালী বোমা। এ সময় বোমার বিকট শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এদিকে কেরুজ এলাকার মানুষগুলোর মধ্যে বোমা আতংক যেন কোনভাবেই কাটছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারী মন্তব্য করে বলেন, কেরুজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই এ ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে। তবে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হলে রহস্য উন্মোচন হবে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.