দর্শনার কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন আসন্ন

প্রার্থিতা জানানের হিড়িক পড়ে গেছে : নির্বাচনি হাওয়া শুরু হয়েছে মিল আঙিনায়

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে। এ নির্বাচনের বাতাস শুধু দর্শনা শহরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এ বাতাস ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলার অনাচে-কানাচে। প্রার্থীদের দৌড়-ঝাপ, প্রচার-প্রচারণা নির্বাচনের আমেজ বাড়িয়ে তোলে। নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণের অনেক আগে-ভাগেই প্রার্থী, ভোটার ও সমর্থকদের দলবদ্ধ মহড়ায় শহরবাসীকে মনে করিয়ে দেয় কেরুজ নির্বাচনের কথা। সাধারণসভার পর থেকে তো যেন কোমর বেঁধে মাঠে নামে সকলে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে প্রায় সবকটি সংগঠনের পক্ষে মিছিলের মহড়ার হিড়িক পড়ে যায়। দর্শনা যেন পরিণত হয় মিছিলের শহরে। প্রতিদিন প্রায় সবকটি সংগঠনের কর্মীসভা ও মহ্ন্যভোজের হিড়িক পড়ে যায়। তবে নির্বাচনে খরচের নেপথ্যে থাকেন মদ বিক্রয় কেন্দ্রগুলোর এজেন্টরাই। প্রত্যেক সংগঠনের র‌্যালি ও কর্মীসভায় উপস্থিতির সংখ্যা দেখে বোঝায় মুশকিল প্রকৃত ভোটারের সংখ্যা কতো। চলতি আখ মাড়াই মরসুমের যাত্রা শুরুর আগেই নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রার্থীদের যাত্রা শুরু হয়েছে। কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনকে সামনে রেখে চলছে ব্যপক প্রচার-প্রচারণা। শীতকে উপেক্ষা করে ভোর থেকে গভীররাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিচ্ছেন প্রার্থীরা। দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতির ঝুলি। নির্বাচিত হলে সকলের দাবিই পূরণের আশ্বাসের কথা নতুন কিছু নয়। সকলকেই তালিকার ১নং রাখার প্রতিশ্রুতিটাও বেশ পুরোনো। প্রশ্ন উঠেছে সকলেই ১নং থাকলে তালিকার পরের নাম্বরগুলোতে কাদের নাম থাকবে? আসলে কেরুজ নির্বাচন মানেই চাওয়া-পাওয়া আর পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ। এ ক্ষোভকে পুঁজি করেই সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দল বদলের পালার ঘটনাও বহুদিনের। এ পালায় পাল্লা দিয়ে সুবিধা লুটে থাকে এক শ্রেণির সুবিধালোভী ভোটার। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার গরম বাতাস শুধু কেরুজ আঙিনায় সীমাবদ্ধ থাকে না। এ বাতাস জেলার সর্বত্র বইতে দেখা যায়। মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মোটরসাইকেল শো-ডাউনে সরগম অবস্থায় পরিণত হয় কেরুজ আঙিনা। চিনিকলের হিসাব, প্রশাসন ভা-ার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্ট্রিলারি, বিদ্যুৎ ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগসহ বাণিজ্যিক খামারগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা গত নির্বাচনে ছিলো ১০৮৮। দেশের ৬টি চিনিকল বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন মিলের শ্রমিক-কর্মচারী কেরুজ চিনিকলে যোগদান করেছে ২৭০ জন। ফলে গত নির্বাচনে মোটার ভোটার সংখ্যা ছিলো সাড়ে ১২শ’র কিছুটা বেশি।
জানা গেছে, গত ২ বছরে বহু ভোটার অবসরগ্রহণ ও মৃত্যুজনিত কারণে কমেছে। সেই সাথে বেড়েছেও কিছু ভোটার। ফলে এবারো সম্ভাব্য ভোটার সংখ্যা হতে পারে গতবারের মতই। গত ২০২৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণ হয়নি। তাছাড়া এখনো নির্ধারণ হয়নি সাধারণসভার দিন তারিখও। তবে বর্তমান পরিষদের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ বলেছেন, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের জন্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই কুষ্টিয়া জেএল (শ্রম অধিদপ্তরে) আলোচনা শেষ করেছি। যথা সময়ে নির্বাচনের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। সেক্ষেত্রে ভোটারদের সুবিধার্থে চলতি মাড়াই মরসুম চলাকালীন সাধারণসভা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে সভা হতে পারে জানুয়ারির মাঝামাঝি বা শেষের সপ্তাহে। তবুও নির্বাচনি আলোচনায় উত্তপ্ত কেরুজ এলাকা। ছবি সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুনে ছাওয়া শুরু গেছে কেরুজ আঙিনা। এরই মধ্যে নববর্ষের ক্যালেন্ডারে নিজের সহ নেতার ছবি ছেপেছে অনেকেই। পাশাপাশি কোনো কোনো প্রার্থী ইতিমধ্যে হ্যান্ডবিল বিলি করাও শুরু করেছেন। গত নির্বাচনে পরিবর্তন করা হয়েছিলো পরিষদের সদস্য সংখ্যার। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের গত পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা ছিলো ১৩ জন। বছর আটেক আগে ২৫ সদস্যের কমিটির পরিবর্তন করে তা ১৩ সদস্যে করা হলেও তা পরিবর্তন হয়েছে গত নির্বাচনে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পরিবর্তন করে ফের ২৫ সদস্যের কমিটি নির্ধারণ করা হয়।
ফলে এবারো নির্বাচনে ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে পুরাতনের পাশাপাশি নতুন মুখেরো দেখা মিলছে। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মূলত বড় পদ ২টি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদই মূল পদ হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। ইতিমধ্যেই গত ১৭ অক্টোবর অবসরগ্রহণ করেছেন কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। যে কারণে ওই পদে শপথ গ্রহণের মাধ্যমেই দায়িত্ব পালন করছেন ১নং যুগ্মসাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ। আগামী নির্বাচনে নতুন মুখ হিসেবে সাধারণ সম্পাদক পদে হাফিজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিশ্চিত করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই রেল বাজারের ফুলতলা তিনি সাংগঠনিক কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন। চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। এ নির্বাচনে সভাপতি পদে পুরোনো ২ জনেরই নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ ও সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে তরুণ শ্রমিক নেতা সৌমিক হাসান রূপমের। বাবার শূন্যস্থান পূরণে ইতিমধ্যেই রূপম শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পুরো প্রস্তুতি নিয়েই রয়েছেন ভোটের মাঠে। গত নির্বাচনের পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জয়নাল আবেদীন নফর সকল চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ফিরেছেন ভোটের মাঠে। শুরু করেছেন মাঠ গোছানো। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্সের প্রচারণাও রয়েছে অব্যাহত। তবে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারলেও তার পরের নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আগামী পরিষদের মেয়াদ পূর্ণের মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি অবসরগ্রহণ করবেন। সেক্ষেত্রে শ্রম আইন অনুযায়ী তিনি নির্বাচিত হলে পূর্ণ মেয়াদেই দায়িত্ব পালনের বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারী ভোটারদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রিন্স। এছাড়া সহসভাপতি ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পদে গতবারের মতই একজনের পরিবর্তে দুজন নির্বাচিত হবে। তবে সহসভাপতি ও যুগ্মসম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন রেজাউল করিম, মোস্তাফিজুর রহমান, মফিজুল ইসলাম, খবির উদ্দিন ও এসএম কবীর। এ পদের প্রার্থী সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই যেমনি বাড়ছে শীত, তেমনি শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে নির্বাচনি প্রচারভিযান।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More