ডিসির অপসারণ ও পৌরসভার ভোট বর্জনে ব্যবসায়ী নেতাদের হুমকি
মেহেরপুর কোর্ট মার্কেট উচ্ছেদের প্রতিবাদ ও পুনর্বাসনের দাবিতে ব্যবসায়ীরা বিক্ষুদ্ধ
মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর কোর্ট মসজিদ মার্কেটে জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের দাবিতে গতকাল বুধবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমীর পাশে এ সংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের অপসারণ এবং আসন্ন মেহেরপুর পৌরসভার ভোট বর্জনের হুমকি দিয়ে ৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
৫ দিনের কর্মসূচী হচ্ছে ৯ জুন বৃহস্পতিবার সকালে ভিক্ষার থালা হাতে জেলা প্রশাসকের কার্য়ালয়ের সামনে অবস্থান, ১০ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাত, ১১ জুন শনিববার বেলা ১১ টায় ২৫ মিনিট কালো পতাকাসহ দোকান বন্ধ রাখা, ১২ জুন রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় কাফনের কাপড়সহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং দাবি আদায় না হলে ১৩ জুন সোমবার থেকে আমরণ অনশনসহ হরতাল। ঘোষিত কর্মসূচী কঠোরভাবে পালন করা হবে বলে উল্লেখ করেন হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ইকবাল সিমন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হোটেল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ৭ জুন মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কোর্ট জামে মসজিদের সামনে প্রায় ১০ বৎসর আগে কোর্ট জামে মসজিদ মার্কেট তৈরী করা হয়েছিলো। মসজিদ কমিটি সভাপতি পদাধিকারবলে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসকের অনুমোদনক্রমে দোকানঘর বরাদ্দের ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগ্রহী ব্যবসায়ীরা বৈধ কাগজপপত্রের মাধ্যমে এসব দোকানগুলো ভাড়া হিসেবে চুক্তিনামা করেন। স্ব স্ব দোকানে ব্যবসার পাশাপাশি নিয়মিত মাসিক ভাড়া পরিশোধ করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ১নং খতিয়ানভুক্ত জমিতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ভিত্তিতে বেশ কয়েক বছর আগে মসজিদের উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ও দোকানপাট গড়ে ওঠে।
জেলা প্রশাসকের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আব্দুল হান্নান তার বক্তব্যে বলেন, স্থায়ী পাকা ঢালাই মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছিলো। যা কোনো অবস্থায় অস্থায়ী কিছু নয়। আনুষ্ঠানিক বরাদ্দ ছাড়াই শুধু অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ভিত্তিতে সরকারের ১নং খতিয়ানভুক্ত জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা; ডিসির এমন বক্তব্য অসত্য। নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে মসজিদ কমিটির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক প্রথম পক্ষ হয়ে লিখিত চুক্তিনামা করে দিয়েছেন যার প্রমাণাদি রয়েছে। জেলা প্রশাসকের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর কর্তৃক ব্যাংক একাউন্টের নির্দেশনাসহ অন্যান্য প্রমাণপত্রও রয়েছে।
বক্তব্যে আব্দুল হান্নান বলেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি মসজিদ মার্কেটের ২৫টি দোকান ছেড়ে দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়। আকস্মিক এই নোটিশে অসহায় হয়ে পড়েন ব্যবসায়ীরা। কারণ দরিদ্র ব্যবসায়ীদের উর্পাজনের একমাত্র পথ এই দোকানগুলো। অন্য কোথাও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করতে সময় প্রার্থনা করা হয়েছিলো। কিন্তু জেলা প্রশাসক বিষয়টি কর্ণপাত করেননি। তাই ব্যবসায়ীদের পক্ষে বিজ্ঞ আদালতের আশ্রয় নেয়া হয়। যার মামলা নং ১২৮/২২। মামলাটি আদালতে চলমান থাকারও পরেও ভূমি দূস্য-লাঠিয়াল মাস্তানদের মত সকল প্রকার আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙুল প্রর্দশন করে জেলা প্রশাসন দোকানগুলো গুড়িয়ে দেয়। কোনো ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য জেলা প্রশাসক বেআইনী কাজটি করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
মেহেরপুর পৌরসভার ভোট বর্জনের হুমকি দিয়ে ব্যবসায়ীর নেতারা আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে বর্তমান সরকারকে এবং মেহেরপুরের কৃতিসন্তান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তাই অনতিবিলম্বে ব্যবসায়ীদের দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচী দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ওষুধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ, সদস্য রাশেদুজ্জামান, ইজারুল ইসলাম প্রমুখ। সাংবাদিক সম্মেলনে কোর্ট মসজিদ মার্কেটের ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হোটেল বাজার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ইকবাল সিমন বক্তব্যে বলেন, ২০০৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তালুকদার সামসুর রহমান ও তৎকালীন সদর ইউএনও মিলে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে আমাদের ব্যবসায়ীদের দোকান ঘর বরাদ্দ দেন। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তারা করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসক এই মার্কেটটি ভাঙার প্রতিটি বিষয় নিয়ে ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের সাথে মিথ্যাচার করেছেন। ডিসি সাহেব আমাদের সাথে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা করেননি। বরং আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে বারবার তার কাছে গেছি। উনি আমাদের বিষয়ে কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা ছাড়াই মাত্র আধাঘণ্টার ব্যবধানে পাকিস্তানী হানাদের মতই আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছেন। ৫ দিনের ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে দাবি আদায় না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুশিয়ারী করেন তিনি।
উল্লেখ্য, মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মেহেরপুর কোর্ট মসজিদের জায়গা দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে ২৫টি দোকান ভেঙে দেয় জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে দোকান ভাঙার সময় সেখানকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়ে মরার চেষ্টা করে। এরপরেও সমানে বুলডোজার দিয়ে দোকানগুলো গুড়িয়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে পথে বসেছে দরিদ্র দোকানীদের ২৫টি পরিবার। ব্যবসায়ীরা টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এরপরেও টলেনি জেলা প্রশাসন। নিরুপায় হয়ে আন্দোলন করতে হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতারা।