জোরপূর্বক গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগ : গ্রামবাসীর বাধায় নিজ জমিতে দাফন

চুয়াডাঙ্গার কবিখালিতে পুত্রবধূকে শ্লীলতাহানি জানাজানি হওয়ায় মুখে বিষ ঢেলে নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কবিখালি গ্রামের কিশোরী পুত্রবধূ জেসমিন খাতুনের গর্ভের সন্তান হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর, শাশুড়ি ও ফুফু শাশুড়ির বিরুদ্ধে। গতকাল সকালে জেসমিনকে গুরুতর অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই মৃত সন্তান প্রসব করেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে কবিখালি গ্রামের কবরস্থানে মৃতদেহের দাফনে বাধা দেয় গ্রামবাসী। পরে রাতেই নিজ জমিতে দাফন কাজ সম্পন্ন করেন মৃত সন্তানের পিতা ও দাদা, দাদি। আহত জেসমিনের মা তার মেয়ের বরাত দিয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতাম। গত দুই বছর আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের কবিখালি গ্রামের আব্দুল গাফফারের ছেলে শাওন তার ফুফু বাড়িতে বেড়াতে আসে। আমার বাড়ি আর তার ফুফুর বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় আমার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তখন আমার মেয়ে এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। দুই পরিবারের মাধ্যমে বিয়ে দেয়া হয়। এরপর তারা ভালোভাবেই সংসার করে আসছিলো। এর মাঝে মেয়ের শ্বশুর প্রায় সময় মেয়েকে নানানভাবে কুপ্রস্তাব দিতেন। ঘরে একা পেলেই তাকে জড়িতে ধরতেন। বিষয়টি আমার মেয়ে স্বামী ও আমাকে জানায়। কেনো একদিন শ্বশুর সকালে ঘরের বাইরে যেতে বলে আমার মেয়েকে। বিষয়টি মেয়ে তার স্বামীকে জানালে ঘরের এক কোনায় ওৎ পেতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর মেয়ের শ্বশুর ঘরে ঢুকে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কুপ্রস্তাব দেয়। এ নিয়ে আমার জামায় ও তার বাপ-মায়ের মধ্যে গ-গোল হতে তাকে। এরই জের ধরে আমার মেয়ের পেটে বাচ্চা নষ্ট করার পাঁয়তারা করে। যেনো বাচ্চা নষ্ট করতে পারলে মেয়েকে তালাক দিয়ে দিতে সুবিধা হবে। তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে আমাদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে দিতো না। গত বৃহস্পতিবার মেয়ে আমার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছিলো। এসময় মেয়ের তার শ্বশুর, শ্বাশুড়ি ও ফুফু শ্বাশুড়ি ঘরের মধ্যে মেয়েকে নিয়ে জোরপূর্বক বিষপান করায়। তারা আবার হাসপাতালে নিয়ে এসে আমার মেয়ের পাকস্থলি ওয়াশ করে। তারপর দিন মেয়েকে তারা বাড়িতে নিয়ে যায়। রাতে কোনো এক সময় মেয়ের প্রসাবের রাস্তায় তারা কোনো কিছু করে এবং মেয়েকে ওষুধ সেবন করায়। এরপর থেকেই মেয়ের প্রচ- পেট ব্যাথা শুরু হয়। খবর পেয়ে আমি ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় ছুটে আসি। রাতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মিমাংসা করেন। সেখানে মেয়েকে তালাক দেয়ার কথা বলা হয়। আমি বিষয়টি মানিনি। এরপর রাতে মেয়ের শ্বশুররা তাদের বাড়িতে থাকতে দেয়নি। একজন প্রতিবেশীর বাড়িতে আমার মেয়েকে নিয়ে রাতযাপন করি। গতকাল সকালে মেয়ের হঠাৎ প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করি। মেয়ে হাসপাতালে টয়লেটে যাওয়ার সময় মৃত বাচ্চা প্রসব করে। তারা জোরপূর্বক ও পরিকল্পিতভাবে সন্তানকে হত্যা করেছে। আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

শাওন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি তাকে কোনোপ্রকার নির্যাতন করিনি। সে নিজেই বিষপান করেছে। কেন বিষপান করেছে তা আমি জানিনা। আমি সেই সময় বাড়িতে ছিলাম না। আমার বাবা- মা তাকে কোনো সময় নির্যাতন করেছে বলে আমার জানা নেই। গ্রামের লোকজন কবরস্থানে দাফন করতে দেয়নি। তাই আমাদের জমিতে আমার মৃত ছেলের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

শাওনের পিতা সব অস্বীকার করে দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমরা পুত্রবধূকে কোনোপ্রকার নির্যাতন করিনি। সে নিজেই বিষপান করেছে। হয়তো স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোন ঝামেলা হয়েছিলো। এ কারণে বিষপান করেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আসাদুল হক দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, জেসমিন খাতুনকে তার শ্বশুর, শাশুড়ি ও পরিবারের সদস্যরা নির্যাতন করতেন। গত মাস খানেক আগেও নির্যাতনের অভিযোগ আমার নিকট এসেছিলো। আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি মিমাংসা এবং এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে সতর্ক করি। গতকালের মৃত বাচ্চার বিষয়টি গ্রামের লোকজন আমাকে জানায়। আমাকে না জানিয়ে গতকাল ছেলেপক্ষ একটি মিটিং করেছে। যেহেতু আমাকে জানাইনি তাই এ বিষয়ে আমি সেখানে কেনো যাবো বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

এক প্রতিবেশী দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, এটা পরিকল্পিতভাবে বাচ্চাটাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ না আসায় রাতে গ্রামের মানুষ মৃতদেহের দাফন করতে বাধা দেন। মাসে প্রায় ১৫ দিনই জেসমিনকে নির্যাতন করতেন শ্বশুর-শাশুড়ি। এ নিয়ে গ্রামের বেশ কয়েকবার মিমাংসা হলেও নির্যাতন চালিয়ে যেতেন।

এ বিষয়ে জানতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপালের গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আকলিমা খাতুনের ব্যক্তিগত নাম্বারে একাধিক কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহব্বুর রহমান দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, এমন কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। বিস্তারিত জানতে খোঁজ নেয়া হবে। এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More