চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-কুষ্টিয়া ও মাগুরা জেলা বিএনপির কর্মশালায় তারেক রহমান

ঝড় তুফান বন্যা যাই হোক না কেন একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হতেই হবে

স্টাফ রিপোর্টার: সঠিক নির্বাচনের মাধ্যমেই কেবল জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচনি ব্যবস্থা যদি ঠিক করতে না পারি, তবে দেশের কোনো কিছুরই সমাধান হবে না। ঝড়, তুফান, বন্যা, খরা, বৃষ্টি যাই হোক না কেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যপথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে আমরা তাদের প্রতিহত করবো।’ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এই কর্মশালা চলে। ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক ওই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ওই চার জেলার নেতারা অংশ নেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের শাহেদ গার্ডেনে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলার কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়ার কর্মশালা হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এবং মাগুরায় কর্মশালা হয় শহরের আসাদুজ্জামান মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ স্বাগত বক্তব্য দেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমানের উপস্থাপনায় কর্মশালায় প্রধান আলোচক ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন। আলোচক হিসেবে অংশ নেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নেয়া হালিমা আরলী, সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক মোছা. শাম্মী আক্তার, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মেহেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ ও সদস্য সচিব কামরুল হাসান। তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচন চাচ্ছি শুধু জাতীয় নির্বাচন নয়, নির্বাচন হতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে। সেটি ইউনিয়ন পরিষদ হোক, সেটি উপজেলা হোক, পৌরসভা হোক বা ট্রেড পোলিং (ব্যবসায়ী সংগঠন) হোক। অর্থাৎ যেখানে যেখানে নির্বাচনের বিধান আছে, প্রতিটা জায়গায় নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন হলেই ধীরে ধীরে একটি জবাবদিহি তৈরি হয়। যেসব দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করছে, সেখানে প্রশাসন, রাজনৈতিক দল সবকিছুর মধ্যে একটা চেক অ্যান্ড ব্যালান্স (ভারসাম্য) থাকে। যতই আইন করি, যতই পলিসি করি, নিয়মনীতি করি, লাভ হবে না, যদি সমাজের মধ্যে ভারসাম্য বা জবাবদিহি না থাকে। এই জবাবদিহি ধীরে ধীরে সমাজের সব ক্ষেত্রে তৈরি করা সম্ভব হবে, যদি আমরা যেকোনো মূল্যে একটা নির্বাচন করতে পারি। যে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটাররা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। আমরা যদি এই সিষ্টেমটা নিশ্চিত করতে পারি, ধরে রাখতে পারি, তবেই সব ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচাররা দেশকে ধ্বংস করে ফেলেছে। পালিয়ে যাওয়ার আগে তারা দেশের প্রতিটি সেক্টর ভেঙে দিয়ে গেছে। তাই এখন দেশের মেরামত অত্যন্ত জরুরি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির আয়োজনে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও মাগুরা জেলায় বিএনপির কর্মশালায় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সালে দেশ সংস্কারের কথা বলেছেন। বিএনপিও দুই বছর আগে ৩১ দফা পেশ করে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। আমরা জানতাম এ সরকারের পতন হবেই। তাই আগে থেকে আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিই। তারেক রহমান বলেন, ১৫ বছরে দেশে দ্বি-রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নারী-পুরুষ সবাই ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারের শিকার হয়েছে। বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনুসরণ করে জনমানুষের জন্য রাজনীতি করেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় বসে ছিলো পতিত স্বৈরাচার সরকার, নির্দিষ্ট তারিখ না জানলেও আমরা জানতাম, এদের পতন হবে। সেই বিশ্বাস থেকেই আমরা ৩১ দফা জাতির সামনে উপস্থাপন করেছি। স্বৈরাচার সবকিছু ধ্বংস করেছে, সেই দেশকে মেরামত করতে হবে। কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার করতে চাচ্ছে, তার সবই এই ৩১ দফায় রয়েছে। কারণ, বিএনপি দেশ ও জনগণ নিয়ে ভাবে। সরকার যে কমিশন করেছে, যেসব বিষয়ে জমা দিয়েছে রিপোর্ট, কমবেশি আমাদের কথা। মূল বিষয়, তারা আমাদের বাইরে যেতে পারছেন না।’
তারেক রহমান বলেন, ‘এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, দেশে যদি ভালো কিছু সম্ভব হয়, ইনশা আল্লাহ বিএনপি ভালো কিছু করবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট হবে, একজন ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, আমরা জবাবদিহি নিশ্চিত করব, আমরা প্রশাসনের সংস্কার করব, প্রশাসন জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবে এ রকম ভালো ভালো কথা জনগণ শুনবে, আপনি বলবেন। বড় বড় গোলটেবিল হবে। দামি দামি জায়গায় গোলটেবিল-সমাবেশও হবে। দিন শেষে তো পাবলিক জিজ্ঞেস করবে, বুঝলাম সব কথা, তুমি আমার দ্রব্যমূল্যের কী করবা? ভোট তো পাবা, ভোট পাওয়ার পর তুমি আমার শিক্ষাব্যবস্থার কী করবা? স্বাস্থ্যের কী করবা? বুঝলাম স্বৈরাচার সব ধ্বংস করেছে, লুটপাট করেছে, কিন্তু তুমি আমার কর্মসংস্থানের কী করবা? এমন প্রশ্নও তো আসবে, আসবে না? আমাদের সেটাতে মনোযোগী হতে হবে। আমাদের পরিকল্পনা থাকবে। যেটা প্রয়োজন, সেটা আমরা বলব এবং সেটার বাস্তবায়নও আমরা করব। যেকোনো মূল্যে সমস্যার সমাধান করতে হবে।’ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার খন্দকার আবদুল মজিদ প্রশ্ন করেন, গঙ্গা-কপোতাক্ষ চুক্তির ফলে এই অঞ্চলে চারটি জেলা কৃষি স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ভারতের অসহযোগিতার ফলে খালগুলো পানিশূন্য, সেচ প্রকল্প অকেজো। এ ব্যাপারে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী পদক্ষেপ নেবে?
তারেক রহমান জবাবে বলেন, ‘এখানে একটা বিষয় আছে, ভারত বাঁধ দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে এবং একই সময়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টি নিয়ে যেতে হবে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, গতবার যখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ছিলেন, তখন কিন্তু উনি ফারাক্কার বিষয়টি জাতিসংঘে তুলেছিলেন। একইভাবে আমাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আশ্রয় নিতে হবে, তাদের সহযোগিতা নিতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের অবশ্যই ভারতের সঙ্গে নিজেদের ভেতর আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আপনারা জানেন, শহীদ জিয়ার সময় খাল কাটা হয়েছিলো। এই খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে, অনেক জায়গায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যেকোনো মূল্যে আমাদের খালগুলোকে আবার কাটতে হবে।’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More