চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে কালবোশেখীর পূর্বাভাস
আগ্রাসী তাপপ্রবাহের পর নামলো স্বস্তির বৃষ্টি
স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে নামলো স্বস্তির বৃষ্টি। এতে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মানুষ ও কষ্টে থাকা পশু-পাখিরা। টানা তাপপ্রবাহের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় বোশেখী ঝড়ের সাথে এক পশলা বৃষ্টিতে মরা গাছগুলোও যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণ। বোশেখী খরতাপে জনজীবন যখন ওষ্ঠাগত; তখন বৃষ্টি যেন অন্যরকম প্রাণশক্তি হয়ে ধরা দিলো। অব্যাহত তাপপ্রবাহে মানুষের জীবন যেন এতোদিন যায় যায় করছিলো। আগ্রাসী তাপ আর গরম বাতাসে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিলো। এরপর টানা তাপদাহে বাইরে বের হলে চোখ-মুখ যেন পুড়ে যাচ্ছিলো। আজ শনিবারও কালবোশেখী ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল থেকে পূর্বদিকে বাংলাদেশের রাজশাহী, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা সীমান্তের দিকে একটি কালবোশেখী ঝড় শুক্রবার সন্ধ্যায় আঘাত হানে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে পারে। এরপর ঝড়টি মেহেরপুর রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, নরসিংদী জেলার ওপর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অভিমুখে চলে যায়।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সাসটেইনবিলিটির আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কালবোশেখী ঝড়টি রাত ৮টা থেকে ১০টার দিকে পদ্মা নদী অতিক্রম করে। ফলে ওই সময়ে পদ্মায় সব ধরনের নৌযান চলাচল প্রচ- ঝুঁকিপূর্ণ। রাতেই অবশ্যই লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদ বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং কুমিল্লা অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও খুলনায় বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী ও পাবনাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু ধরণের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছন এ আবহাওয়াবিদ। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিলো ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বছরের প্রথম কালবোশেখী ঝড় জীবননগরে আঘাত হেনেছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝড়ের কারণে কলা ক্ষেত, আমের গুটি ও ভুট্টাসহ উঠতি ফসলের ক্ষতিসাধন হয়েছে। কালবোশেখীর আঘাতের কারণে একটানা সাড়ে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
এবার রমজান মাস জুড়ে তীব্র দাপদাহ বিরাজমান ছিলো। রোজাদারের প্রচ- এ খরার মধ্যে রোজাব্রত পালন করে আসছিলেন। এ অবস্থার মধ্যে গত কয়েক দিন ধরে সকালে ও বিকেলে আকাশে মেঘের উঁকি দেখা গেলেও বৃষ্টি ঝরেনি। অবশেষে গতকাল সন্ধ্যায় ধমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টির দেখা মেলে। তবে বৃষ্টি আশানুরূপ না হলেও ঠা-া হয় এ ধরনি। তবে কালবোশেখী ঝড়ের কারণে আমের গুটি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কলা গাছ ভেঙে গেছে এবং ভুট্টা গাছ নুয়ে পড়ে। এ ছাড়াও উঠতি অন্যান্য ফসলের ক্ষতিসাধন হয়েছে। ঝড়ের কারণে চুয়াডাঙ্গার জাফরপুর গ্রিড হতে জীবননগর আসা মেন লাইনের ওপর গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ার কারণে বিদ্যুত সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংস্কার করার পর বিদ্যুত সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।