স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সীমানাপাঁচিল নির্মাণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পাঁচিল নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোনো ইট। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নানা প্রচারণা চালানো হলেও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তা আমলে নিচ্ছেন না। পুরোনো ইট দিয়ে চুয়াডাঙ্গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় চত্বরে সীমানা পাঁচিল নির্মাণ করায় ওই কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই সঙ্গে পুরোনো ইট ব্যবহার করায় সীমানা পাঁচিল বেশি দিন টিকবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় ওই পাউবো চুয়াডাঙ্গা কার্যালয় সূত্র জানায়, এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজে কথিত স্যালভেজের নামে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা সরকারকে সাশ্রয় দেখাতে গিয়ে পাউবোর কর্মকর্তারা ঠিকাদারকে শতভাগ পুরোনো ইট ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছেন। পাশাপাশি নিম্নমানের বালু এবং বালু-সিমেন্টের মিশ্রণের ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রকৌশল শাখার সহকারী প্রকৌশলী কাজী রফিকুল হক বলেন, সাধারণত পুরোনো স্থাপনা ভেঙে ফেলার পর সেখান থেকে ব্যবহার উপযোগী রড বা ইটকে উদ্ধারকৃত উপকরণ বা স্যালভেজ বলে। সাধারণত রাস্তাঘাট নির্মাণকাজে স্যালভেজের ব্যবহার হয়ে থাকে। যা মূল সড়কের অনেক নিচে থাকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ জানান, নির্মাণকাজে ৭০ শতাংশ পুরোনো ইট স্যালভেজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য কার্যাদেশে উল্লেখ করা হবে। তিনি দাবি করেন, এ পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে শতভাগ পুরোনো ইট ব্যবহার করা হলেও ব্যবহার অনুপযোগী কোনো ইট ছিলো না। প্রতিটি ইট ভালো।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, বাজারে বর্তমানে প্রতি হাজার নতুন ইটের দাম ১১ হাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রতি হাজার পুরোনো ইট পাঁচ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। নির্মাণকাজে পুরোনো ইট ব্যবহারের ভালোমন্দের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের প্রতিটি স্থাপনার আয়ুষ্কাল ১০০ বছর ধরে নির্মাণ করা হয়। কোনো নির্মাণকাজে পুরোনো ইটের ব্যবহার কখনোই নতুন ইটের সমকক্ষ হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘৬০-৬৫ বছরের পুরোনো ইট দিয়ে নির্মাণকাজ করলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ুস্কাল ১০০ বছর থেকে ইটের বয়স বাদ দিতে হবে। অর্থাৎ নতুন এ স্থাপনার আয়ুষ্কাল দাঁড়াবে ৩৫-৪০ বছর।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাসের বেশি সময় ধরে নির্মাণকাজ চললেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজে এখনো কোনো নতুন ইট ব্যবহার করেননি। অভিযোগ রয়েছে, বিমঢালাই ও পাঁচিলের গাঁথুনিতে বালু-সিমেন্টের মিশ্রণের অনুপাত ৪:১ করার কথা থাকলেও তা শুরু থেকেই এ নিয়ম মানা হয়নি।
পাউবো চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিনটি প্যাকেজে মোট ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় সীমানা পাঁচিল নির্মাণকাজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন পটুয়াখালীর ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ। কাজটি তিনি চুয়াডাঙ্গার ঠিকাদার বিশ্বজিৎ কুমারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। বিশ্বজিৎ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২৩ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা। ঠিকাদার বিশ্বজিৎ কুমার বলেন, ‘পাউবোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী যথাযথ নিয়ম মেনেই কাজ করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে।’
জানতে চাইলে পাউবোর নির্বাহী পরিচালক আরিফ আহমেদ জানান, যে ইটগুলো ভালো মানের সেগুলোই শুধু ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, পুরোনো ইট দিয়ে নতুন নির্মাণকাজে কোনো সমস্যা নেই। ইটের বয়স যত বেশি হয়, ততই মজবুত হয়। তাছাড়া এ নির্মাণকাজে সরকারের পাঁচ লাখ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
নতুন নির্মাণকাজে পুরোনো ইটের ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।