চুয়াডাঙ্গায় স্কুলছাত্র হত্যায় একজনের মৃত্যুদণ্ড : দুজনের ১৪ বছর করে কারাদণ্ড
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আবু হুরায়রা হত্যা মামলায় এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- দেয়া হয়েছে। মামলায় অপর দুই আসামিকে ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদ- ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল সোমবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মাসুদ আলী এ রায় ঘোষণা করেন। নিহত আবু হুরায়রা চুয়াডাঙ্গা ভিক্টরিয়া জুবিলি (ভি.জে) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলো। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মোহাম্মদ মোমিন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। কারাদ-প্রাপ্তরা হলেন-একই গ্রামের মোতালেব হোসেনের ছেলে পারভেজ আহম্মেদ ও জামাত আলীর ছেলে আশরাফুজ্জামান রিজন এর মধ্যে দ-িত পারভেজ আহম্মেদ পলাতক রয়েছে। মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলা গোরস্তানপাড়ার আবু হুরায়রা একই পাড়ায় প্রাইভেট পড়তে যায়। প্রাইভেট পড়ে বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। তবে তাকে কোথাও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল বারেক বাদী হয়ে কয়েক জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এরপর হত্যা রহস্য উদঘাটনে সদর থানা পুলিশ কাজ শুরু করে। তদন্তে বেরিয়ে আসে, খরগোশ দেয়ার লোভ দেখিয়ে মোমিন স্কুলছাত্র আবু হুরায়রাকে তালতলা গোরস্তানের ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাকে রাতে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ গুম করতে পুরাতন একটি কবরের ভেতরে মাটি চাপা দিয়ে রাখেন। এরপর নিহতের পিতার বাড়ির গেটে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে একটি চিঠি ফেলে আসে এবং মোবাইল ফোনে চিরকুটের কথা জানায়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ এ ঘটনায় মোমিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যা ও মরদেহ গুমের বিষয় স্বীকার করেন তিনি। এরপর ২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তার দেখানো একটি কবর খুঁড়ে পুলিশ স্কুলছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে। এ মামলায় মোমিন, পারভেজ ও রিমন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়। সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান তদন্ত শেষে উল্লিখিত মোমিন, পারভেজ ও রিমন তিনজনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই সাথে প্রাইভেট শিক্ষকসহ ৫ জনকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আদালত চাঞ্চল্যকর এই মামলায় ১৩ জনের স্বাক্ষ্য প্রমাণ শেষে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এপিপি গিয়াস উদ্দিন এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি জানান, তাদের মধ্যে দ-প্রাপ্ত পারভেজ আহম্মেদ পলাতক রয়েছেন। তাকে দ্রুত গ্রেফতারে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, বছর কয়েক আগে এক ঈদের রাতে শিশু আবু হুরায়রাদের বাড়ির গেটে উচ্চস্বরে গান বাজাচ্ছিল মোহাম্মদ মোমিন। আবু হুরায়রার পিতা আবদুল বারেক বারবার বারণ করা সত্ত্বেও গান বন্ধ করে না মোমিন। ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায় আবদুল বারেক রেগে গিয়ে সাউন্ড বক্সে আঘাত করে ফেলে দেন। এতে বক্সটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে মোমিন ক্ষুব্ধ হয় এবং প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পনা করতে থাকে। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি বিকেলে প্রতিবেশী শিক্ষক রনজু হকের কাছে আবদুল বারেকের একমাত্র ছেলে শিশু আবু হুরায়রা প্রাইভেট পড়তে যায়। এ সময় খরগোশ দেয়ার কথা বলে আবু হুরায়রাকে বাড়িতে নিয়ে হত্যার পর লাশ একটি কবরে গুম করে মোমিন। পরবর্তীতে ১ ফেব্রুয়ারি চিরকুটে মোবাইল নম্বর দিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় মোমিন। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ১৩ ফেব্রুয়ারি মোমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন মোমিনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গ্রামের একটি কবরস্থান থেকে নিখোঁজের ২৬দিন পর আবু হুরায়রার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.