চুয়াডাঙ্গায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সিসি ক্যামেরা ব্যবস্থাপনা
দ্রুত সচল করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি সচেতন মহলের
স্টাফ রিপোর্টার: আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে চুয়াডাঙ্গা শহর ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে সিসি ক্যামেরা ব্যবস্থাপনা। এতে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার সুফল পাচ্ছেন না এখনকার বাসিন্দারা। জেলা শহরে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যামেরা চালু থাকলেও আলমডাঙ্গায় স্থাপন করা সব ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়েছে। দ্রুত সিসি ক্যামেরা সচল করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি সচেতন মহলের। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আবারও চুয়াডাঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ স্থান সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে।
২০১৭ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা, পৌর এলাকা ও আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হয় সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ব্যবসায়ী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় সিসি ক্যামেরা, মনিটর, ইলেকট্রিক তার, মিডিয়া কনভার্টারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল কেনা হয়। কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ফলে সে সময় হ্রাস পায় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করে জনজীবনে। নিরাপদ হয়ে ওঠে মানুষের চলাচল। সুফল পেতে থাকেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। শুরু থেকে ব্যবসায়ীদের বেতনে মাসে চার দিন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন একজন মিস্ত্রি। প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়। মাসে চার দিন সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ ও মেরামত করা হয়। কিন্তু এক বছর পর নষ্ট হতে থাকে এসব ক্যামেরা।
বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা ও আলুকদিয়ায় স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার বেশির ভাগই অকেজো পড়ে রয়েছে। ঝড়, বৃষ্টি ও বিদ্যুতের খুঁটি বদলসহ নানা কারণে তারগুলো ছিঁড়ে গেছে। সেগুলো সঠিক সময়ে মেরামত করে সচল রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে ক্যামেরার সংখ্যা কমে এসেছে। চালু থাকে ৭ থেকে ১০টি সিসি ক্যামেরা, যা দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এমনকি এসব এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ইভটিজিংসহ নানা ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা ও আলুকদিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৭০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলেও বর্তমানে চালু আছে ৭-১০টি। আলমডাঙ্গার সব ক্যামেরা অকেজো হয়ে গেছে। আলমডাঙ্গায় নতুন করে এ বছর সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ৬০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে পৌর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। ৩০টি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এ ক্যামেরা বসানোর মধ্য দিয়ে আলমডাঙ্গা নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আসছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়বে। সংসদ সদস্য ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সিসি ক্যামেরাগুলো তদারকি করবে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ।
এর আগে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও আলমডাঙ্গা থানায় সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণের জন্য কন্ট্রোলরুম ছিল। সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে ছিল জেলা পুলিশ। সিসি ক্যামেরাগুলো তদারকির অভাবে বিলুপ্ত ও অকেজো হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় ১০০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।
চুয়াডাঙ্গার সাধারণ নাগরিক ও ব্যবসায়ীরা বলেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়েছে। নিজেদের স্বার্থে অনেকে ক্যামেরা স্থাপন করলেও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেই। তাই পুরো জেলা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা সময়ের দাবি। চুয়াডাঙ্গা সিসি ক্যামেরা স্থাপন কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল হাসান জোয়ার্দ্দার জানান, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। আগেরগুলো অকেজো হয়ে গেছে। অনুদান পেলে নতুন ক্যামেরা দিয়ে আবারও পুরো জেলা নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে দেয়া সম্ভব। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, চুয়াডাঙ্গা শাখার সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান ইবু জানান, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় সেই ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা স্থাপনে সেবা পাচ্ছিলেন সব শ্রেণিপেশার মানুষ। তারা নিরাপদে চলাচল করতে পারছিল। আমি চাই সবসময় যেন মানুষ উপকার পায়। সিসি ক্যামেরা স্থাপনে আমার সহযোগিতা থাকবে।’
জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধী শনাক্তে সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সিসি ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় নতুন করে ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার ৫টি থানার ওসিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুরো জেলায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে।