চুয়াডাঙ্গায় পুনঃখননকৃত চিত্রার পাড় কেটে চলছে মাটি বিক্রির উৎসব
সরকারের চিত্রা খননের লক্ষ্য ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার: বিলীন হওয়া চিত্রানদীর প্রবাহ ফেরাতে সরকার চিত্রা পুনঃখননের কাজ শুরু করেছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানেরা চিত্রাখনন ও দৃষ্টিনন্দন বনায়ন সৃষ্টি করতে চিত্রার পাড়ে ফলজ ও বনজ গাছও লাগিয়েছে। তা রক্ষণা- বেক্ষনার জন্য পাহারাদারও নিয়োগ দিয়েছেন তারা। এতকিছুর মধ্যে সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ভেস্তে দিতে কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন অফিসের দোহায় এবং কাগজপত্র আছে এমনটা দাবি করে সদ্য খননকৃত চিত্রা নদীর পাড় কেটে মাটি বিক্রির উৎসবে মেতেছে। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অনুমতি নিয়ে এবং সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ছয়ঘরিয়া গ্রামের আপিল মেম্বার মাটি বিক্রি করছেন বলে দাবি করেছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। তবে যে বা যারাই চিত্রার পাড়ের মাটি বিক্রি করুক না কেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৬৪ জেলা খাল পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় জেলার মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে চিত্রা নদীর সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে দামুড়হুদা উপেজলার দর্শনা গোপালখালী স্লুইচগেটের নিকট থেকে খালখনন করার কাজ শুরু করে। ২০ কি. মিটার খালখননের জন্য সরকার ৭ কোটি ১৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫১৮ টাকা বরাদ্ধও দেয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো সিডিউল মোতাবেক খালখনন এবং নদীর দু’পাড়ে বনজ ও ফলজ গাছও লাগায়। আর এসব রক্ষণা-বেক্ষনার জন্য পাহারাদার নিয়োগ দেয় ঠিকাদাররা। এদিকে বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের আপিল মেম্বার দীর্ঘদিন থেকে নিজ এলাকার চিত্রার মাটি বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভেকু দিয়ে শত শত ট্রাক্টর মাটি বিক্রিও করেছেন তিনি। যা এখনও চলমান আছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, অজুহাত দেখিয়ে মাটি বিক্রির ব্যাপারে আপিল মেম্বারকে নিষেধ করা হলেও তিনি তাতে কোনই কর্ণপাত করেন না।
ইজারা ব্যতীত অন্য কোন পদ্ধতিতে মাটি উত্তোলন, পরিবহণ, বিপণন ও সরবরাহ করা যাবে না এবং এই মর্মে কোনো রাজস্বও আদায় করা যাবে না। মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধানসহ অন্য কোন বিধান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অমান্য করলে বা এই আইন বা অন্য কোন বিধান লংঘন করে মাটি বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে ২ বছর কারাদ- বা ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন মর্মে আইনের বিধান রয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আপিল মেম্বারের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই মাটি বিক্রি করছি। শুধু তাই না রীতিমত ৬০ হাজার টাকা রাজস্বও দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, নামকাওয়াস্তে মাটি বিক্রির নামে মানুষের সেবা ও উন্নয়নমূলক কাজ করছি। আমার কাছে মাটি বিক্রির যথাযথ কাজপত্র আছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসরাত জাহান বলেন, অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম বলেন, আপিল মেম্বার ইতঃপূর্বে মাটি বিক্রি করেছিলো সে ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গেলে তিনি তখন ৬০ হাজার টাকা রাজস্ব খাতে জমা দেন। এখন শুনতে পারছি তিনি ওই কাগজ পেয়ে মাটি বিক্রি করছেন। তাই তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছি। মাটি বিক্রির অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন অনুমতি এ দফতর থেকে তাকে দেয়া হয়নি।
এলাকাবাসী অভিযোগের সুরে বলেন, যেকোনো প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সঙ্গে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশ্নটি যুক্ত। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি পর্যায়েই অস্বচ্ছতা ও অনিয়মের কমবেশি অভিযোগ ওঠে। এ জন্য যেকোনো প্রকল্পের কাজে আর্থিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সবার আগে দরকার। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের প্রতি আপিল মেম্বারের মাটি বিক্রির বিষয়টি খতিয়ে দেখে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।