চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড : শীতবস্ত্র বিতরণ
চলতি মাসেই হতে পারে ৩-৫টি শৈত্যপ্রবাহ
স্টাফ রিপোর্টার: ডিসেম্বর মাসে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও জানুয়ারিতে শীত জাঁকিয়ে বসতে পারে। হতে পারে একাধিক তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় শীত আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজধানীতেও ছিল কুয়াশার বিস্তার। জেঁকে বসেছে পৌষের শীত। বইছে হিমেল বাতাস। অবস্থা ঠা-া অনুভূতি গত কয়েক দিনের তুলনায় বেড়েছে। এরইমধ্যে দেশে চলতি মাসে তিন থেকে পাঁচটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছ।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাসে দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দু-একটি মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তিন-পাঁচটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। আর এ তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ হলে তা মাঝারি, তাপমাত্রা ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তা তীব্র আর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ১০ জানুয়ারির কাছাকাছি সময়ে দেশে শৈত্যপ্রবাহ আসার আশঙ্কা বেশি। ৮ ও ৯ জানুয়ারি দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বৃষ্টি হতে পারে। ৯ বা ১০ জানুয়ারি দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, চলতি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব, পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যান্য অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। কুয়াশা পরিস্থিতি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গায় আবারও শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে উত্তরের কনকনে হিমেল হাওয়া ও তীব্র শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গতকাল বৃহস্পতিবার এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৯৫ শতাংশ। চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ৩-৪ দিন শৈত্যপ্রবাহ অব্যহত থাকতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, সবশেষে গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি ৩-৪ দিন যাবত একটি শৈত্যপ্রবাহ এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিলো। এরপর সাগরে নিম্নচাপের কারণে শীত কিছুটা কমে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে থাকে। এরপর ডিসেম্বর মাসের বাকি দিনগুলোতে তেমন ছিল না শীতের দাপট। তবে ইংরেজি বছরের শুরুতে আবার বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। বুধবার এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। কষ্টে আছেন নি¤œ আয়ের সব পেশাজীবী মানুষ। খুব সকালে শীতের তীব্রতায় কাজ পাচ্ছেন না শ্রমিক শ্রেণি।
চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি হোটেলের কর্মচারী কাজল চক্রবর্তী বলেন, ‘ভোরে কাজে আসতে হয়। এই শীতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কাজ তো করে খেতে হবে, তাই কিছুই করার নেই।’
পাখি ভ্যান চালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এই যে আবার তীব্র শীত পড়া শুরু করছে। এবার আবার কাজ কম হবে। ভাড়া হবে না, শীতে বাপু লোকজন বের হয় না।’ চা দোকানি মিন্টু মিয়া বলেন, ‘যত শীত, তত কষ্ট। কষ্ট সব আমাদের। গরিব মানুষের শীত গরম কি। কাজ তো করা লাগবে।’ বেসরকারি এনজিও কর্মী সোনালিকা বিশ্বাস বলেন, ‘খুব সকালে উঠে মার্চ পর্যায়ে গিয়ে কাজ করতে হয়। শীতে এটা তো কষ্টের হবেই।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি আরও জানান, ‘উত্তরের দিক থেকে ঝিরঝির করে হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। চলমান শৈত্যপ্রবাহ আগামী ৩-৪ দিন স্থায়ী হতে পারে।’
এদিকে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালায় ২ হাজার শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে এ বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেহালা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিদুজ্জামান মিল্টনের সভাপতিত্বে বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থেকে শীতার্তদের হাতে কম্বল তুলে দেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রোকন, আব্দুল্লাহ আল মামুন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম এবং জেলা মৎস্যজীবী দলের সাবেক আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল। বিতরণ কার্যক্রম এবং সভা সঞ্চালনা করেন জেহালা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন খান আলা। অনুষ্ঠানে ২ হাজার শীতার্ত মানুষের হাতে কম্বল তুলে দেয়া হয়।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের গাংনীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে আনুষ্ঠানিকভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে কম্বল তুলে দেয়া হয়। গাংনী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম সোনার উদ্যোগে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল এ থেকে এ কম্বল সংগ্রহ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন মান উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ শামসুল আলম সোনার উদ্যোগে আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শামসুল আলম সোনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন গাংনী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুনসুর রহমান। অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে মতিউর রহমান, গোলাম মোস্তফা, তাহাজ উদ্দীন, আব্দুর রশিদ, আব্দুল বাকিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন। গতকালের অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০০ জনকে একটি করে কম্বল প্রদান করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চাহিদা সাপেক্ষে পর্যাপ্ত কম্বল দেয়া হবে বলে জানান সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.