স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা ও শহরতলী আলুকদিয়া ইউনিয়নে কঠোর লকডাউনের আজ চতুর্থদিন। তৃতীয় দিনে জেলা শহরে পুলিশ ও প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। শহরের প্রায় প্রতিটি চা দোকান বন্ধ থাকতে দেখা গেলেও বিপনী বিতানগুলোর চিত্র ছিলো অনেকটা ভিন্নি। দোকান বন্ধ। অথচ দোকানের আশে পাশে দোকানির অবস্থান। ক্রেতা পেলেই দোকান খুলে ক্রেতাকে দোকানের মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে চলেছে কেনা বেচা। দিনে ও রাতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা ও জীবননগর উপজেলাতে কঠোর লকডাউন চলছে। দামুড়–হুদা উপজেলায় ১৪ দিনের লকডাউনের নবম দিনে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার তুলনামুলক কম। যদিও অনেকেই সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছেন অথচ নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করতে এগিয়ে আসছেন না। উপজেলায় পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে জোরদার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেইে জোদার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান গতকাল বুধবার বিকাল ৫ টা, হতে রাত ৮টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদরের বড়বজার, পৌরসভা মোড় ও শহরের রেল কলোনি এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। স্বাস্থ্যবিধি না মানার অপরাধে দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় জনতা ফার্মেসীসহ ১১ জনকে সর্বমোট ৪ হাজার ২শ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। স্বাস্থ্য বিধি না মেনে চায়ের দোকান খোলা রাখার অপরাধে চুয়াডাঙ্গা রেল কলোনি এলাকার ফারুক হোসেনের ছেলে মোঃ রাজু আহমেদ(১৯) কে সংক্রামক রোগ(প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নিমূল) আইন,২০১৮ এর ২৪ এর ২ ধারা মোতাবেক দুই দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ১৩ টি ইজিবাইক জব্দ করেন। মোবাই কোর্ট পরিচালনায় সহযোগিতায় ছিলেন মোঃ সোবহান আলী, পেশকার, ও সদর থানার পুলিশ। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান বলেন, মোবাইল কোর্ট জনস্বার্থে এ অভিযান চলতে থাকবে বলে তিনি জানান। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের কয়েকটি মহল্লায় প্রাইভেট টিউশনি সকাল ৯টা পর্যন্ত চালানো হচ্ছে। ওইসব শিক্ষকদের একজন প্রকাশ্যেই বলেছেন, প্রশাসন রাস্তায় নামে ৯টার পরে, আমাদের কাজ সারা হয়ে যাচ্ছে তার আগে। এছাড় জেলা শহরের কলেজ সড়কের ঈদগা মোড়ের অদূরে একটি বাড়িতে করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগী থাকলেও তার বাড়িতে লাল পতাকা দূরের কথা স্টিকারও লাগাতে দেয়া হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। ওই বাড়ির একজন নারী করোনা আক্রান্ত। তিনি বাড়িতেই রয়েছেন। তার স্বামী ওই ভবনের নিচের তলায় বানিজ্যিক অফিস পরিচালানা করেন। এছাড়া গুলশানাপাড়ার একজন পুরুষ করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হলেও ওই বাড়িতে স্টিকার লাগাতে দেয়নি বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সেনেটারি ইন্সপেক্টর। তিনি বলেছেন, ওই বাড়িতে স্টিকার লাগাতে গেলে অনেকটা লাঞ্চিত আচরণ করেন। এছাড়া অনেক বাড়িতে স্টিকার লাগানো হলেও তা পরে কে বা কারা তা তুলে দিচ্ছে। এতে মহল্লাবাসী ওই বাড়ি সম্পর্কে সতর্ক হতে পারছেন না যেমন, তেমনই মহল্লা ভিত্তিক গড়া কমিটিও ওই বাড়ির দিকে বাড়তি নজরদারিও করতে পারছেন না। কে যাচ্ছে, কে ঢুকছে তা দেখা না হলে করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার পরই জেলা সদরে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের হার বেশি। জীবননগরেও দ্রুত ছড়াছে এই ভাইরাস। জীবননগর উপজেলা যেমন কঠোর লকডাউনের আওতায় নেয়া হয়েছে, তেমনই চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা ও আলুকদিয়া ইউনিয়নকে লকডাউন ঘোষণা করে বিধি নিষেধ জারি করা হযেছে। দামুড়হুদা উপজেলায় ১৪ দিনের লকডাউনে অনেকটা সুফল মিলতে শুরু করেছে। জীবননগর ও চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় লকডাউনের বিধি নিষেধ যথাযথভাবে মেনে না চললে সংক্রমন করা সম্ভব নয়। ফলে চুয়াডাঙ্গা জেলা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার পুনঃ পুনঃ অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, বেশিদিন তো নয়, অল্প কয়েকটি দিন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললেই যখন করোনা থেকে নিজে এবং অন্যকে রক্ষা করা যাবে তখন কেনো আমরা তা না মেনে নিজেদের সর্বনাশ নিজেরা ডেকে আনছি বুঝি না। আমাদের সকলকে এ বিষয়ে অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। যারা নূন্যতম দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন না তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা ছাড়া আমাদের বিকল্প থাকছে না।
পূর্ববর্তী পোস্ট
চুয়াডাঙ্গায় করোনা কাড়লো আরও দুজনকে : ৪১ জনের নুমান পরীক্ষা করে ৪১ জনেরই করোনা শনাক্ত
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ