আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গায় করোনার বিস্তার ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সঙ্গে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর সারি। অদৃশ্য এই ভাইরাসের উপসর্গ এখন প্রায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে। প্রায় এক মাস ধরে চুয়াডাঙ্গা শহর সহ উপজেলা ও গ্রাম অঞ্চলে হঠাৎ বাড়তে শুরু হয়েছে জ্বর-সর্দি, কাশি-হাঁচি ও ব্যথায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাই এর প্রভাব পড়েছে ওষুধপাড়ায়। ফলে চাহিদা বেড়েছে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের। আর এই সময়ে হঠাৎ বাজার থেকে উধাও হয়েছে নাপা। ফার্মেসিগুলোতে মিলছে না বেক্সিমকোর প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড ও সিরাপ জাতীয় ওষুধ। দু-একটি ফার্মেসিতে মিললেও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে ওষুধ ক্রেতাদের অভিযোগ।
ফার্মেসিগুলোর দাবি, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে প্যারাসিটামল ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন ওষুধের বিক্রি বেড়েছে। ওষুধ না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ওষুধটির হঠাৎ এমন অস্বাভাবিক চাহিদার কারণ হলো, বর্তমানে প্রায় ঘরে ঘরে ঠান্ডা-জ্বর দেখা দিয়েছে, এছাড়াও ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে মানুষ এই ওষুধটি কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। তবে প্যারাসিটামল গ্রুপের অন্যান্য কোম্পানির ওষুধ আছে, তারা নাপা ছাড়া নিচ্ছে না। গত এক মাসে নাপা ক্যাটাগরির ওষুধের ১০ গুণ চাহিদা বেড়েছে । বাজারে এসব ওষুধের সরবরাহ দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে দেশের ব্র্যান্ডেড এই কোম্পানিটি। আর ক্রেতাদের অস্বাভাবিক চাহিদার কারণে ফার্মেসিতে গত এক মাস ধরে এসব ওষুধের চরম সংকট চলছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার প্রায় ৯৫ শতাংশ ফার্মেসিগুলোতে বেক্সিমকোর প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সটেন্ড ও সিরাপ জাতীয় ওষুধ নাই। চাহিদার তুলনায় মানুষ অতিরিক্ত কিনছেন বলে দাবি করেন ফার্মেসি মালিকেরা।
তবে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পাড়া-মহল্লা ও গ্রাম-গঞ্জের ফার্মেসিগুলোতে এই জাতীয় ওষুধ চড়া মূল্য বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে মানুষের মধ্যে এক প্রকার আতংক সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এই অসাধু ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের দাবি, আমরা বেশি মূল্যে কোন ওষুধ বিক্রি করছিনা। লকডাউনে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দেখা মিলছে না। তবে এটি কৃত্রিম সংকট নয়, বরং কোম্পানি থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সাময়িক এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তারা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল এলাকার মতিন ফার্মেসির স্বত্বধিকারী মতিন বলেন, নাপা ওষুধের সংকট রয়েছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি থেকেই নাপা, নাপা এক্সট্রা, নাপা এক্সট্রেন্ড ও সিরাপ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। চাহিদা বাড়ার কারণে নাপা সরবরাহ নেই বলে শুনেছি। টানা ২১ দিন গতকাল একবক্স নাপা দিয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে এক ধরনের রোগ হয়েছে, জ্বর-ঠান্ডা লাগলে নাপা লাগবেই তাদের। মানুষ বোঝে না অন্য কোম্পানির ওষুধও একই কাজ করে। কিন্তু অনেকেই নাপা ছাড়া অন্য ওষুধ নেবে না। এখন অধিকাংশ সময়ই ঠান্ডা-জ্বরে ভুগছেন, এই কারণে সাধারণ সময়ে প্যারাসিটামল যা বিক্রি হতো, তার চেয়ে প্রায় ১০ গুণের বেশি চাহিদা বেড়েছে।
ওষুধ কিনতে আসা ইয়াকুব আলী মন্ডল নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, কয়েকদিন যাবত আমার দুই ছেলে মেয়ের জ্বর-ঠান্ডা। অনেক ফার্মেসি ঘুরলাম। কোথাও নাপা জাতীয় ওষুধ পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে পরে বাধ্য হয়ে স্কয়ার কোম্পানির এইচ কিনতে হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা ম্যানেজার ফ্রোমের সাংগঠনিক সম্পাদক ও একটি ওষুধ কোম্পানির চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি মুনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় বেক্সিমকোর প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপা জাতীয় ওষুধগুলো সরবরাহ করতে পারছে না। মানুষের নাপার প্রতি ঝোঁকটা বেশি। তবে কোনো ফার্মেসি এসব ওষুধ স্টক করেও রাখে না। তিনি আরও বলেন, আমরা শুনেছি গ্রাম-গঞ্জে কিছু অসাধু ফার্মেসিরা এই জাতীয় ওষুধ বেশি মূল্যে বিক্রি করছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোন প্রমান আমরা পাচ্ছিনা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফাতেহ আকরাম বলেন, বাজারে প্যারাসিটামল গ্রুপের নাপা ওষুধের ঘাটতি আছে কিনা, তা জানা নেই। কিন্তু অন্য কোম্পানিগুলোরও বিভিন্ন নামে প্যারাসিটামল আছে। সদর হাসপাতালেও জ্বর-ঠান্ডার সব ধরনের ওষুধ রয়েছে। জ্বর হলে চিকিৎসকরা প্যারাসিটামল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে তার মানে শুধু নাপা খেতে হবে তা নয়, ভালো মানের অন্য কোম্পানির প্যারাসিটামল খেলেই হবে বলে জানান তিনি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, নাপা জাতীয় ওষুধ সংকটের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট উদ্বেগজনক। আমি বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখবো। তবে ওষুধের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ পেলে ওই ফার্মেসি মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ