গাড়িগুলো দ্রুত নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করার দাবি স্থানীদের
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে আর রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও অফিসের কাজে ব্যবহৃত অসংখ্য পুরাতন গাড়ি। নির্ধারিত সময়ে নিলামে বিক্রি করতে না পারায় ভাঙারি লোহার দরে বিক্রির উপযোগী হয়েছে। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। নতুন গাড়ি বরাদ্দের পর পুরাতনগুলো নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করলে বাতিলের তালিকায় যেত না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সঠিক ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ না করায় আগাছায় ছেয়ে গেছে গাড়িগুলো। এমনকি অনেক গাড়ি থেকে খুলে নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। স্থানীদের দাবি দ্রুত গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করা হোক।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় প্রশাসন, শিক্ষা ও সংস্কৃত, কৃষি ও খাদ্য, স্বাস্থ্য, প্রকৌশল, যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি, মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়কসহ সরকারি অফিস রয়েছে ৬৯টি। বেশ কিছু অফিসের কর্মকর্তাদের সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া কাজ তদারকি ও সেবার জন্যও সরকারি গাড়ির ব্যবহার রয়েছে। ফলে অনেক অফিসে নতুন গাড়ি বরাদ্দ পাওয়ার পর পুরাতন গাড়িগুলো অযতœ আর অবহেলায় খোলা আকাশের নিচে বছরের পর পর বছর পড়ে থাকে। এতে দিনে দিনে তা ভাঙারি পণ্যে পরিণত হচ্ছে। মরিচা ধরে মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এমনকি গাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো চুরি যাচ্ছে। জীপ, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রো, পাজেরো, রোলার ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যান রয়েছে এ তালিকায়।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, মাটিরস্তূপে চাপা পড়েছে দুটি গাড়ি। একটি সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স অন্যটি সিভিল সার্জনের ব্যবহৃত পুরাতন গাড়ি। গাড়ি দুটি চলাচলের উপযোগী থাকলেও অযতœ আর অবহেলায় পড়ে থেকে থেকে নষ্টের পথে। ভাঙারি লোহা হিসাবে বিক্রি ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না। গাড়ি দুটি যথাসময়ে নিলামে বিক্রির করা গেলে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব আয় হত। সদর হাসপাতালের ৩টি অ্যাম্বুলেন্সও ২ যুগের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত হলেও তা সেভাবেই পড়ে আছে। ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার পাওয়া আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটিও বাতিলের খাতায় নাম লেখানোর পর্যায়ে রয়েছে। জানা গেছে, অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্সটি গত দুই বছরে একদিনের জন্যও ব্যবহার হয়নি।
এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ব্যবহারের উপযোগী দুটি গাড়ি অযতেœ থেকে থেকে বাতিল হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অফিসের দুটি গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এলজিইডি অফিসে তিনটি পাজেরো ও একটি রোলার গাড়ি পড়ে আছে। সড়ক বিভাগে দুটি ট্রাক, একটি জিপ ও একটি ছোট রোলার পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। গণপূর্ত অফিসেও ৪টি গাড়ি দীর্ঘ দিন ধরে পড়ে আছে। এসব গাড়ি এখন আগাছায় হারিয়ে যাওয়ার পথে। ফলে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব।
স্থানীয়রা জানান, নতুন গাড়ি বরাদ্দ আসার পর পুরাতনগুলো বিক্রি করলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা হবে। গাড়িগুলো ফেলে না রেখে নিলামে বিক্রি করলে সাধারণ মানুষ কিনে চালাতে পারবে। দ্রুত গাড়িগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করা হোক।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ৫টি অ্যাম্বুলেন্স, এলজিইডিতে ৪টি গাড়ি ও ২২টি মোটরসাইকেল, গণপূর্তে ৪টি, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ২টি, পরিবার পরিকল্পনা অফিসে দুটিসহ অন্যান্য অফিসে বেশ কিছু পুরাতন ও নষ্ট গাড়ি রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় সব সরকারি অফিসে এমন প্রায় ৭০টি গাড়ি ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে। গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি না হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ সহকারী পরিচালক মো. আতিয়ার রহমান বলেন, ‘সরকারি গাড়ি নিলামে বিক্রির আগে বিআরটিএর অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কর্তৃপক্ষ নিলামে বিক্রির আগে বাজার দর ও অবস্থা দেখার জন্য চিঠি দেয়। আমরা গাড়িগুলো দেখে ছাড়পত্র প্রদান করি। তবে গাড়ির চেসিস নম্বর ও ইঞ্জিন নম্বর ঘসা মাজা থাকলে তা বিক্রির উপযোগী থাকে না। সেই গাড়িগুলো ভাঙাড়ি দরে বিক্রি ছাড়া চালানো সম্ভব না।’
জেলা প্রশসাক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ‘নিলাম হলে সরকারের স্বাভাবিকভাবে রাজস্ব হয়। তবে আইনি জটিলতা থাকলে বিক্রি করা যায় না। নির্ধারিত কমিটির মাধ্যমে প্রক্রিয়া মেনে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। এটি প্রয়োগ করলে পুরাতান গাড়িগুলোর সুরাহা সম্ভব। তাতে প্রক্রিয়া মেনে গাড়িগুলো নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করবে।’
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.