সক্রিয় রোগী ১৮৭৩ জনের মধ্যে সদর হাসপাতালে ১২৭ জন : বাকি ১৭৪৬ জন নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে : রেফার্ড ৩
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩১ জন। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার আরও ১৩৩ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত পজিটিভ হয়েছে। এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৭ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ৩ জন। অপরদিকে ঘরে ঘরে সর্দি কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও অধিকাংশই পরীক্ষা করাতে আগ্রহী হচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ বৃহস্পতিবার আরও ৩৮৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এ নিয়ে জেলার মোট ১৬ হাজার ৩শ ৭জনের নমুনা নেয়া হলো। এদিন স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আগের ৪০৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। এ নিয়ে মোট ১৫ হাজার ৮শ ৭ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার ১৩৩ জনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পজিটিভ হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩শ ৯৯ জন। বৃহস্পতিবার সুস্থ হয়েছেন আরও ৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হরেন ২ হাজার ৩শ ৯২ জন। সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্য মতে গতকাল বৃহস্পতিবার করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৬ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট মারা গেলেন ১৩১ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতে মারা গেছেন ১১৫ জন। চুয়াডাঙ্গার বাইরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৬ জন। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা চুয়াডাঙ্গায় বেড়েই চলেছে। চুয়াডাঙ্গায় এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষা অণুপাতে ৩৬ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যক্তি কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গার লিয়াকত আলীর স্ত্রী পারুলা খাতুন সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। জ্বর কমলেও খুশখুশে কাশি দিন দিন বাড়তে থাকে। গত ৩ জুলাই র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। এক পর্যায়ে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। রেডজোনে ভর্তি করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ৪৬ বছর বয়সী পারুলা খাতুন মারা যান। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের বড় শলুয়া গ্রামের হাবিবর রহমানের স্ত্রী আকলিমা খাতুন সর্দি জ্বরে আক্রান্ত হন। গায়ে ও গলায় ব্যথা হয়। কিছুতেই কোন গন্ধ পাচ্ছিলেন না। তাকে গত ৩ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। নমুনা পরীক্ষা করে তার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। তাকে সদর হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে মারা যান ৩৫ বছর বয়সী আকলিমা খাতুন। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের নূরনগরের হাশেম উদ্দীনের ছেলে আব্দুর রশিদ সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নমুনা পরীক্ষা করে র্যাপিড এনিজেন পরীক্ষায় তার কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়। বেলা আড়াইটার দিকে শ্বাসকষ্টে মারা যান ৫৫ বছর বয়সী আব্দুর রশিদ। আলমডাঙ্গা উপজেলার তালুককররা গ্রামের মৃত আফছার বিশ্বাসের ছেলে আনসার আলীকে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নেয়া হয় নমুনা। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মারা যান ৬৫ বছরের আনসার আলী মারা যান। দামুড়হুদা দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুরের তারা চাঁদের ছেলে ছুন্নত আলী সর্দি কাশি জরে ভুগছিলেন। তাকে গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নেয়া হয় নমুনা। রাত ২টার দিকে মারা যান ৮৫ বছর বয়সী ছুন্নত আলী। চুয়াডাঙ্গা শৈলমারির মিজানুর রহমানের স্ত্রী রাবেয়া খাতুনকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। উপসর্গ দেখে চিকিৎসক তাকে হলুদ জোনে ভর্তি করেন। আধাঘণ্টার মাথায় হলুদ জোনে মারা যান রাবেয়া খাতুন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫০ বছর। এছাড়াও উপসর্গ নিয়ে বেশ ক’জন গতকাল নিজ নিজ বাড়িতে মারা গেছে বলে স্থানীয়রা জানালেও তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার উজিরপুরের নাসির উদ্দীন করোনা পজিটিভ অবস্থায় সরকারি সদর হাসপাতালে হলুদ জোনে মারা গেছেন। ৫৩ বছর বয়ষী নাসির উদ্দীনের তথ্য গতরাত সাড়ে ১২টার দিকে জানানো হলেও বিস্তারিত জানানা হয়নি। জীবননগর উপজেলার রাজনগরের ৫৬ বছর বয়সী করোনা পজিটিভ নিয়ে নিজ বাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন বলে আরএমও জানিয়েছেন। বিস্তারিত জানা যায়নি। জীবননগর উপজেলার জীবননগর পৌর এলাকার শাপলাকলীপাড়ার ফজুর রহমান ছিলেন শতবর্শি। তিনি করোনা পজিটিভ হয়ে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার হাশেম আলী করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন বলে সদর হাসপাতালের আরএমও জানিয়েছন। বিস্তারিত বলা হয়নি। আলমডাঙ্গা জেহলার মারফত উল্লাহ করোনা পজিটিভ হয়ে মারা গেছেন। তার করোনা আইডি নম্বর সিএইচএস ০০৩৪৬।
এদিকে বৃহস্পতিবার যে ১৩৩ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাসপাতালপাড়ার ৮ জন, ঈদগাঁ পাাড়ার ৩ জন, রেলপাড়ার ৩ জন, গুলশানপাড়ার ৩ জন, বোয়ালমারির ৩ জন, আলুকদিয়ার ৩ জন, শান্তিপাড়ার ২ জন, হাটকালুগঞ্জের দুজন, সরোজগঞ্জের দুজন, বোয়ালমারির ২ জন, জ্বিনতলা মল্লিকপাড়ার ২ জন, মোমিনপুরের ২ জনছাড়াও বৃহস্পতিবার যেসব এলাকায় একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিনেমা হলপাড়া, কুলচারা, এতিমখানাপাড়া, মোহাম্মদরপুর, ডিঙ্গেদহ, দক্ষিণ হাসপাতালপাড়া, সিঅ্যান্ডবিপাড়া, শঙ্করচন্দ্র, মহিলা কলেজপাড়া, ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়া, পুরাতন বাজারপাড়া, বেগনগর, ইসলামপাড়া, হাজরাহাটী, বিদ্যুত অফিস, ফেরীঘাট রোড, গোপিনাথপুর, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, দৌলাতদিয়াড়, কলেজপাড়া, ভিমরুল্লাহ, বেগমপুর ও সিভিল সার্জন বাংলো। আলমডাঙ্গা উপজেলার মিয়াপাড়ার ৩ জন, আনন্দধামের দুজন, বাবুপাড়ার দুজন, বিনোদপুরের দুজন ছাড়াও যে সব এলাকায় একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ক্ষুদিীয়াখালি, বটিয়াপাড়া, নীমতলা, জোড়গাছা, ভদুয়া. পুলতাডাঙ্গা, ওসমানপুর, আসাননগর, মুন্সিগঞ্জ, পুরাতন বাসস্ট্যান্ডপাড়া, কুমারী, কামারপাড়া, আলমডাঙ্গা উপজেলা শহর, বলেশ্বরপুর, বাড়াদী, কোয়াতলা, বৈদ্যনাথপুর, সোহাগপুর, থানাপাড়া ও এরশাদপুর। দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনাতেই ১০ জন, এছাড়া যে সব এলাকায় বৃহস্পতিবার একজন করে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দামুড়হুদা সদর, ইব্রাহিমপুর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জয়রামপুর, চিৎলা. হরিরামপুর, কৃষ্ণপুর ও কুড়–লগাছি। জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদার দুজন, কাঠালপোতার ২ জন, কাটাপোলের দুজন, হাসাদহের একজন করে বৃহস্পতিবার করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শানাক্ত হয়েছে। এছাড়াও একই দিন একজন করে যে সব এলাকায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শানাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে অনন্তপুর, বেনীপুর, কয়া, সন্তোষপুর, আন্দুলবাড়িয়া, আশতলাপাড়া, রাজনগর, হরিহরনগর, উথলী, গাউসুল নগর ও বেনীপুর। এছাড়াও ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের কেশবপুর, তৈলটুপি, তালশা ও স্বরুপপুরের একজন করে রোগী শনাক্ত হয়েছে। অপরদিকে ঈশ্বরদীর একজন চুয়াডাঙ্গায় নমুনা দেন। তারও করোনা ভাইরাস পজিটিভ হয়েছেন। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভেলীপুর ঠিকানা দিয়ে আব্দুর রহমান নামের ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নমুনা দেন। তারও করোনা পজিটিভ হয়েছে। তিনি যে মোবাইল ফোন নম্বর দিয়েছেন তাও সঠিক নয় বলে কল কল করে জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে করোনা ভাইরাস শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৮শ ৭৩ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ১২৭ জন। বাড়িতে রয়েছেন ১৭৪৬ জন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চলমান লকডাউনের নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে না চললে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। ফলে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সর্বাত্মক সতর্ক হওয়া জরুরি।