চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত আরও ৩ জনসহ উপসর্গ নিয়ে ৭ জনের মৃত্যু
সক্রিয় রোগী ১০৯৫ জনের মধ্যে হাসপাতালে ৭১ জন, ৩ জন রেফার্ড : হলুদ জোনে বেশ ক’জন রোগীর অবস্থা শঙ্কটাপন্ন
সর্দি কাশি শ্বাসকষ্টে স্ত্রী মারা যাওয়ার ৭ দিনের মাথায় স্বামীও মারা গেলেন : হলোনা নমুনা পরীক্ষা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৩ জনসহ উপসর্গ নিয়ে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার ৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪ জনের করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিন চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন ২৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রেরণ করেছে। চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগীর মধ্যে ৭১ জন হাসপাতালে ১ হাজার ২৪ জন নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। এ ছাড়াও আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের হলুদ জনে রয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। এদিকে চুয়াডাঙ্গা হকপাড়ায় করোনা উপসর্গ নিয়ে স্ত্রী মারা যাওয়ার ৭ দিনের মাথায় মারা গেলেন স্বামী আব্দুল গণী। অথচ তার নমুনা পরীক্ষ করা হয়নি। নেয়া হয়নি হাসপাতালে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আকরাম বলেছেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদাপাড়ার আব্দুস সাত্তারের ছেলে শুকুর আলী সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হলে নমুনা দেন। তার নমুনা পরীক্ষা করে কোভিড-১৯ পজিিিটভ হয়। নিজ বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। রেডজোনে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার ৪০ বছর বয়সী শুকুর আলী মারা যান। তার মৃতদেহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফনের নির্দেশনা দেয়া হয়। জীবননগর উপজেলার মনোহরপুরের ৭০ বছর বয়সী নূরুননাহার সম্প্রতি সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হন। তার নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হয়। তিনি বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। শুক্রবার তিনি মারা গেছেন বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছেন। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার বাসিন্দা দামড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জিন্নাত আলী কয়েকদিন আগে সর্দি কাশি জ¦রে আক্রান্ত হন। তার নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হয়। তাকে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে নেয়া হয় ঢাকায়। তিনিও গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান। জিন্নাত আলীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনে নেমে আশে শোকের ছায়া। জিন্নাত আলী দামুড়হুদার জাহাজপোতার সন্তান হলেও পলাশাড়ায় বসবাস করতেন। পলাশপাড়া জামে মসজিদের তিনি সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বপালন করে আসছিলেন। এছাড়া যারা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্রের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমেনা বেগম কয়েকদিন আগে সর্দি কাশিতে ভুগতে থাকেন। তাকে বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ৫৫ বছর বয়সী আমেনা খাতুন মারা যান। নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফনের পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। কুষ্টিয়া ইবি থানার মনোহরদিয়া গ্রামের হেলাল উদ্দীনের স্ত্রী শ্যামলি খাতুন সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। শ^াসকষ্ট বাড়লে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ভর্তি করা হয় হলুদ জোনে। নমুনা নেয়া হয়। শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ৫৬ বছর বয়সী শ্যামলী খাতুন মারা যান। মৃতদেহ স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফনের পরামর্শ দেয়া হয়। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গার বিশারত আলীর মেয়ে আয়েশা খাতুন সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট বাড়লে শুক্রবার ভোরে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে ২৮ বছর বয়সী আয়েশা খাতুন মারা যান। এছাড়াও জেলা শহরের হকপাড়া, জীবননগর উপজেলার সেনেরহুদা মাদরাসাপাড়ার একজনসহ আরও কয়েকজন করোনা মহামারিকালে মারা গেছেন। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। হকপাড়ার ৫৫ বছর বয়সী আব্দুল গণী শুক্রবার বেলা ২টার দিকে মারা যান। ক’দিন আগে তার স্ত্রীও মারা যান। প্রতিবেশীদের মধ্যে করোনা নিয়ে আলোচনা হলেও আব্দুল গণীর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া দক্ষিণ গোরস্তানপাড়ার আবুল হাসেম শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে মারা যান। ৫৮ বছর বয়সী হাসেম শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বলে এলাকাসূত্রে জানা গেছে। বাড়ির অদূরে হাসপাতাল হলেও অজ্ঞাত কারনে নেয়া হয়নি। নিজ বাড়িতেই মারা গেছেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ শুক্রবার জরুরী ভিত্তিতে ২৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে প্রেরণ করেছে। এ নিয়ে জেলা মোট ১৪ হাজার ১শ ৫৮ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। এ দিন নতুন ১৪ জন শনাক্ত হয়েছে। ৪০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এ সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হলেন ৩ হাজার ৫শ ১৩ জন। শুক্রবার ৫ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে ২ হাজার ৩শ ৬ জন সুস্থ হলেন। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তকৃতদের মধ্যে সক্রিয় রোগী রয়েছেন ১ হাজার ৯৫ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ৭১ জন। বাড়িতে ১ হাজার ২৪ জন। এছাড়াও হলুদ জোনে রয়েছেন অর্ধশতাধীক রোগী। শুক্রবার ৩ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৯৬ জন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গার বাইরে মারা গেছেন ১৪ জন। উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছুঁই ছুঁই। অবাক হলেও সত্য যে, অনেকেই সদি কাশি জ¦রে ভুগছেন। তাদের কেউ কেউ হাসপাতালে নমুনা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করালেও বেশিরভাগকেই এ পথে হাটতে দেখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ সুস্থ হলেও যাদের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে তখন নেয়া হচ্ছে হাসপাতালে। ভর্তি করা হচ্ছে হলুদ জোনে। এদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা সংকটাপন্ন। নতুন যে ১৪জন শুক্রবার শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৬ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৫ জন, জীবননগরের ৩ জন। সদর উপজেলার ৬ জনের মধ্যে দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার ১ জন, হাজরাহাটীর একজন, জাফরপুরের একজন, নেহালপুরের ১ জন, পুরাতন হাসপাতালপাড়ার ১ জন, চুয়াডাঙ্গা সদর বলে ঠিকানা দেয়া একজন। আলমডাঙ্গা উপজেলার ৫ জনের মধ্যে নওদাপাড়ার ১ জন, হারদীর একজন, স্টেশনপাড়ার ১ জন, পল্লি বিদ্যুত অফিসের একজন, গাংনী উপজেলার দুর্লভপুরের একজন। তিনি আলমডাঙ্গার মাধ্যমে নমুনা দেন। জীবননগর উপজেলা সদরের একজন, কাশিপুরের একজন ও দৌলতগঞ্জের একজন।