চুয়াডাঙ্গায় করোনায় একদিনে ৫ জনের মৃত্যু : আরও ৬৮ জনের শনাক্ত
হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে বাড়ছে রোগীর চাপ : অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে টানাটানি
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় ভয়াবহভাবে করোনা বেড়েই চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে পাচজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আরও ৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা শনাক্তের হার বিবেচনায় ৫৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে দাঁড়ালো। ইতোমধ্যে সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিতসক নার্সরা। রোগীদের চাপের সাথে সাথে অক্সিজেনের ও চাহিদা বাড়ছে। করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়েও কাড়াকাড়ি করতে দেখা যায় দুই রোগীর স্বজনদের। গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে ১৩৩টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল আসে। এর মধ্যে শনাক্ত হয় ৬৮ জনের। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৫৯১ জনে দাঁড়ালো। নতুন আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ২৯ জনই দামুড়হুদা উপজেলার বাসিন্দা। অন্যদের মধ্যে সদর উপজেলার ২৩ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৮ জন ও জীবননগর উপজেলার ৮ জন। গতকাল শনিবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন করে ১২৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১১ হাজার ৭৭৬ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে ১১ হাজার ৩১৫ জনের।
এদিকে ২৪ ঘন্টায় জেলায় করোনায় আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড। এদের মধ্যে দুইজন সদর উপজেলার, দুইজন দামুড়হুদা উপজেলার ও একজন জীবননগর উপজেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮২ জনে দাঁড়াল। এ পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের ও জেলার বাইরে ৯ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে কেউ সুস্থ হয়নি। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হলেন ১ হাজার ৯৩৮ জন। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৫৭১ জন। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ১৯২ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৫৬ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ২২৯ জন ও জীবননগর উপজেলার ৯৪ জন রয়েছেন। সদর উপজেলার ১৯২ জনের মধ্যে ১৮ জন হাসপাতালে, বাড়িতে ১৭৩ জন থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। একজনকে রেফার্ড করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৫৬ জনের মধ্যে ৫০ জন বাড়িতে, ৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১ জনকে রেফার্ড করা হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার ২২৯ জনের মধ্যে বাড়িতে ২০৮ জন ও হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। রেফার্ড করা হয়েছে ২ জনকে। জীবননগর উপজেলার ৯৪ জনের মধ্যে ৬ জন হাসপাতালে ও ৮৬ জন বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে কিছুদিন যাবত করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কোভিড চিকিৎসার উপকরণের চাহিদা বেড়েছে। চিকিৎসার সুবিধার্থে অনেকেই নিজেদের বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিমিটার, নেবুলাইজার কিনে রাখছেন। তবে ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে কাড়াকাড়ি দেখা যায় কোভিড ওয়ার্ডের স্বজনদের। হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ বলছে যে হারে জেলায় করোনার সংক্রমন বাড়ছে তাতে অক্সিজেনের চাপও বাড়ছে। সংক্রমনের হার বৃদ্ধি পেলে চাহিদা মত অক্সিজেন ও পাবো আশা করি।
দামড়হুদা ব্যুরো জানিয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলা জুড়ে লকডাউনের ৫ম দিন ছিলো গতকাল শনিবার। একদিনের ব্যবধানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন গুনেরও বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী দামুড়হুদা উপজেলায় ৪৫জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশী দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নে ১২জন, দর্শনা পৌর এলাকায় ১১ জন, জুড়ানপুর ইউনিয়নে ৭জন, কুড়ুলগাছি ইউনিয়নে ৭জন, হাউলী ইউনিয়নে ৫জন, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নে ২জন এবং পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নে ১ জন।
উল্লেখ্য, দামুড়হুদা উপজেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা হঠাৎ করে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে। উপজেলাব্যাপী এতো কঠোর লকডাউনের পরেও এভাবে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেলে চলমান লকডাউন আরো বেশীদিন চলতে পারে বলে মনে করেন সুধীমহল।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগর উপজেলায় দিন-দিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গতকালের ৮জনসহ ইতোমধ্যে এ উপজেলায় ৯৪ ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার করোনায় আক্রান্ত উপজেলার বাঁকা গ্রামের শুকুর আলী (৭০) মারা গেছে। এ নিয়ে গত দুই দিনের মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ জনে।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গতকাল পর্যন্ত জীবননগর উপজেলায় ৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার আতঙ্কজনক। করোনার সংক্রমন বৃদ্ধি পেলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতার মাত্রা খুব বেশী বাড়েনি। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। মাস্ক পারছেন না অধিকাংশ মানুষ। উপজেলা প্রশাসন স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে বাজার বন্ধ ঘোষণা করেছে। কেবলমাত্র ওষুধের ফার্মেসি ছাড়া সকল দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্তোরা, চায়ের দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে আংশিক লকডাউন শুরু করা হয়েছে।
এদিকে জীবননগর উপজেলার বাঁকা বাজারপাড়ার মৃত এলাহী ম-লের ছেলে শুকুর আলী করোনায় আক্রান্ত হয়ে গতকাল চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা ইউনিটে মারা যান। গত এক সপ্তাহ পূর্বে তিনি শরীরে জ্বর ও শ্বাস কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসারত অবস্থায় গতকাল সকালে তিনি মারা যান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকালই তাকে দাফন করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুইদিনে জীবননগর উপজেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর পূর্বে উপজেলার শিংনগর গ্রামের অন্তু হালদার ও সুবলপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ৩ জনসহ এ পর্যন্ত জীবননগর উপজেলায় করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে।