চুয়াডাঙ্গায় একের পর এক মৃত্যু : দুজন করোনাসহ ৯জন মারা গেলেও সিভিল সার্জনের হিসেবে মৃত্যু সংখ্যা শূন্য
জেলায় শনাক্তকৃত কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে বর্তমানে ১৮২৫ এর মধ্যে হাসপাতালে ১২২ জন : চিকিৎসা দিতে হিমিশিম
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় গতকাল শুক্রবার দুজন করোনা আক্রান্ত রোগী মারা গেলেও সিভিল সার্জন বলেছেন, এদিন একজনও কোভিড-১৯ রোগী মারা যাননি। কেন তিনি এ তথ্য গোপন করলেন তাও জানা যায়নি। তার মোবাইলফোন নম্বরে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। এদিকে গতপরশু মধ্যরাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে দুজন করোনা ভাইরাস পজিটিভ। অপরদিকে গতকাল শুক্রবার নতুন ২৮ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। এদিন পূর্বের ২৯ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। পজিটিভ হয়েছে ৭ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ৫ জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ২ জন।
গতকাল শুক্রবার যারা করোনা ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন দর্শনা বড় বলদিয়ার বিশারত আলীর স্ত্রী সাবেরা খাতুন সম্প্রতি সর্দি কাশি জ্বরে আক্রান্ত হন। তাকে গত ৭ জুলাই সন্ধ্যা পৌনে ৯টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করে নমুনা নেয়া হয়। পরীক্ষা করে গতকাল শুক্রবার সকালে জানা যায় তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ। শুক্রবারই সকাল সোয়া ১০টার দিকে ৬০ বছর বয়সী সাবেরা খাতুন মারা যান। বিস্তারিত ঠিকানা নেই। মীর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মীর আব্দুল হাই বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সদর হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি হন। একদিন পর গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে ৫২ বছর বয়সী আব্দুল হাই মারা যান। এছাড়াও করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন, কেদারগঞ্জ সিঅ্যান্ডবিপাড়ার আইতুল ম-লের স্ত্রী আনজু খাতুন। তাকে গত ৫ জুলাই সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। তাকে হলুদ জোনে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়। গতকাল শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে মারা যান ৪০ বছর বয়সী আনুজু খাতুন। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হিজলগাড়ির তমিজ উদ্দীনের ছেলে রহিদুল ইসলাম সম্প্রতি সর্দি কাশি জ্বরে ভুগতে থাকেন। তাকে বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হলুদ জোনে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে ৪৫ বছর বয়সী রহিদুল ইসলাম মারা যান। সদর হাসপাতালের আরএমও বলেছেন, রহিদুল ইসলাম করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গে ভুগছিলেন। দামুড়হুদা উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের হাজারী ম-লের স্ত্রী জহিরন বেগমকে গত ৭ জুলাই সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তিনি সর্দি কাশি জ্বর ও গলায় ব্যথায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্টও ক্রমশ বাড়ছিলো। তাকে গত ৭ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা দেখে হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি করান। শুক্রবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে মারা যান ৭০ বছর বয়সী জহিরন বেগম। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ওসমানপুরের শমসের ম-লের ছেলে আকবর বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। তার শ্বাসকষ্ট বাড়লে নেয়া হয় সদর হাসপাতালে। ভর্তি করা হয় হলুদ জোনে। গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে মারা যান ৬৫ বছর বয়সী আকবর হোসেন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেহ আমারম সূত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার রাজনগর গ্রামের ৫৬ বছর বয়সী কেয়া করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের ভালাইপুর গ্রামের শুকুর আলী বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। তিনি তার বাড়িতেই মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে কখন তিনি মারা গেছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সিনেমাহলপাড়ার বাসিন্দা আমেনা খাতুন বেশ কিছূদিন ধরে সর্দি কাশি জ্বরে ভুগছিলেন। তার শ্বাসকষ্ট বাড়ে। গতরাত ১২টার দিকে শ্বাস কষ্ট নিয়ে নিজ বাড়িতেই ৮০ বছরের আমেনা খাতুন মারা যান।
এদিকে গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ ২৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এদিন পূর্বের ২৯ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭ জন পজিটিভ হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৪৪০৬ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। গতকাল সুস্থ হয়েছেন ৫৮ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হলেন ২ হাজার ৪শ ৫০ জন। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় শনাক্তকৃত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৮ম ২৫জন। এর মধ্যে হাসপাতালে ১২২ জন। নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ৭শ ৩ জন। সিভিল সার্জনের দেয়া তথ্য মতে চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩১ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতে মারা গেছেন ১১৫ জন। ১৬ জন মারা গেছেন চুয়াডাঙ্গার বাইরে। এ তথ্যের সাথে বাস্তবের মিল না পেয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভেল সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আজ কালের মধ্যে তার বহিপ্রকাশ ঘটতে পারে।